somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ-"নিরব কথা"

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


-
ফোনটা একের পর এক বেজেই চলেছে। ফোনের শব্দে প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে চোখের কোয়াশা কাটাতে কাটাতে শেষমেষ ফোনটা হাতে নিলাম। ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরে খুব ক্লান্ত লাগছিল। খাওয়া শেষ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই কখন যেন ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
-হ্যা আবির বল।
-সরি শুভ! তুই বোধয় ঘুমোচ্ছিলি।
-নাহ! আমার বিবেকের সাথে লুডু খেলছিলাম। কি হয়েছে সেটা বল?
-আজ রাতে আসতে পারবি বাসায়??
-কেন কি হয়েছে? কোন সমস্যা??
-আরে না সমস্যা না। আজকে কত তারিখ ভূলে গেছিস?
-না ভূলি নাই। আজকে ১৩ তারিখ। কেন?
-তাহলে কালকে কত তারিখ?
-১৩ তারিখের পরে তো আর ১ তারিখ হয় না। ১৪ তারিখই হবে।
-হম কাল একটা স্পেশাল দিন তুই সেটা ভুলে গেছিস।
-না ভুলি নাই কাল ভ্যালেনটাইনস ডে। তো?
-সন্ধার পর রফিক মামার চায়ের দোকানে চলে আসবি। বাকিটা তারপর বলবো। এখন আরাম করে ঘুম দে সমস্যা নাই। রাখি বাই।
কথাটা বলেই আবির ফোন রেখে দেয়। ওর কথার আগা মাথা কিচ্ছুই বুঝতে পারলাম না।
আবির আমার সব থেকে ভাল বন্ধু। বিপদে সব সময় ওকে পাশে পেয়েছি আমি। তাই আগা মাথা বুঝি আর না বুঝি যেতেই হবে।
সন্ধার পর বাসা থেকে বেরিয়ে ফোন দিলাম ওকে।
-কি রে কোথায় তুই?
-আমি রফিক মামার দোকানের আশে পাশেই আছি। তুই কোথায়?
-এইত বাসা থেকে বের হয়েছি। তুই ওখানেই থাক আমি আসছি।
প্রায় আধ ঘন্টা পর আমি গেলাম। দেখলাম দোকানের পাশেই খালি জায়গাটা তে আবির বসে আছে।
-কি রে এতক্ষন লাগে আসতে?
-হ্যা... এবার বল কাহিনী টা কি? এত্ত জরুরী তলব! কোথাও ধরা টরা খাইছিস নাকি?
-আমি ধরা খাবো!! আমি??? তুই আমাকে চিনিস না?
-হ্যা চিনিতো। তাইলে কি ভাবছিস এই ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে নিপার প্রপোস একসেপ্ট করবি?
-দেখ ফাজলামু অন্য দিন করিস আজকে আপাতত না।
-আচ্ছা যাহ ফাজলামু করব না। তাহলে সিরিয়াস কথা বলি। নিপা কে তুই একসেপ্ট কর। মেয়েটা কিন্তু তোকে সত্যি অনেক ভালবাসে। আর দেখতেও মাশআল্লাহ। নিপা তোর সব কিছু জেনেও তোকে পছন্দ করে। আমার বিশ্বাস ও তোকে কখনো কষ্ট দেবে না।
-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশুনা করে উকালতির অভিজ্ঞতা তো ভালোই অর্জন করেছিস।
-আমাকে যা ইচ্ছে ভাবতে পারিস আমি কিছু মনে করিনা। আমি তোর ভালোর জন্যেই বলছি।
এবার আবির আমার মুখের দিকে তাকিয়ে...
