somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনি যে আনারস খাচ্ছেন সেটা 'গর্ভবতী', জানেন তো?

১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বসন্তের ভীষণ গরমে পথে ঘাটে লেবুর শরবত, তরমুজের মতো আরো একটি জনপ্রিয় ফলের নাম আনারস। দেখতে ভালো, খেতে সুস্বাদু দামেও সাধ্যসীমার মধ্যে। ১০ থেকে ২০ টাকায় একপিস আনারস কিনলেই দোকানি আপনাকে বিট লবনের স্বাদে কেটে ছিলে মাখিয়ে প্যাকেট করে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে যে আনারসটি তার পুষ্টিগুন কিন্তু প্রশ্নাতীত। তবে আমার সাবধান বানী তখন-ই কার্যকর যখন এই আনারস টিকে ব্যবসায়ীক উদ্দ্যেশে রাসয়নিকের ব্যবহারে খাবার অনুপযোগী করে বাজারজাত করা হয়েছে।

ফলমূলে কীটনাশকের ব্যবহার বেশ পুরোনো ইস্যু। গাছ এবং ফল কে কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতেই সেই ৬০ এর দশক থেকে মূলত কীটনাশকের ব্যবহার শুরু হয়। কিন্তু শুধু সেই কাজেই থেমে থাকেনি বিজ্ঞান। আবিষ্কার করেছে আরো অনেক রাসয়নিক। যার মধ্যে ক্যালসিয়াম কার্বাইড একটা উল্লেখ যোগ্য নাম। ফরমালিন যখন প্রতিদিনের আতংকের নাম তখন অন্য অনেক রাসয়নিকের মতোই ক্যালসিয়াম কার্বাইড আমাদের গুরুত্বের বাইরে থেকে যাচ্ছে। খাদ্যে যেসব রাসনিক মেশানো হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে ফরমালিন, প্যারা ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ডিডিটি, ইথেফন, কৃত্রিম হরমোন, ক্যারিথ্রিন এবং রাসায়নিক রং।

আনারসের বাম্পার ফলনের জন্য টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলা বেশ বিখ্যাত। এখান থেকে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০০ট্রাক ভর্তি আনারস পৌঁছে যায় দেশের আনাচে কানাচে। খোদ মধুপুরের বাজারেও রাসয়নিক মুক্ত আনারস পাওয়া বেশ কঠিন। আনারস দ্রুত বর্ধন এবং পাকানোর জন্য যে হরমোনাল রাসয়নিক ব্যবহার করা হয় তার নাম গর্ভবতী। আর আনারসের রং সুন্দর করার জন্য দেয়া হয় রাইপেন ব্রান্ডের ইথেফন। মেডিসিন ছাড়া যে রং হয় না তা কিন্তু নয়, হয় তবে দেরি হয়। মানে ফলটিকে প্রাকৃতিক ভাবে পাকার সময় দিতে হয়। আনারস প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে উঠতে এবং খাবার উপযোগী হতে সময় লাগে তিন মাস। কিন্তু বেশি লাভের আশায় দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে চাষীরা ব্যবহার করছেন রাসয়নিক। শেয়াল আনারস বাগানের প্রধান শত্রু। ১৯৯০ সাল থেকে মধুপুরের আনারসে ইথেফন ব্যবহার করা হচ্ছে। এবং তারপর থেকে শেয়ালও এই ফল খায় না।

কৃষকরা নিজেরা নিজেদের খাবারের জন্য যে আনারস গুলো আলাদা করে রাখেন তাবে রাসয়নিক স্প্রে করেন না। কারণ তারাও জানে স্প্রে করা আনারস খেলে নানা রোগব্যাধি হয়। তিন মাসে প্রকৃ্তিক ভাবে ম্যাচিয়ুর হতে না দিয়ে দুই মাসে যেটা বাজারজাত করনের জন্যই মধুপুরের আনারস চাষীরা বেশি দাম পাবার আশা জেনে এবং না জেনে এই ক্ষতিকর রাসয়নিক ব্যবহার করে যাচ্ছেন। ইথাইলিন বা ক্যালসিয়াম কার্বাইড প্রয়োগের কারণে ২-৪ দিনের মধ্যেই ফল হলুদ রং ধারণ করে। বাস্তবে এসব ফল বাইরে পাকা মনে হলেও এর ভিতরের অংশে অপূর্ণতা থেকেই যায়। ফল পাকাতে যে বিপজ্জনক রাসায়নিক পর্দাথটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় তার নাম কার্বাইড। স্থানীয় বাজারে কীটনাশকের দোকানে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে রাইপেন, টমটম, প্যানোফিক্স, সুপারফিক্স নামক কেমিক্যালগুলো।

আনারসের জীবন চক্র যদি এক লাইনে বলা হয়, তবে এমন দাঁড়ায় যে আনারস এখন হরমোনে বাড়ে, রাইপেনে পাঁকে, ফরমালিনে টেকে। প্রথমে আনারসে ফুল আসলেই স্প্রে করা হয় হরমোন। এতে ফুলেফেঁপে বড় হয়ে ওঠে আনারস। এরপর সেই আনরসে ইথোফেন স্প্রে করা হয়। এতে দ্রুত পেঁকে যায় আনারস। আর সবশেষে স্প্রে হয় ফরমালিন। এতে অসময়ে পাকানো আনারস পচনের হাত থেকে রক্ষা পায়। ফরমালিন স্প্রের পরদিন কাটা হয় আনারস। সুপারফিক্স নামের একটি গ্রোথ হরমোনের কার্যকারিতা হলো এতে একটি আনারস এক মাসের মধ্যে স্বাভাবিকের তুলনায় তিন থেকে চার গুন বড় ও মোটাসোটা হয়। রাইপেন বা টমটম নামের এই ওষুধগুলো গাছে স্প্রে করলে এক থেকে তিন দিনের মধ্যে আনারসে লাল রঙ ধরে। এবং রাসয়নিক ব্যবহারে চাষীর আরেকটি লাভ হচ্ছে ক্ষেতের সব আনারস একসাথে পাকে।

কিভাবে চিনবেন রাসয়নিক মুক্ত আনারস। দেখতে অসুন্দর, আকারে ছোট। আনারসে ওষুধ না দিলে গোড়া থেকে পাকাঁ শুরু হয় এবং এক-দুই চোখ রং হয়।

ফরমালিনের বিরুদ্ধে অভিযানের কথা শুনে থাকলেও বাকি যে সব রাসয়নিকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলোর প্রতিরোধে তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো যে বাজারের প্রায় ৮২ ভাগ খাদ্যে ফরমালিনের উপস্থিতি চিহ্নিত হয়েছে। গত ৫ বছরে আমি যে পরিমান আনারস খেয়েছি তাতে নির্দ্বিধায় বলা যায়, আমি ইতিহাস! যদিও খাওয়ার সময় আমি জানতাম এগুলো পাহাড়ী আনারস। তাই এতো মিষ্টি এবং সুস্বাদু। পরে জেনেছি তথ্যটা ভুল জানতাম।

কোন ফলে কোন রাসনিক পদার্থ আছে সেটা জানাই এখন সুস্থ থাকার পূর্বশর্ত।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৬:১৬
৩১টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×