আমার এলাকার এক ছোট ভাই, যে বাউন্ডুলে নামে একটু আরটু লেখালেখি করে।ঢাকায় একটা স্বনামধন্য কম্পানিতে ব্রান্ড ম্যানেজার হিসেবে কাজ করে। দিন কয়েক আগে সে একটা কমেন্ট করেছে।
"আমরা তো ভাই না, লুঙ্গী পরে যেয়েও পাই না"
উপরের মন্তব্যটি যিনি করেছেন, তিনি কে? কোন সময়ের বিপরীতে বলেছেন?
চলুন তার খবর নিয়ে নেয়া যাক!
১৯ অক্টোবর দুপুর ১১.৩০ মিনিট
আমি মেসেঞ্জারে লিখলাম: ভাই তুই কি ঢাকায় ?
ওই পাশ থেকে নো আনসার, ডাইরেক্ট কল ব্যাক....পুরাইঅস্থিরসে…
আমিঃ হ্যালো?
ভাইয়া, শ্লামুওলাইকুম!
আমি: WS! কোথায় রে পাগল?
আলুপট্টি, ভাইয়া!
সাহেব বাজার, আলুপট্টি ?
জি!
গ্রেট! থানার মোড়ে চলে আয়?
কিন্তু আমি যে লুঙ্গি পরা !
তো কি হইছে, লুঙ্গিই তোর সাথে ভাল যায়! চলে আয়! সে ভাবছে আমি তারে বাউন্ডুলে ভেবে এই কথা বলেছি বোধ হয়... কিন্তু মনে মনে আমি বলেছি তুই একটা "ক্ষ্যাত" (দয়া করে এখনি এই ক্ষ্যাত এর সংজ্ঞা নির্ণয় করে ফেলেন না কেউ)..
ও নিজেকে বলে, বাউন্ডুলে!
যদিও এর মানে সবাই জানেন, তবুও মনে করায় দেই !
"ভবঘুরে, ছন্নছাড়া, কর্মবিমুখ, অপদার্থ ব্যক্তি, স্বচ্ছন্দচারী"
এবার বাসা থেকে নিচে নেমে বাউন্ডুলের পথ চেয়ে অপেক্ষার পালা! বসে বসে আকাশ কুসুম করছি! আচ্ছা ও কেন বললো আমি লুঙ্গী পরে আছি? বোধই, আমি বিদেশি না তাই, তবে তো কিছুটা হতাশও হয়েছে! কেননা, অনেক বিদেশীদের কাছেই এই লুঙ্গি বেশ আশ্চর্যের বিষয়। বোতাম, দড়িতো দূরে থাক বেল্ট, ফিতা, চেইন, সেফটিপিন কোন কিছুই নেই এই লুঙ্গিতে! হাউ কাম, এইটা …?! একজন বিদেশি লুঙ্গি পরা দেখে সারপ্রাইজড হবে কিন্তু বাঙালী বলবে "ক্ষ্যাত"! এই কি তোর সংশয় এর কারণ ? কিন্তু ভাই তোর তো বুঝতে হবে আমি সেই বাঙালী না, আমি অস্থির বাঙালী।
যাই হোক, পথের দিকে চেয়ে আছি... দূর থেকে কেউ একজন লুঙ্গি পরে আসছে...কিন্তু না এই বেডায়, ফ্যাকাসে বর্ণের, ও নিশ্চয় রোহিঙ্গা! কেননা লুঙ্গি মায়ানমারের জাতীয় পোষাক। সেখান থেকে এসে ছিল এটি আমাদের দেশে। মায়ানমারে লুঙ্গিকে লোঙ্গাই বলে ডাকা হয়ে থাকে। পুরুষেরা এটি ঘরে বাইরে সর্বত্রই পরে থাকেন। মহিলাদের লুঙ্গি সেখানে তামাইন হিসেবে সুপরিচিত। দেশটা রোহিঙ্গা তে ভরে গেছে। বাউন্ডুলেও তো ঘরের বাইরে পরেছে আজ, ঘরেও নিশ্চয় পরে, তবে কি তাকে রোহিঙ্গাও বলা যেতে পারে? ..... ধুর কি যা তা ভবি ! মায়ানমার প্রথমে লুঙ্গি পাঠিয়েছে এর পর এইগুলান পরার জন্য আমরা রোহিঙ্গা নিয়ে এসেছি..... আহা রে আমাদের দরদ.....