-দেখ শুভ আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি। আমি আর কোন রিলেশনে জরাতে চাই না। যাকে মনের মধ্যে জায়গা দিয়েছিলাম তাকেই তো এখনো বের করতে পারিনি। অন্য কাউকে জায়গা দেব কি করে। আর কেউ না জানুক তুই ভাল করেই জানিস। আমাকে নিপার বেপারে কিছু বলিস না প্লিজ।
কথাটা বলার পর ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর মুখটা খানিক ছোট হয়ে গেছে। বুঝতে পারলাম বিন্দুর কথা বলেতেই মুখটা এমন হয়ে গেছে। এটা নতুন কিছু না। বিন্দু কে নিয়ে কোন কথা হলেই পরক্ষনেই ওর আকাশটা মুহুর্তে কালো হয়ে যায়।
বিন্দুর সাথে ওর দুই বছরের রিলেশন ছিল। কিন্তু হঠাৎ দমকা হাওয়ায় সব এলোমেলো হয়ে যায়। ঠিক হঠাৎ করে বললে ভুল হবে। বিষয় টা আবিরকে জানানো হয়নি। আবির ওকে প্রচন্ড রকম ভালোবাসতো। মেয়েটা যে আবিরকে ভালবাসত না ঠিক তা নয়। ওদের সময়টা ভালোই চলছিল। কিন্তু বিন্দুর বাসায় আবিরের বেপারে জানাজানি হওয়ায় আবিরের সাথে বেশ কিছু দিন যোগাযোগ বন্ধ ছিল। তারপর হঠাৎ একদিন বিন্দু আবির কে ফোন দিয়ে ওর সাথে আর কোন রিলেশন রাখবে না বলে জানিয়ে দেয়। আবির যেন আর কখনো বিন্দুর সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ করার চেষ্টা না করে। সেদিন আবির বিন্দুর কথার কোন প্রতিবাদ করেনি। তখনো বিন্দুর ভাল চাওয়াটাই ওর লক্ষ ছিল। ওর বিশ্বাস ছিল বিন্দু ওর কাছে ফিরে আসবে কিন্তু সেটা আর হয়নি। বেশ কিছুদিন যাওয়ার পরই আবির জানতে পারে বিন্দুর বিয়ে হয়ে গেছে। পরে অবশ্য আবির জানতে পেরেছিল যে বিয়েতে বিন্দুকে বাধ্য করা হয়েছিল। আর তারপর থেকেই আবিরের অন্ধকার জীবন শুরু হয়। তারপর থেকেই আবির কে কলেজ ক্যাম্পাসে দেখা যেত না। নিয়মিত নেশা, বাজে আড্ডা, সবই করতে শুরু করে। পড়াশুনা প্রায় গোল্লায় যাওয়ার অবস্থা। এসব অবস্থা দেখে আমি ওকে বেশি বেশি সময় দিতে শুরু করি যাতে ওকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারি। আর সেই থেকে এখনো ওর ডাকে সারা দিতে ভাবার সময় নেই না আমি। এটা ভেবে ভাল লাগে যে ওকে আমি অন্ধকার থেকে দুরে সরিয়ে আনতে পেরেছি। তবে ওর কষ্টটা মুচতে পারব না জানি। হয়ত সেটা সম্ভব না। ওর সাথে থেকে আমি বুঝেছি যে, না পাওয়ার যন্ত্রনাটা কত ভয়ংকর হতে পারে। অথচ আবির কে দেখলে বুঝাই যাবে না ওর মাঝে এমন চাপা কষ্ট কাজ করে। প্রায়ই আমি ওর সাথে রাতে এক সাথে ঘুমিয়েছি। মাঝ রাতে ঘুম থেকে জেগে দেখেছি ওর নিরব কান্না। যে কান্নার শান্তনা আমি দিতে পারিনা। এ জন্যে বিন্দু'র নাম শুনলেই মেজাজ গরম হয়ে যায় আমার। যার জন্যে এত কিছু তারপরও...। আসলে সত্যিকারের ভালবাসা গুলো বোধয় এমনই হয়। তাইত নিপা ওকে প্রপোজ করার পর সরাসরি না করে দিয়েছিল। নিপা আমার কাজিন। আবিরকে অনেক আগে থেকেই খুব পছন্দ করত নিপা। ওর বেপারে সবই জানে তারপরও নিপা নিজে থেকেই আবির কে প্রপোজ করেছিল। কিন্তু আবির ওকে ফিরিয়ে দিয়েছে। আমার বিশ্বাস নিপা আবির কে ভাল রাখবে। তাই সুযোগ পেলেই নিপার কথাটা বলে ফেলি। যদিও বারবারই ওর করল্লা ভাজির মত কথা শুনতে হয়। তাই আজও তার অন্যটি হয়নি। আজ নিপার উকিল বলেই সম্মোধন করে বসলো। ওর ফ্যাকাশে মুখটার দিকে তাকিয়ে বললাম আমাকে কি জন্যে ডেকেছিস বলবি না?
আবির মাথা নিচু করেই কথা বললো।
-হ্যা বলব।
-তাহলে বল শুনি।
-তার আগে বল কথাটা শুনে রাগ করে চলে যাবি না তো?
