আজকে এন্ড্রয়েডের কিছু ফিচার নিয়ে লিখব। মনে করিয়ে দিতে চাই যে, আমার ফোনের এন্ড্রয়েডের ভার্সন হল Android 5.0 এবং ডিভাইস হল Walton RM2. কাজেই ভার্সন এবং ডিভাইসভেদে সেটিংসগুলো কিছুটা এদিক সেদিক হতে পারে।
1.Daydream: এই ফিচারের সাহায্য আপনার ফোনটি যখন চার্জে থাকবে তখন ডিসপ্লেতে কি থাকবে সেটা ঠিক করা যায়।অবশ্য ফোনটি চার্জে দিয়ে ফেলে রাখলেই Daydream সুবিধাটি পাবেন। চালু করতে Settings > Display > Daydream অন করুন। তারপর মেন্যু থেকে সিলেক্ট করুন আপনি কি চান। যদি Clock সিলেক্ট করেন তাহলে চার্জে দিলে ডিসপ্লেতে সময় দেখাবে, Colors সিলেক্ট করলে বিভিন্ন রঙের শেড দেখাবে। অন্যকোনটা সিলেক্ট করলে সেটা দেখাবে। অবশ্য কখন Day dream চালু করতে চান সেটিও ঠিক করতে পারবেন। অপশন বাটনে ক্লিক করলে When to day dream থেকে নির্বাচন করে নিন।
2. Smart Lock: ফোনের সুরক্ষার জন্য আমরা প্যাটার্ন, পিন অথবা পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করে থাকি। কিন্তু বার বার এই প্যাটার্ন, পিন বা পাসওয়ার্ড দিয়ে আনলক করা যদি আপনার বিরক্তির কারন হয় তবে আপনি Smart Lock ব্যবহার করতে পারেন। Smart Lock এর মাধ্যমে বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে ফোন লক হবে ঠিকই কিন্তু আনলক করতে প্যাটার্ন, পিন, পাসওয়ার্ড ইত্যাদির দরকার হয় না। Settings > Security > Smart Lock ক্লিক করুন। আপনার ফোনের পূর্বোক্ত সিকিউরিটি অনুযায়ী প্যাটার্ন, পিন বা পাসওয়ার্ড চাইবে। দেয়ার পর যে পেজ আসবে তাতে Got it ক্লিক করুন। তারপর বিভিন্ন অপশন সম্বলিত মেন্যু আসবে।
a) Trusted devices: এই সুবিধাটি দিয়ে আপনি আপনার হাতঘড়ি, গাড়ি ইত্যাদির সাথে ফোনের সংযোগ ঘটিয়ে ফোন আনলক অবস্থায় রাখতে পারেন যদি আপনার ঘড়ি, গাড়িতে ব্লুটুথ থাকে। এই সুবিধাটি চালু করলে যতক্ষন আপনার ফোনটি আপনার ঘড়ি অথবা গাড়ির কাছাকাছি (ব্লুটুথ রেঞ্জের মধ্যে) থাকবে ততক্ষন ফোন লক হলেও আনলক করতে পাসওয়ার্ড, পিন, প্যাটার্ন লাগবে না, শুধু Swipe করলেই চলবে।
b) Trusted Place: এর মাধ্যমে আপনি লোকেশন অনুযায়ী ফোন লক করার ব্যবস্থা করতে করতে পারেন। যেমন যতক্ষন আপনি ঘরে, অফিসে বা অন্যকোন নিরাপদ জায়গায় থাকবেন ততক্ষন ফোন সহজেই আনলক করা যাবে। ফোনটি নির্বাচিত স্থানসমূহ ছাড়া অন্য কোথাও নিয়ে গেলেই আনলক করতে পিন, প্যাটার্ন, পাসওয়ার্ড চাইবে।
c) Trusted Face: মুখমন্ডল সনাক্তকরার দ্বারা ফোন আনলক হবে। এটিও চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
d) On-body detection: তবে আমার মতে সবচেয়ে ভাল Smart Lock অপশন হল এটি। আপনি যতক্ষন ফোনটি আপনার হাতে, পকেটে, ব্যাগে রাখবেন ততক্ষন এটি কাজ করবে। দূরে গেলেই ফোন লক হয়ে যাবে।
আপনি যদি Settings > Security তে যেয়ে Smart Lock দেখতে না পান তাহলে নিচে স্ক্রল করে Trust agents এ ক্লিক করুন এখান থেক Smart Lock অন করুন। এবার back এ এসে দেখুন Smart Lock অপশনটি চলে এসেছে।
