ছোট কালে পইড়েছিলাম মনে আছে দে, বাংলাদেশ ষড়ঋতূর দেশ। আর এই লইয়্যা বাংলার কবি সমগ্র নানা কিসিমের ভাব জমাইছেন তাহাদের লেখাপত্রে। একএকটা ঋতূ লইয়্যা সুগভীর ভাব সমূহের মইধ্যে আবার ভেতরগত অন্তমিল-সামাঞ্জস্যও থাকিত দেখা গেছে।
কবিরা ভাবুক তাই তাহাদিগের ভাবের মিল অসংযতনা। কিন্তু আমাদের রাজৈনিতক সমগ্রর মইধ্যেও কি এহেন কাল ভিত্তিক ভাব জন্মিত বা জন্মায়?
১০ই মার্চ ১৯৭২ সালে বারায়েছিল ‘হক-কথা’র তৃতীয় সংখ্যা। এটা যদি সাহিত্য পেপার হইত তইলে কবি-ভাবুকগন লিখিতেন ‘শীত গিয়াছে-সবে গরম পড়িতে শুরু করিয়াছে’- এসকল কতবার্তা। কিন্তু ইহা একটি গন পত্রিকা। এটা পড়িলে তখনকার রাজনীতির গরমশীত ঠাউরান যায়।
চট্টগ্রাম বন্দর
স্বাধীনতার পরপরই একনায়কতান্ত্রিক আওয়ামী প্রগলভতার সময়ে হক-কথা’র এসংখ্যায় চট্টগ্রাম বন্দর নিয়া নানান দূরভিসন্ধির কথা লেখা হইয়্যাছিল। বলাবাহুল্য, আজতক এই দূরভিসন্ধি হইত্যে আমরা রেহাই পাই নাই। সাম্প্রতিক পিলখানায়ও এমন ষড়যন্ত্রের কতা বইলছে অনেকে। ‘হক-কথা’য় লিখেছিল- ‘আমাদের প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্র এই সত্যকে ঢেকে রেখে হরদম প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন, বন্দরটি আন্তরজাতিক গুরুত্ব বজায় রাখবার সব বৈশিষ্ট্য খুইয়ে ফেলেছে। সঙ্গে সঙ্গে তাই পাল্টা প্রস্তাব জানাচ্ছে, তাদেরই একটি বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের কাজকাম চালিয়ে যেতে।’ কিন্তু আজতক চট্টগ্রাম বন্দর আন্তরজাতিক গুরুত্ব বজায় রাখিতে সক্ষম হওয়ায় ট্রানজিট প্রস্তাব নিয়া আমাদের মনে প্রতিবেশী সূলভ চক্রান্তর কথা জাগা দেয়। এসময়ে আমরা ট্রানজিট ও নানা প্রতিবেশী সূলভ চক্রান্ত শীতযায় গরমআসিবার প্রাক্কালে রাজনীতির কালভিত্তিক স্বভাব বলিয়া মনে লয়।
যা-উ-ক। কিন্ত প্রসঙ্গ আরো আছে।
স্বাধীনতা দিবস ও রাজাকার ধরাধরি
’হক-কথা’য় ছাপা আর একটি কলামের নাম হইতেছে ’আমাদের স্বাধীনতা দিবস কবে?’ একাত্তুর পরবর্তী সময়ে পত্রিকায় এমন লেখা ছাপা হওনের সাহস বুঝা কঠিন। তবে স্বাধীনতার জন্মক্ষন লয়ে এমন প্রশ্ন তোলা! নচ্ছার! লিখা হইয়্যাছিল ‘ আমাদের স্বাধীনতা দিবস সত্যিই কি ২৬শে মার্চ? অন্ততঃ বাংলাদেশ সরকার তাই বলছেন ও চাপিয়ে দিতে চাচ্ছেন।’
’ইহা কি সত্য?’- শিরোনামের একটি নিয়মিত কলামে লেখা হইয়্যাছে- ‘জনাব ইহসান এই ক‘দিন আগেও মুসলিম লীগ করিতেন। ভয়াবহ নয় মাসে মানুষকে কত জুলুম করেছেন তার ইয়াত্তা নাই। আজ তিনি ১৫নং বাঘিল ইউনিয়নের (টাঙ্গাইল থানা) জনৈক আওয়ামী লীগারের দেশপ্রেমীক পিতা। পুত্রধনের আওয়ামীলীগত্বের বদৌলতে দালালীর শাস্তি থেকে রেহাই তো পেয়েছেন...’ রাজাকার ধরাধরীর এই সময়ে আধুনিক আওয়ামীলীগত্বের বদৌলেতে কেউ মামলা খাওয়া হইতে রেহায় পাচ্ছেন কিনা সেদিকে নজর রাখিতে হইবে।
মুক্তি বাহিনীর সম্বর্ধনা
‘স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর যোদ্ধারা দেবতা নয়- অন্ততঃ মুসলিম সমাজে তা সাজবার কোন উপায় নেই। কিন্তু নিঃসন্দেহে তারা আমাদের প্রিয়জন। তাদের সন্তুষ্টির জন্য তাদের অপছন্দের কাজ আমরা শুরু করেছি।’ কিন্তু এ অপছন্দের কাজ কি? হক-কথা‘য় লিখা হইয়্যাছে ‘কৃষক, মজুর, তাঁতী, জেলে.... শখ করে যে ছেলেকে স্কুলে কিংবা কলেজে পড়তে দিয়েছে তার আজ জোর পূর্বক আবদার- মুক্তিবাহীনিকে সম্বর্ধনা দেবার চাঁদা দিতে হবে।’ এসময়ে নির্বাচনে বিজয়ের আনন্দকে নতুন করিয়া মুক্তি আখ্যায়িত করে চাঁদা তোলাতুলির ননাই আমরা দেখেছি। সম্মুখে এমন আরো প্রসঙ্গ ও তারিখের অভাব হইবেনা। আমাদের এবিষয়ক প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে। আগে থেকেই ভাবিয়া রাখিতে হইবে।
ভাবিতে হইবে এজন্য দে, সময় ও পরিবেশ একই রকম। রাজনীতিতে পরিবেশ-প্রতিবেশের জোর্তিবিজ্ঞানীয় প্রভাব থাকিত পারে বলে সন্দেহ হয়।