somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইরিশ সরকারের রাষ্ট্রীয় বৃত্তি এবং আমাদের সম্ভাবনা

০২ রা জুলাই, ২০০৮ ভোর ৬:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যুক্তরাজ্য থেকে ১৯২২ সনে সাউদার্ন আয়ারল্যান্ড বের হয়ে এসে রিপাবলিক অব আয়রল্যান্ড গঠন করার পর তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন না হলেও স্বাধীন চিন্তা এবং স্বীদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষমতা তাদের নুতন করে দেশ গড়ার কাজে সহায়ক হয়েছে বারাবরই। সম্প্রতি যুদ্ধনীতি নির্ভর লিসবন ট্রিটিকে 'না' জানিয়ে তারা আবার প্রমান করেছে তাদের স্বাধীনতার যৌক্তিকতা। যেখানে দেশের নিরঙ্কুশ পার্লামেন্ট সদস্যের সমর্থন ছিল 'হ্যা'-এর প্রতি, সেখানে সাধারন গনভোটে জনগন শান্তিকেই বেছে নিয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে আয়ারল্যান্ডের সংবিধান রীতিমত দুঃসাধ্য দুঃপরিবর্তনীয়। পার্লামেন্টের কোন ক্ষমতা নেই এটা পরিবর্তন করার। একমাত্র জনগনই পারে গনভোটের মাধ্যমে পরিবর্তন করতে এবং সম্প্রতি লিসবন ট্রিটিতে স্বাক্ষরের জন্য সংবিধান পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিল যা জনগন মেনে নেয়নি। এ কথাগুলো দিয়ে লেখাটা শুরু করার মূল কারন তাদের স্বাধীনতার সুফলগুলোর একটা বাস্তব চিত্র তুলে ধরা। কিন্তু এসব সাফল্যের মাঝেও একটা ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য থেকে বের হয়ে এসে আয়ারল্যান্ড ব্যাপক ভাবে পিছিয়ে পড়েছিল; আর তা হচ্ছে গবেষনা ভিত্তিক উচ্চশিক্ষা। শুধু যুক্তরাজ্যই নয়, ইউরোপের অন্যন্য অংশের তুলনায়ও আইরিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাফল্য ছিল নিতান্তই নগন্য। উন্নত বিশ্বের প্রেক্ষাপটে ব্যাপারটি রীতিমত বেমানান।

এই দশকের গোড়ার দিকে বিষয়টি আইরিশ সরকারের দৃষ্টিগোচর হয় এবং পরবর্তিতে তারা বিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং প্রযুক্তিগত গবেষনার জন্য আইরিশ রিসার্চ কাউন্সিল ফর সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারীং এন্ড টেকনোলজী এবং মানবিক বিভাগ সমূহের জন্য আইরিশ রিসার্চ কাউন্সিল ফর হিউমেনিটিজ এন্ড সোশাল সায়েন্স গঠন করে। কর্যক্রম শুরুর প্রায় পরপরই সরকার এ দুটো সংগঠনের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গবেষনা ভিত্তিক শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করে রাষ্ট্রীয়-বৃত্তি প্রদান করা শুরু করে। এ বৃত্তির মাধ্যমে সরকারের মূল লক্ষ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তরুন গবেষকদের আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা গ্রহনের জন্য আকর্ষন করা।

যদিও এই বৃত্তি ইউরোপের দেশ সমূহের নাগরিকদের প্রাধান্য দেয় বেশি, তবে আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের জন্যও একটা ছোট অংশ আলাদা ভাবে বরাদ্দ থাকে সবসময়। মানবিক শাখার ছাত্রছাত্রীদের জন্য এই বৃত্তি বছরে একবার দেয়া হয় জানুয়ারী মাসে। অন্যদিকে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা একটু বেশি এবং দেয়া হয় দু'বার - একবার এপ্রিলে (ফেব্রুয়ারীতে আবেদন) এবং আরেকবার সেপ্টেম্বরে (জুলাইতে আবেদন)। এই বৃত্তি সম্পূর্ন টিউশন ফিস (যেমন ট্রিনিটির ফিস ১৪,০০০ ইউরো) পরিশোধ করার পাশাপাশি বিজ্ঞানের ছাত্রদের বছরে ১৬,০০০ ইউরো এবং মানবিক বিভাগের ছাত্রদের ১২,০০০ ইউরো হাত খরচ দিয়ে থাকে। বিজ্ঞানের ছাত্ররা প্রতিবছর আরো অতিরিক্ত ৮,০০০ ইউরো কম্পিউটার কেনা, গবেষনার খরচ এবং বিদেশ ভ্রমনের খরচ বাবদ পেয়ে থাকে। সর্বপরি এই বৃত্তি যারা পায় তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ ডেজিগনেশন - "গভমেন্ট অব আয়ারল্যান্ড স্কলার"।

