শেষ বিচারের দিন। কেয়ামতের ময়দানে দাড়াইয়া রাহি এদিক ওদিক চাহিতেছে। দেখিতেছে কাহারো কান্না আবার কাহারো হাসি। আচমকা অবিনশ্বর কহিলেন রাহি! এইবার তোমার পালা! আপনার পালা শুনিয়া রাহি টের পাহিল গলা শুকাইয়া কাঠ প্রায়। টেনশনে পড়িলে রাহির গলা শুকাইয়া যায়। রাহি মনে মনে ভাবিল পৃথিবীতে টেনশনে পড়িলে তো সিগারেট খাইয়া আপনাকে নিয়ন্ত্রন করিতাম কিন্ত এখন...
সম্ভিত ফিরিয়া আসিল অবিনশ্বরের ডাকে। অবিনশ্বর কহিলেন কোন ব্র্যান্ডের সিগারেট খাইবা?
বেহুশের ঠেলায় রাহি কহিল বেনসন! বেনসন হইলে ভাল হয়।
সহসা রাহি দেখিল শুন্যে ভাসিয়া একটা বেনসন এবং লাইটার তাঁহার সামনে চলিয়া আসিতেছে। রাহি তখন বিস্মিত হইবার বোধশক্তিও হারাইয়া ফেলিয়াছে। বেনসন ধরাইয়া দুই তিন টান দিয়া রাহি আপনার মধ্যে কনফিডেন্স খুজিয়া পাহিল।
অবিনশ্বর কহিলেন তো শুরু করা যাক্।
রাহি কহিল হে অবিনশ্বর শুরু করুন।
বলো, কি আনিয়াছ মোর জন্য?
কিছুই আনি নাই! কারন মোর জন্ম হইয়াছে নরকে যাইবার জন্য।
কেন আন নাই? কেন মাথা নত কর নাই আমারি তরে?
চোখে অভিমান নিয়া রাহি কহিল কেন নত করিব! কারন আমি ঘৃণা করিতাম ধর্মের কান্ডারীদিগকে। উহার জন্য কত মালাউন, কাফির ট্যাগ খাইলাম! কেন নত করিব! যখন আমার মা বোনের সম্ভ্রম লুণ্ঠনকারীরা চলিয়া যাইবে স্বর্গে। আর আমি রাহি তখন মাথা ঠুকিয়া সেই স্বর্গ প্রার্থনা করিব!!
বিস্মিত সুরে অবিনশ্বর কহিলেন কান্ডারী মতলব আজম, সাঈদিগং এর কথা বলিতেছ?
রাহি কহিল হা।
অবিনশ্বর মেজাজ খারাপ করিয়া কহিলেন কেহ কি বলিয়াছে যে উহারা স্বর্গে যাইবে?
তাঁহারা যদি ভোটের বিনিময়ে স্বর্গপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেয়। তাহলে নিজে যাইবে না কেন!
অবিনশ্বর রাগে দাঁত কিড়মিড় করিয়া ডাক দিলেন জিবরাঈল! জিবরাঈল! ডাক শুনিয়া জিবরাঈল তড়িঘড়ি করিয়া অবিনশ্বরের সামনে উপস্থিত হইলেন। কহিলেন কি করিতে হইবে অবিনশ্বর? অবিনশ্বর রাহিকে ইশারা করিয়া কহিলেন উহাকে নরকের স্পেশাল সেলে লইয়া যাও। চারিপাশ অবলোকন করাইয়া আবার মোর সামনে উপস্থিত করিও।
কয়েক সেকন্ডের মধ্যেই আসমানি হেলিকপ্টার চলিয়া আসিল এবং রাহি ও জিবরাঈলকে লইয়া নরকে যাত্রা করিল। নরকের স্পেশাল সেলে গিয়া রাহি দেখিল সাঈদি সাহেবকে নগ্ন করিয়া বিশেষ অঙ্গে দমাদম বাড়ি দেওয়া হইতেছে! আজম, নিজামীর অবস্থাও সিরিয়াস। এইসব দেখিয়া রাহি হো হো করিয়া হাসিয়া জিজ্ঞাস করিল কাশেম কই? কাশেম? ভাইলোগ শাস্তিই বা কেন পাহিতেছে? সাঈদির বিশেষ অঙ্গের দিকে ইশারা করিয়া জিবরাঈল কহিলেন গলদ ইস্তেমাল! গণিমতের মাল বলিয়া ব্যভিচার এবং নরহত্যার শাস্তি পাহিতেছে বদমাইশগুলা! কাশেম কোনো চিপায় টিপায় রহিয়াছে আরকি। রাহি হাসিতেই থাকিল। হাসিতে হাসিতেই আপনার পরিণতি ভাবিয়া বিষাদের সমুদ্রে ভেলা ভাসাইল......
***
দ্বিতীয়বারের মত রাহি দাড়াইয়া আছে অবিনশ্বরের সামনে। দাড়াইয়া আছে মৃতপ্রায় বৃক্ষের মত। দাড়াইয়া আছে যেন এক নিস্তব্ধতার প্রলয়ের মধ্যে। অসহ্য নিরবতা ভাঙ্গিয়া অবিনশ্বর কহিলেন রায় কি বলিতেই হইবে?
বিষাদগ্রস্থ রাহি কহিল হে অবিনশ্বর! বলিতে হইবে না। জানি যাইতে হইবে নরক বাসে!
এক রাশ ঘৃণার প্রকাশ ঘটাইয়া অবিনশ্বর কহিলেন হে মোর উত্তম সৃষ্টির নিকৃষ্ট উদাহারন! যাও!
হতাশার সমুদ্রে হাবুডুবু খাইতে খাইতে রাহি কহিল হে অবিনশ্বর! যাইতেছি! যাইবার পূর্বে তব এ অধম দুইটি জিনিস চাহে আপনার নিকট। দিবে কি?
প্রসন্নচিত্তে অবিনশ্বর কহিলেন দিব। চাহো!
অধম একটি ৫৬'' টিভি চাহে!! ফ্লাট হইলে ভালো হয়। আর...
ব্যাঙ্গাত্মক সুরে অবিনশ্বর কহিলেন আর?
বত্রিশ দাঁত বাহির করিয়া রাহি কহিল বদমাইশগুলারে কি ট্রিটমেন্ট দেওয়া হইতেছে তাঁহা দেখিতে চাহি! সরাসরি সম্প্রচার!!
***
নরকে অসংখ্য সেলের মাঝারে একটি অদ্ভুদ সেল রহিয়াছে। যেখান হইতে আর্তনাদ, গগণবিদারী চিৎকার এবং কান্নার পাশাপাশি মাঝে মাঝে অট্টহাসির শব্দ শুনা যায়। সাত আসমানের সমস্ত রহস্যের উদঘাটন হইয়াছে। এই রহস্যের উদঘাটন হয় নাই। কিছু রহস্যের উদঘাটন না হওয়াই ভালো।
শেষ বিচার। কেয়ামতের ময়দানে অবিনশ্বর এবং নির্বোধ রাহি ।। ২ ।।