আমরা পুরুষজাতি! যখন আমরা বন্ধু সমাজে বসি, তখন নারীদের শরীরের প্রত্যেকটা বাঁক নিয়ে আমরা রসালো কথা বলি। কে কয়টা মেয়ের সাথে কি করেছে, কোন মেয়েকে আগোছালো অবস্থায় দেখেছে তার বিশদ বর্ননা গোগ্রাসে গিলি। কোনো কিছুই আমাদের নজর এড়ায় না। এমনকি অসাবধানতাবশত বেরিয়া পড়া তোমার বক্ষবন্ধনীর ফিতাটিও! ভাগ্যিস তোমরা শুনোনি হে নারী জাতি! শুনলে সক্রেটিসের হাত থেকে হেমলকের পেয়ালা কেড়ে নিয়ে নিজেই পান করতে!
আবার সেই আমরাই যখন সমলিঙ্গের করা কোনো কুকর্ম ফাঁস হয়ে পড়ে, চশমা চোখে দিয়ে, নিজেকে যথেষ্ট বিবেকবান হিসেবে উপস্থাপন করে তার শিশ্ন কেটে ফেলার প্রস্তাব জানাই। সদ্য ফরয গোসল সেরে আসা আমরা ভুলে যাই মোবাইলে এখনো রয়ে গেছে ধর্ষনের পর্ণ ভিডিওটি! আমরা ভুলে যাই ওড়না পেইজে কোনো এক বালিকার চুরি করে ছড়িয়ে দেওয়া ছবিতে কি অশ্লীল মন্তব্যই না করেছি।
আমরা পুরুষজাতি মাঝে মাঝে অতি ঈমানদার বান্দা হয়ে যাই। যখন কোনো মালাউন, নাস্তিক চিল্লাচিল্লি শুরু করে। আমরা রাম-দা হাতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি। বলি তোরা নারীরা শাহবাগে বসে দেহ বিক্রি করেছিস্। আবার আমরা সেই পুরুষজাতিই ন্যান্সি নামের কোনো এক নারীকে গোলাম আজমের শয্যাসঙ্গিনী বানিয়ে দেই! কেবল আমাদের মতাদর্শের বাইরে চলে যাওয়ায়। সবই আমরা করি হে নারী জাতি! বলির পাঠা কেবল তোরাই!
আমাদের চোখ বড়ই খারাপরে নারী জাতি! সমাজ, বংশ, রক্ত মাঝে মাঝে সবই ভুলে যাই কামনার আঁধারে। আমাদের লালসার হাত থেকে বাঁচতে পারেনা নিতান্ত শিশু! হে নারী জাতি! তোরা কখনো বলতেই পারবি না যখন ছোট ছিলি, আদর করার ছলে তোদের শরীরের কোথায় কোথায় হাত দিয়েছি! পতিতালয়ে সদা গমন করা আমরাও রাজপথে নামি শরিয়াহ্ আইনের দাবীতে। মাঝরাতে মনে পড়ে অতীতের করা কোনো বড় পাপের কথা। আইন থাকলে আজ হয়ত আমি এবং আমরাও থাকতাম তরবারীর নিচে! যাক্ বেচে গেছি! এখন হলে সমস্যা নাই বলে নিজেকে প্রবোধ দিতে থাকি।
আমরা বড়ই খারাপরে নারী জাতি! বড়ই খারাপ!এমনিতে তো আর জাফর ইকবাল স্যার বলেননি পৃথিবীর সমস্ত অপরাধের মূলে আছে ওয়াই ক্রোমোজোম। শুনতে তিতা হইলেও নির্মম সত্যরে নারী!
কি হে নারী? তোমার চোখে আমাদের উপর এত ক্রোধ কেন? বহিঃপ্রকাশ ঘটাবার আগে কার্নিভাল অভ রাস্ট গানটি শুনতে ব্যস্ত থাকা তোমার সদা শান্ত ভাইটির খোঁজ নাও। গতকালও রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া এক মেয়ের উদ্দেশ্যে ছুড়ে দিয়েছে এক অশ্লীল মন্তব্য! কি এক দরকারে পাশের বাসায় গিয়ে গোপনে ছবি তুলে এনেছে কোনো ঘুমন্ত প্রতিবেশীর! সেও কিন্তু এক নারী! খোঁজ নাও আদর্শের বুলি কপচানো তোমার বাবা জীবনে কতবার তোমার মায়ের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে! ক্রোধ ভালো না নারী! ক্রোধ ভালো না! তোমরা বরাবরই শষ্যক্ষেতের মত, আমরা কেবল ফলিয়েই গেছি। ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে আমরা ফলাই, আবার সেই ঈশ্বরকে আমরা বুড়ো আঙ্গুল দেখাই! যখন ঈশ্বর তোমাদের পক্ষ নিয়ে বসে!
ক্রোধ ভালো না নারী! ক্রোধ ভালো না! সেই আমরা পুরুষজাতিই আবার তোমার তুচ্ছ পায়ের নখ নিয়ে শত লাইনের কবিতা লিখে ফেলি! তোমাদের জন্য ট্রয় নগরী জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে ফেলি। লাখখানেক অভিমান বুকে নিয়ে বছরের পর বছর তোমাদের ফিরে আসার অপেক্ষা করতে থাকি। মাঝরাতে তোমাদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে, তোমাদের ঘর থেকে আসা আবছা আলোর সাথে কথা বলতে থাকি। মনের অজান্তে কয়েক মুহুর্তের জন্য তাকিয়ে ছিলে, সেটা ভাবতে ভাবতেই জীবন পার করে ফেলি!
তোমরা কিছুই জানো না নারী! কিছুই বুঝো না! একবার প্রবেশাধিকার দাও তোমাদের রহস্যময় জগতে। রহস্যের সমাধান করতে করতে কখন যে বেলা ফুরাবে জানতেই পারব না। পাপ করব কখন! পাপের সাথে সহবাস তো বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রবেশের পূর্বমুহুর্তেই!
------------- ------------
লেখাটা প্রথমে একটা কনফেশন পেইজে দিয়েছিলাম। যথেষ্ট পরিমাণে ইনবক্সে, মন্তব্যে বয়ান শুনে আজ ব্লগে পোষ্ট করলাম।
যাইহোক যে জীবনে কখনো পাপ করেন নি কিংবা কাছের মানুষদের পাপ করতেও দেখেন নি। পোষ্টটা তাদের জন্য নয়। ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৪০