-আচ্ছা কি এমন কথা বলবি? সেই কখন থেকে বলব বলব করে যাচ্ছিস। আচ্ছা ঠিক আছে এমন কিছু করব না বল।
-চল একটা বড় কেক কিনে বাসায় ফিরবো।
-বড় কেক দিয়ে কি করবি? ভ্যালেনটাইন ডে বরন করবি নাকি? সে তো ভাল কথা রাগ করব কেন।
-না.. আমার লাইফে কোন ভ্যালেনটাইন্স ডে নেই। বিন্দু'র কথা বললেই তো তুই ক্ষেপে যাস তাই বলতে ভয় করছে। আজ রাত ১২টার পর ১৪তারিখ পরবে। আর ১৪ই ফেব্রুয়ারি বিন্দু'র জন্মদিন। ও চলে যাওয়ার পর এটাই প্রথম জন্মদিন। কি রে থাকবি না আমার সাথে আজ?
কথাটা শোনার পর খানিকটা ধাক্কা খেলাম মনে হচ্ছে। তখনই মনে পরে যায় গতবছরের এই দিনটার কথা। ঠিক এই তারিখেই আবির আমাদের সব বন্ধুদের নিয়ে বিন্দু'র জন্মদিন পালন করেছিল। আজও সেইদিন অথচ বিন্দু'র সাথে আবিরের আজ কোন সম্পর্ক নেই। সম্পর্কটা গাছের পাতার মত মরে গেছে ঠিকই কিন্তু ভালবাসাটা আজও ভোরের শিশির ভেজা ঘাসের মতই জ্বলজ্বল করছে।
আজ আবিরকে হিংসে করতে ইচ্ছে করছে খুব। মানুষ এতটা নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসতে পারে কি করে! যে ভালোবাসায় কোন স্বার্থ নেই। নেই কোন আশা। নেই কাছে পাওয়ার বাসনা। নেই এক সাথে একই ছাদের নীচে কাটানোর স্বপ্ন। যে মেয়েটা কিনা অন্য কারো ঘরনী। অথচ আবিরের মাঝে এতটুকু ঘৃনা নেই বিন্দুর জন্যে। আবির ঠিক ততটাই ভালবাসে যতটা আগে ভালবাসতো। যদিও বিন্দু জানে আবির তাকে প্রচন্ড ঘৃনা করে। বিন্দু বারবার আবিরের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও আবির সব সময়ই খারাপ ব্যাবহার করেছে বিন্দুর সাথে। কারন আবির চায় না বিন্দু আর ওর স্বামীর মাঝে কোন অশান্তির সৃষ্টি হোক। বিন্দুর মনে আবিরের প্রতি ভালবাসা জমে থাকুক এটা আবির চায় না। বিন্দুর সাথে আবির খারাপ ব্যাবহার করে ওকে যতটুকু কষ্ট দিয়েছে তার থেকে বেশি কষ্ট পেয়েছে ও নিজে। তারপরও বারবারই খারাপ ব্যাবহার করতো যাতে আবিরকে ভুলে গিয়ে বিন্দু তার হাসব্যান্ড কে ভালবাসতে শুরু করে। কারন আবির জানে ভালবাসার মানুষ কে কাছে পাওয়ার নাম ভালবাসা নয়। ভালবাসার মানুষটি কে সুখে রাখার নামই হচ্ছে ভালবাসা। তাতে আবিরের যত কষ্টই হোক না কেন। শুধু আবির নয়, আবির'রা এভাবেই ভালবাসা কে আগলে রাখে সারাজীবন। যে ভালবাসার বিনিময়ে কিছু পাওয়ার আশা করেনা এরা। এদের প্রতিটা নিশি প্রহর কেটে যায় এক বড় দীর্ঘঃশ্বাসে। অথচ চলে যাওয়া মানুষটা জানতেই পারে না তার জন্যে কোন একজন না পাওয়ার কষ্টে রাতের আঁধারে আজও হাউমাউ করে উঠে।
তারপরও পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে থেকেও দৃঢ় মনে চেয়ে যায় ভাল থাকুক ভালবাসা। আর সুখে থাকুক ভালবাসার মানুষটি।
তাই আর রাগ করে চলে আসতে পারলাম না। থেকে গেলাম কোন এক নিঃশ্বার্থ ভালবাসাকে সম্মান জানিয়ে তার ভালবাসার মানুষটির জন্মদিনের কেক কাটতে। যে ভালবাসা চিরকাল বেঁচে থাকুক আবিরদের অন্তরে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৫০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×