বৃত্তিটি দুটো পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের দেয়া হয় - এক. মাস্টার্স পর্যায় এবং দুই. পি.এইচ.ডি পর্যায়। উল্লেখ্য যে মাস্টার্স পর্যায়ে ডিগ্রীটি অবশ্যই গবেষনা ভিত্তিক (এম.এস.সি বাই রিসার্চ) হতে হবে। মাস্টার্সের জন্য এক বছর এবং পি.এইচ.ডি এর জন্য তিন বছরের বৃত্তি প্রদান করা হয় যদিও পরবর্তিতে সময় বাড়ানোর নিয়মও রয়েছে। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গতবছরের সেপ্টেম্বরে ৫০ জনকে এ বৃত্তি দেয়া হয়েছিল যেখানে সাতজন ছিল অন্তর্জাতিক ছাত্র। এ বছর মার্চে ১৬৫ জনকে দেয়া হয়েছে যাদের মধ্যে ১৫জন আন্তর্জাতিক ছাত্র রয়েছে। যদিও কোন সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই তবে সাত থেকে দশ শতাংশ বৃত্তি নিয়মিতই আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের দেয়া হচ্ছে।

এ বৃত্তি বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটা সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে বিশেষত তাদের কাছে যারা ইউরোপের ইংরেজী ভাষী এলাকার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহন করতে আগ্রহী। তাছাড়া, যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাস্টার্সে আন্তর্জাতিক ছাত্রদের পূর্নাঙ্গ বৃত্তি প্রদানের বিষয়টি প্রায় দেখাই যায় না (স্কটল্যান্ডকে ব্যতিক্রম ধরলে)। অতএব যারা মাস্টার্স অথবা পি.এইচ.ডি করতে আগ্রহী তারা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারেন।

এ মাস থেকেই গ্রহন করা হবে বিজ্ঞানের ছাত্রদের আবেদন যা কয়েকটি শর্তপূরন সাপেক্ষে গ্রহন করা হবে। শর্তগুলো হলো:

১. যে বিষয়ে পড়তে আগ্রহী সেটি অবশ্যই গবেষনা ভিত্তিক হতে হবে অর্থাৎ মোট মূল্যায়নের অন্তত ষাট শতাংশ থিসিস থেকে আসতে হবে।
২. আবেদনের পূর্বে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি দেখাতে হবে না তবে হবু-সুপারভাইজারের রিকম্যান্ডেশন লেটার অবশ্যই জমা দিতে হবে।
৩. সম্পূর্ন আবেদনপত্রটি অনলাইনে জমা দিলেও, রিকম্যান্ডেশন লেটারগুলো (আনলাইনের পাশাপাশি) ডাকযোগেও প্রেরন করতে হবে।

আবেদনকারীকে চারটি অংশে মূল্যায়ন করা হবে:

১. পূর্ববর্তি ফলাফল
২. রিকম্যান্ডেশন লেটার (২ টি)
৩. পারসোনাল স্টেটমেন্ট
৪. রিসার্চ প্রপোজাল

এই চারটি অংশের বাহিরে আবেদনকারীকে অন্য কোন কিছু (যেমন আর্থিক অবস্থা ইত্যাদি) দিয়ে বিচার করা হবে না। অতএব, আবেদনের সময় যত্ন সহকারে ডকুমেন্ট (বিশেষত ৩ এবং ৪) তৈরী করা উচিত। পুরো আবেদনটি এখান থেকে ( http://www.ircset.ie/ )অনলাইনে জমা দিতে হবে।

সাবধানতার জন্য আবার মনে করিয়ে দিচ্ছি, আবেদনের জন্য ইচ্ছুক ব্যাক্তিকে অবশ্যই শর্ত ১ এবং ২ আবেদনের পূর্বেই পূরন করে আসতে হবে। এ শর্তগুলোতে কোন রকম ছাড় আজ পর্যন্ত দেয়া হয়নি অতএব ভবিষ্যতেও যে দেয়া হবে না সেটা এক রকম নিশ্চিত।


২ জুলাই ২০০৮
ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড
---
বি.দ্র. - আয়ারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যলয়গুলোর উপর আরো একটি ব্লগপোস্ট এ সপ্তাহেই লেখার পরিকল্পনা রয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০০৮ ভোর ৬:১৬
১৫টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×