‘...এই ধর্ম-নিরপেক্ষ রাজনীতিকেই ইরেজীতে বলা হয় সেকিউলারিযম। এই শব্দটাই আমাদের দেশে যত কম বুঝা হইয়াছে, তত বেশী ভুল বুঝা হইয়াছে। ধরিয়া লওয়া হইয়াছে, ধর্ম-নিরপেক্ষ মানে ধর্ম-বিরোধী। আরো ধরিয়া লওয়া হইতেছে যে, সেকিউলারিযম মানে ন্যায়-নীতি, সত্য-সততা, সধুতা, সচ্চরিত্রতা কিচ্ছু না মানা, যার-মন-যা চায় তাই করা। রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মনৈতিক, অর্থনৈতিক ভান্ডালিযম আর কি!’
বলিতেছেন আবুল মনসুর আহমদ তাঁর ‘শেরেবাংলা হইতে বংগবন্ধু’ বইখানাতে। এইখানেতেও শব্দের কথা পাড়া হৈছে- বলা হৈছে সেকিউলারিযম শব্দটাই আমরা কেমন বুঝিলাম। আমারেও নানাজনে ডিকশনারী হৈতে সেকিউলারিযম শব্দের মানে কি হৈবে তা-ই বুঝাইতছিলেন। ইহাযে ধর্মনিরপেক্ষ না হৈয়া ধর্মহীনতা বা তেমন বুঝায় এরকম অইন্য কোন বাংলা শব্দ হৈবে- তাহাই বুঝাইত ছিলেন। অনুবাদের রকমফের বুঝিলাম- তাঁহাদের কাছে আমি ঋণী। কিন্তু শব্দের যে কাল-পাত্র ইত্যাদি থাকে, এমনকি দেশও তথা বাংলাদেশও যে উপস্থিত সেই কথা কাহারও কাছে শুনিয়াছি- মনে পড়িল। সেই স্মরণই নিজ গরজে যতখানি সম্ভব লৈতে বসিলাম। আর তাহা হৈতেছে এই যে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি গঠনের সময় হৈতে, এমন কি পাকিস্তান হিসাবেও এইটি যতদিন টিকিয়া আছিলো তার আগ হৈতে এই ‘সেকিউলারিযম’ বা ‘ধর্ম-নিরপেক্ষতার’ বিষয়টি হাজির আছে, ইতিহাস হৈয়া আছে। এখনে সেই হিস্টোরীর স্মরণ না লৈয়া কেমনে শব্দের অর্থ ডিকশনারীর আদলে করি। অথবা ‘সেকিউলারিযম’ বা ‘ধর্ম-নিরপেক্ষতার’ বিষয়টি তখন যেমত বুঝা হৈয়াছিল আমাদের বর্তমান সেকিউলার রাজনীতি কি তারথন আগ-পিছ কোন নইব্য ধারনা নিয়া উপস্থিত হৈতে পারিছে কিনা সেই প্রশ্নটারও লাযিম মিমাংসা চাই।
মনসুর আহমদ চল্লিশের লাহোর প্রস্তাবের কথা তুলিছেন। তাঁর মতে, শেরেবাংলার এই একখান প্রস্তাবের সূত্র ধইরেই পাকিস্তান ভাগ হৈছিল বটে, কিন্তুক সেই প্রস্তাবের আনুপুঙ্খ মানা হয় নাই। পরথমতঃ প্রস্তা বে শেরেবাংলা ভারতের দুই কাঁরায় দুইডা আলাদা মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথাই বইলেছেন- এইটা মানা হয় নাই। (আমাগের এই কথাবার্তায় বিষয়টা নুকতা বক্তইব্যের মতন, জেনে রাখা ভাল টাইপের।) কিন্তু দ্বিতীয়তঃ এবং সম্পুরক বক্তইব্য হৈতেছে গিয়া এই যে, এই দুই আলাদা রাষ্ট্রর এমনতর ভাগ-বাটোয়ারার একখান বড়সড় উদ্দেশ্যই আছিল ভারতবর্ষের হিন্দু-মুসলমান সমস্যার সমাধান। আমাগের রাজনীতির এহেন কাংখা হৈতেই আজিকার সেকিউলারিযম বা ধর্ম-নিরপেক্ষতার তক্তা-পিড়ি, বসিবার যোগান- সেইটাই মনত আনিতে হৈবে। মনসুর আহমদ বলিচ্ছেন- ‘কায়েদে আযম জিন্নার সেকিউলার গণতান্ত্রিক মতবাদের আন্তরিকতায় কংগ্রেস-নেতাদের আস্থা ছিল বলিয়াই জিন্না-নেতৃত্বে স্বতন্ত্র মুসলিম-প্রধান রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তিতে দেশভাগে তাঁরা সম্মত হইয়াছিলেন।’ আর সেই সেকিউলারের রকম কি সেইটা পরথমের উদ্বৃত অংশর থুন বুঝন যায়।
এই ইতিহাস আমরা আগেরথন জানিনে এমন কথাই কি আমি বলিতে চাহিতেছি; লা হাওলা ওলা... এমন আস্পর্দা আমার কস্সিন কালেরও নয়। কিন্তু আমাগের আজিকার সেকিউলার রাজনৈতিকতা নিজেদের রাজনৈতিক মতাদর্শ এরথন আর বেশী কিইবা বুঝিয়াছে- এই প্রশ্ন তুলিতে চাহিলে চর্বিত ইতিহাস একবার মনত করিয়া লওন দরকার হয়, করিলাম মাত্র।
মুনিরা (ওয়েবার-ডুর্খেইম) ক্লাসিক্যাল ভঙ্গিতে ভাবিচ্ছিলেন, আমাগের সমাজ যতই আধুনিক হৈতে শুরু কৈরবে, সেখানে ধর্ম ধীরে অগুরুত্বপূর্ণ হৈতে শুরু কৈরবে। আর ভলটেয়ার-হিউম প্রমূখ দ্বিতীয় প্রজন্মের ভাবুকেরা ভাবিচ্ছেন, সাইনটিফিক নলেজের কদর বাড়িলে পরে মানুষের মন হৈতে ধর্মের ধুয়াও উইবে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে মানুষ ধর্ম বিষয়ে অবিশ্বাসী হৈবে। এই হৈতেছে গিয়া, ব্যক্তি ও কওমরে ধর্মহীন করনের ভাবনা-চিন্তা। কিন্তু বিয়াপক ভাবে যে ধারনা কদর পাইছে সেটা হৈতেছে গিয়া, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাপারে ধর্মের আনাগোনা বন্ধ করা তথা প্রতিষ্টান‘র কায়-কারবারত ধর্মের খবরদারী-নজরদারী রুদ্ধকরণ। সেই বরাতে রাষ্ট্ররে ধর্মের নীতির থুন আলাদা বা নিরপেক্ষকরন। ব্যক্তি ধর্মহীন হৈবেনা ঠিক, রাষ্ট্র ধর্ম-নিরপেক্ষ হৈবে। আমাদের বাংলাদেশের সেকিউলার রাজনীতি ইমুন পর্যায়ের-ই। সেকিউলারিজম লই যাহাতক আলোচনা করিনা কেন, আমাগের এই সেকিউলার রাজনৈতিকতার স্মরণ লওন জরুরী।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৮