somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কি-বোর্ডে 'আবেগ' আর কত দেখাবেন?

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার জন্ম আশির দশকের মাঝামাঝি। আমাদের শৈশব কেটেছে আদিগন্ত মাঠে। স্কুলগুলোতেও ছিলো খেলাধূলার সুব্যবস্থা। বৌচি, কানামাছি, দাড়িয়াবান্ধা, বরফপানি, গোল্লাছুট। আহা! কী ছিলো সেইসব দিনগুলো। যারা আমার মতো সেই সময়ে জন্মেছেন তারাই জানেন সেই দিনগুলির প্রাপ্তি।

বাবা সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন বলে দুই-তিন বছর পরপর-ই আমাদের বিভিন্ন জেলা গুলো তে যেতে হয়েছে। বাসা বদল, স্কুল বদল আর সাথে সাথে স্বাভাবিক নিয়মেই বন্ধু বদল। যেহেতু সরকারী কোয়াটার গুলোতে ছিলাম তাই বন্ধুদের সাথে আমরা বাসা, ছাঁদ, খেলার মাঠ ভাগাভাগি করে নিতাম। আমাদের ভৌগলিক নৈকট্য যেমন ছিলো ঠিক তেমনি ছিলো মানসিক নৈকট্য।

আমাদের জীবনের প্রাপ্তি গুলো রিয়েল লাইফে ছিলো বলেই ভার্চুয়াল লাইফের প্রতি আমাদের দক্ষতা বরাবর-ই এই প্রজন্মের মতো নয়। অন্তত আমি আমার কথা বলতে পারি। আমি ইন্টার্নেটে খুব কম কিছুই ঘাটাঘাটি করে বের করতে পারি। তার থেকে ছাপার বই পড়তে পারি বেশি। আমার প্রথম মোবাইল যখন আমার হাতে আসে তখন আমার বয়স ২০ বছর। প্রথম মেইল একাউন্ট হয় ২৪ এ আর ফেসবুক একাউন্ট হয় ২৫ এ। প্রথম ল্যাপটপ পাই ২৮ এ এসে।

তাই হয়ত ভার্চুয়াল লাইফের প্রতি আমার আগ্রহ বরাবর-ই কম। যাকে যা বলতে চাই সেটা মুখোমুখি বলতেই বেশি পছন্দ করি। কাউকে ভালোবাসি কিংবা বাসি না এটা বলার জন্য আমাকে কী বোর্ডের আশ্রয় নিতে হয় না। এখনকার প্রগতিশীল প্রজন্মের মত মা কে মা দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে স্ট্যাটাসে লিখিনা “ মা তোমাকে অনেক ভালোবাসি”, বাবার জন্য লিখিনা “ আমার বাবা শ্রেষ্ঠ মানুষ”। যেটা আমি জানি এবং অনুভব করি সেই ইমোশনটা বাস্তব জীবনে না দেখিয়ে কেন আমাকে কী বোর্ড আর ভার্চুয়াল জগতের আশ্রয় নিতে হবে! কেন??

যারা এই ভার্চুয়াল সংস্কৃতিকে চর্চা করেন, তারা কী আমাকে বলবেন, “দিন শেষে আপনাদের প্রাপ্তি কী”। আচ্ছা মেনে নিলাম আপনি আপনার অনুভুতি প্রকাশ করেছেন। কিন্তু যার জন্য করেছেন সেই মানুষ টা কী জানেন, যাকে নিয়ে আপনি লিখেছেন। আপনার বাবা মার কী ভার্চুয়াল জগতে একাউন্ট আছে?

তাহলে এবার বলেন তো, আপনি শেষ কবে মা কে জড়িয়ে ধরেছেন। বাবার সাথে বসে গল্প করেছেন। সারা দিনের রাজকার্য শেষ করে যখন বাড়ি ফিরেন তখন তো হয় স্মার্ট ফোন, নয় তো ফেসবুক, কিংবা টেলিভিশন। খেতে বসে আপনার তাড়াহুড়া, গোসলে তাড়াহুড়া, অনিয়মিত ঘুম, ব্যক্তিগত সম্পর্কে টানাপোড়েন, লেখাপড়ায় অমনোযোগ। এগুলো ছাড়াও যে জীবনের আরো অনেক দিক আছে সেগুলো আপনাদের মনে থাকেনা নাকি আপনারা নিজস্ব স্টাইলে তা পাত্তা দেননা আমি বুঝি না।

যা কিছু আছে তার চর্চা আপনি করেন বা না-করেন, হারিয়ে গেলে কীবোর্ডে ঠিক-ই লিখেন “মাই অমুক/তমুক ইজ রেস্ট ইন পিস”। আচ্ছা তখন কী আপনার হাত কাঁপে? গাল বেয়ে অশ্রু পড়ে? আপনার কী আফসোস হয়? আরো কিছু বছর কি তাদের কাছে পেতে ইচ্ছে করে? ইচ্ছে করেনা সেটা আমি বিশ্বাস করিনা, ইচ্ছে হয়ত ঠিক-ই করে। কিন্তু ঐ কী বোর্ড ছেড়ে হারিয়ে যাওয়া প্রিয় মানুষ গুলো কে সময় দেয়ার মতো সময় আর পেলেন কোথায় বলেন!

ভার্চুয়াল জগতে একজনের নিক-এ লেখা কথা গুলো এমন, “কীপ্যাডের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে ব্যাকস্পেইস বাটন । অপ্রকাশিত কথা, লুকানো দু:খবোধ, মুছে ফেলা শব্দগুলো, মিথ্যে বেঁচে থাকা, না বলা আনন্দেরা ভালো থাকুক । খুব ভালো থাকুক,ব্যাকস্পেইসের অন্তরালে । প্রিয় কীপ্যাড বাটন তুমি ভাল থেক । ভাল থাকুক অদৃশ্য অন্তরীন” ।

যোগাযোগের ভাষায় এটাকে “Avatar” বলে। যেখানে hide এবং delete এর সুযোগ থাকে ও ব্যবহার আছে। এটাকে আমরা Hyper Personal Communication’ও বলতে পারি। এর মানে দাঁড়াচ্ছে আমরা সরাসরি যোগাযোগে এক ধরনের শংকাতে থাকি। আমরা নৈর্ব্যক্তিক হতে চাচ্ছি না বা পারছি না। আমাদের কনফিডেন্স কমে যাচ্ছে, আমরা ব্যক্তিগত টার্ম টাকে গোপনীয়তা, স্বেচ্ছাচারিতা এবং লুকোচুরির পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কেন?

অনেক ক্ষেত্রে আমার এমন হয় যে, আমি যা বলতে চাই শব্দ তা বলতে অক্ষম। তাই সেখানে আমার কন্ঠস্বর, আমার চোখের পাতা, আমার মুখোভঙ্গী আমাকে সাহায্য করে যা বোঝাতে চাই, সেটা বোঝাতে। স্পর্শের চেয়ে শক্তিশালী আর কিছু নেই। কাছে থাকার আনন্দ কেবল কাছে থাকাতেই আছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ২:৩২
৪১টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×