ঐ যে আর একজন আসছে, গায়ের বর্ণও মিলে যাচ্ছে কিন্তু এ কি ! লুঙ্গির উপর বেল্ট পরেছে! ও বুচ্ছি, এই মাল সোমালিয়ার। সোমালিয়ায় অফিসের সময় বাদে অন্য সময়ে প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ সবাই লুঙ্গি পরে থাকেন। সোমালিয়ায় লুঙ্গির সাথে আবার অতিরিক্ত হিসেবে বেল্টও পরিধান করা হয়ে থাকে।
আচ্ছা, বাউন্ডুলে কি লুঙ্গির উপর জামা ইন্ করে পরেছে আজ ? শুনেছি, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ায় লুঙ্গিকে সারং বলে অভিহিত করা হয়। এ দুই দেশের মানুষেরা লুঙ্গির ভেতর জামা ইন করে পরেন। সাথে লুঙ্গির উপর সোমালিয়ার মানুষের মতো তারা বেল্টও পরে থাকেন (নাইলে কখন সটকে যাবে টেরও পাবে না)।
আচ্ছা, ওর লুঙ্গি পরার আর কি কারণ হতে পারে? হম্, বুচ্চি! কারণ সে এখন রাজশাহীতে। প্রিয় পাঠক, কেন এদেশে লুঙ্গির চল হয়েছিল জানেন? যেখানে গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়া বিরাজ করে সেখানে ট্রাউজার পরিধান কিছুটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। মূলত এই কারণেই এ ধরণের এলাকাগুলোতেই লুঙ্গির বিস্তার ঘটেছে। তাহলে নিশ্চয় এটা ফারাক্কা ইফেক্ট!! ফারাক্কার কারণে আজ রাজশাহীতে প্রচন্ড গরম আর বাতাসে মারাত্নক আদ্রতা যার কারণে বাউন্ডুলে আজ লুঙ্গি পরে সাহেব বাজার পর্যন্ত এসেছে! এমনই ভ্যাপসা গরম পড়েছে আজকে ! আহারে, খুব খারাপ লাগলো ছেলেটির কষ্টের কথা চিন্তা করে! ইন্ডিয়া তোকে আমি ছাড়বো না…
শেষে বাউন্ডুলে আসলো, রিকশায় চেপে, বাতাস খেতে খেতে, লুঙ্গিটা এক হাতে ধরা! মোড়ল রা যেভাবে ধরে, গায়ে চড়িয়েছে টকটকে লাল টি শার্ট (তার মানে মনে মনে সেলিফ প্লান আছে তার)। ও যখন নামছিল, তখন মনে পড়লো, ওর মত খ্যাত, না না ওর থেকেও বড় একজন "খ্যাত" ছিল এ দেশে। পার্থক্য হলো উনি নিজেকে বাউন্ডুলে নয়, নিজেকে মজলুম আখ্যা দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের মজলুম জননেতা হিসেবে পরিচিত মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর প্রিয় পোষাক ছিল এই লুঙ্গি। তার লুঙ্গি প্রীতির কথা কারোরই অজানা নয়। লুঙ্গি পরতে ভালোবাসতেন জাতির জনকও।
সবশেষে বলতে হয় লুঙ্গি আমাদের একটি ঐতিহ্যবাহী পোষাক। বেশ আরামদায়ক হওয়ার সুবাদে শুধু বাংলাদেশেই নয় সারা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানেই এর কদর রয়েছে। তবে আধুনিক পাশ্চাত্য সংস্কৃতির কবলে পড়ে দেশের তরুণদের মাঝে এর জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। তারপরও এই লুঙ্গি আমাদের সংস্কৃতিতে সমহিমায় টিকে ছিল, টিকে আছে এবং টিকে থাকবে এ কথা হলফ করেই বলতে পারি।
ঐতিহ্যবাহী পোষাক পরলে যদি ক্ষ্যাত হয়, তবে আমার দেখা সবচেয়ে বড় ক্ষ্যাত হলো লোটে শেরিং। ভূটানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। তার ১৮ মিনিট এর একটি বক্তব্য আছে, না শুনে থাকলে, শুনে ফেলুন নিচে লিঙ্ক দেয়া হল।।
আমাদের স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক মরহুম মাহফুজুর রহমান মজনু স্যার এর একটি বিখ্যাত টেকনিক ছিল দাম নির্ধারণ করা। Word কিংবা Sentence এর দাম নির্ধারণ করে উনি মূলত গুরুত্ব নির্ধারণ করে দিতেন । সেই থিওরিতে মিলিয়ন ডলার মূল্যের একটা ভিডিও লিংক দিলাম বিনে পয়সায়। বাকীটা আপনার ইচ্ছে।
https://youtu.be/EFlEQ3ZE5zw
(With subtitle)
https://youtu.be/7Lc_dlVrg5M
( with good sound quality)
ধন্যবাদ,
#বাউন্ডুলে=স্বচ্ছন্দচারী
NostalZia
Rajshahi
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:১৬