3. Data Protection: আপনার ফোনের যেকোন ছবি, ভিডিও, অডিও ক্লিপ বা অন্য কোন ফাইল আপনি চাইলে লক রাখতে পারবেন। এরফলে কেউ আপনার ফোন পেয়ে গেলেও একান্ত ব্যাক্তিগত ফাইলসমুহ দেখতে পাবে না।যে ছবি, ভিডিও, অডিও ক্লিপ বা ফাইলটি লক করতে চান সেটি কোথায় কোন ফোল্ডারে আছে সেটি প্রথমেই দেখে নিন। এরপর Settings > Security > Data Protection এ ক্লিক করুন। এবার Pattern দিন আপনার ইচ্ছেমত। এবার উপরে ডানপাশে + চিহ্নের উপর ক্লিক করলে আপনার ফোনের স্টোরেজ সমূহ দেখাবে। সেগুলোতে ক্লিক করতে করতে আপনার নির্ধারিত ফাইলটি খুজে বের করুন। তারপর উপরে ডানদিকে "পেন্সিল আইকন" এ ক্লিক করলে ফাইল সিলেক্ট করতে পারবেন। নির্দিষ্ট ফাইলটি সিলেক্ট করে উপররের তালা আইকনে ক্লিক করলে ফাইলটি লক হয়ে যাবে। এবার Data protection মেন্যু থেকে বেড়িয়ে এসে ফাইলটি খুজে দেখুন। পাবেন না। ফাইলটি আনলক করতে হবে। Data Protection এ যেয়ে আগের মতই পেন্সিল আইকনে ক্লিক করে ফাইলটি সিলেক্ট করুন। এরপর "খোলা তালা" আইকনে ক্লিক করলে ফাইলটি আনলক হয়ে যাবে। আগের মত নির্দিষ্ট স্থানে ফাইলটি পাওয়া যাবে। এই পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা হল কোন ফোল্ডার লক করা যায় না।
5. Developer Option: ফোনকে আরো সূক্ষভাবে Customize করার জন্য রয়েছে Developer Option. পুরনো এন্ড্রয়েড ভার্সনগুলোতে Settings থেকেই Developer Option টি পাওয়া গেলেও নতুন ভার্সনগুলোতে ফাংশনটি হিডেন আছে। কাজেই Settings > About phone থেকে Build number এর উপর কয়েকবার ক্লিক করুন যতক্ষন না “you are a developer” লেখাটি স্ক্রিনে দেখতে পান। এরপর ব্যাক করে Settings এ গেলেই নিচের দিকে Developer Option এ দেখতে পাবেন। প্রবেশ করলেই দেখবেন অনেকগুলো অপশন আছে যেগুলো আপনি নিজে থেকে Customize করতে পারবেন। আমি যেগুলো বুঝতে পেরেছি সেগুলো সম্পর্কে লিখছি।
a) Stay awake : এটাতে টিক দিলে ফোন চার্জে থাকলে ডিসপ্লে অফ হবে না।
b) Process stats : এটাতে ক্লিক করলে ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ডে কোন এপসটা কতটুকু র্যাcম ব্যবহার করছে সেটা দেখতে পাবেন।
c) Show touches : এটা টিক দিলে ফোনের টাচ করলেই স্ক্রিনে গোলাকার ডট আসবে। আপনার টাচ কোথায় পড়ছে সেটা দেখা যাবে।
d) Show Pointer : এটাতে টিক দিলে লাল বিন্দু দিয়ে আপনার টাচ দেখাবে এবং উপরে বিভিন্ন অক্ষরেখায় ঐ বিন্দুর মান দেখা যাবে।
e) Show surface updates: টিক দেয়া হলে স্ক্রিন ফ্ল্যাশ করে আপডেটগুলো নির্দেশ করবে।
f) Show layout bounds : টিক দিলেই স্ক্রিনের বিভিন্ন কিছুর রঙিন মার্জিন দেখা যাবে।
g) Force RTL layout direction : টিক দেয়া হলে আরবী লেখা যেমন ডানদিক থেকে শুরু হয় তেমনি স্ক্রিনের সবকিছুর দিক ডাক দিক থেকে শুরু হবে।
h) Window Animation Scale, Transition animation scale, Animator duration scale : By default এইগুলোর মান 1 দেয়া থাকে। এগুলোর মান .5 করে দিলে ফোনের স্পিড বাড়বে আশা করা যায়।
i) Simulate secondary display: By default দেয়া থাকে none. ক্লিক করে কোন রেজ্যুলেশন নির্বাচন করলে সেই রেজ্যুলেশনের আরেকটা ডিসপ্লে ফোনের স্ক্রিনে চলে আসবে।
j) Simulate color space: এখানে by default দেয়া থাকে disable. ক্লিক করলে disable ছাড়াও আরো কয়েকটা আইটেম পাবেন। একেকটা নির্বাচন করলে ফোনের ডিসপ্লের কালার একেক রকম হবে। যেমন, আপনি যদি Monochromacy নির্বাচন করেন তাহলে পুরো ডিসপ্লে সাদাকালো হয়ে যাবে। অন্যগুলো নির্বাচন করলে রঙ একেক রকম হবে।
আরো অনেক ফাংশন আছে এই Developer Option এ। আমার পরামর্শ থাকবে অনুমানের উপর ভিত্তি করে কোন কিছু না করাই ভাল। কোন অপশনে কি করেছেন সেটা যদি মনে রাখতে পারেন তাহলে ভুলভাল কিছু করলেও সেখান থেকে আগেরটা নির্বাচন করে দিলে ফোন ঠিক হয়ে যাবে।
সবাইকে ধন্যবাদ।