somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২০। সুবিধাবাদীদের সেকাল-একাল।

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৭৫৭ সালে মীরজাফরঃ
"মীরজাফর" শব্দটা এখন শুধু একটা নাম নয়, গালিও বটে। আচ্ছা? পলাশীর যুদ্ধে অনেকেই তো খলনায়কের ভূমিকায় ছিল/ইংরেজদের সাথে হাত মিলিয়ে ছিল। তাহলে সবাইকে ছাড়িয়ে "মীরজাফর" নামটাই কেন সবচেয়ে বেশী ঘৃণার পাত্র হয়ে ওঠে? ভেবেছেন কখনো?
আমার মতটা সংক্ষেপে বলিঃ সেদিন অনেকে শত্রুতা করলেও ২৩শে জুনে মীরজাফর বসে না থেকে যদি নবাবের পক্ষে লড়তো, ইংরেজরা বাংলা দখল করতে পারতো না। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে (বাংলা ১১৭৬/ইং 1770 সাল) এক তৃতীয়াংশ মানুষও মরতো না।
মিরজাফরের "মীরজাফর" হবার কারণঃ
যুদ্ধ না করে হাজার হাজার সৈন্য নিয়ে বসে ছিলেন। (মানে দায়িত্বে অবহেলা।)
আচ্ছা? সেদিন তিনি সেনাপতির দায়িত্বটা কেন পালন করলেন না? নবাবের আদেশ কেন মানলেন না?
- নবাবের উপর ব্যক্তিগত ক্ষোভ, নিজেই নবাব হবার লোভ। (মানে দেশের স্বার্থ ও স্বাধীনতার চেয়ে নিজের স্বার্থকে তিনি বড় করে দেখছিলেন।)


১৯৭১ সালে রাজাকারঃ
৫৭'র মীরজাফর যুদ্ধ না করে চুপচাপ বসে ছিল, কিন্তু ৭১ এর মীরজাফররা পাকিদের হয়ে দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। ৩০লক্ষ মানুষকে হত্যার কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা পালন করেছে। এরা আজ "রাজাকার" নামে পরিচিত। এই শব্দটাও একটা গালি।
রাজাকারদের অপরাধঃ
১. পাকিদের অন্যায় কাজকে(হত্যা, ধর্ষন, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন....) সমর্থন। অনেকে তাদের কাজে সরাসরি সহায়তা করেছে।
আচ্ছা? তারা কেন সহায়তা করেছিল?
- ক্ষমতাস্বীনদের চোখে প্রিয় হয়ে, সুবিধা লাভের জন্য। কারণ ক্ষমতা তখন পাকিস্তান সরকারে হাতে।(কানকাটা রমজানরা যেটা করে থাকে।)

কানাবগী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সম্প্রদায়/সুবিধাবাদীদের বৈশিষ্ঠঃ
১. তারা দেশের স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিগত/দলীয় স্বার্থকে বড় করে দেখবে। (দেশের ক্ষতি হবে জেনেও)
২. বড় দায়িত্বে অবহেলা করবে। যার কারণে দেশের বা দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ক্ষতি হয়।(পলাশীর যুদ্ধে আগে মিরজাফর কোরান ছুঁয়ে শপথ করেছিল। কিন্তু সেটা ভঙ্গ করেছে।)
৩. দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করে, অন্যায়ভাবে নিজে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা। (ন্যায়ভাবে হলে আলাদা কথা।)
৪. সুবিধা লাভের জন্য ক্ষমতাসীনদের অন্যায় কাজকে সমর্থন করা/নিজেও সেই অন্যায়ে জড়িয়ে পড়া।

পুরান মীরজাফরদের গালি দেয়া/তাদের নিয়ে কাঁসুন্দি ঘাঁটা সহজ, কিন্তু নতুনদের নিয়ে বলাটা কঠিন। আমরা সবাই সুবিধাবাদী, মিরজাফরের সৈন্যদের মত চুপচাপ বসে থাকি। সুযোগ পেলে সবাই অন্যায় করি, কেউ কম, কেউ বেশী। তবে, আবেগে পড়ে দু-একটা সামান্য বিষয়ে যাকে তাকে মীর যুক্ত জাফর বলা বা রাজাকার সার্টিফিকেট দেয়াটা অন্যায়। তার চেয়ে বরং আমরা নিজেরাই নিজেকে বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড় করাই। আমি কী করছি? কেন করছি?
"আমি শপথ করিতেছি যে, মানুষের সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখিব। দেশের প্রতি অনুগত থাকিব। দেশের একতা ও সংহতি বজায় রাখিবার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকিব।... ... অন্যায় কোন কাজ করিব না এবং অন্যায়কে প্রশ্রয় দিব না।..... "
আমি থাকি এক স্কুলের পাশে। প্রতিদিন সকালে শপথের কথাগুলো শুনি, আর “অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে/ তব ঘৃণা তারে যেন তৃণ সম দহে", বাক্যটা মনে করি। ক্লাস ওয়ান থেকে টেন পর্যন্ত দশ বছর ধরে আমরা শপথ পাঠ করি, তারপরও কেন ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেতে মুখিয়ে থাকি? ঘুষ লেনদেন করি? দুর্নীতি করি? অন্যায়, অনিয়ম, অপকর্ম, শোষণ -নিপীড়ন দেখে মুখ ফিরিয়ে চলি? আমাদের সমস্যাটা কোথায়?
জাতীয় সংগীত তো গাওয়া হয়, দেশপ্রেম তৈরী হবার জন্য। এটাই কী দেশ প্রেমের নমুনা?

প্রশ্নগুলো আমি নিজেকেই করলাম। ব্লগে এসে বড় কথা বললেও সব সময়, সব অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারি না। বাস্তবে বাকের ভাই হওয়াটা খুব কঠিন। তারপরও চেষ্টা করি দু-চার লাইন লিখতে। কেন জানি ভয় হয়, ঘুনে ধরা সমাজ ব্যবস্থায় নিজে না আবার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হয়ে পড়ি।।



⚠⚠⚠মন্তব্য সেটিংসঃ পোস্টে মন্তব্য সুবিধা নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৯ দুপুর ২:৪১
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×