তেতুল হুজুর ও জাফর ষাড়
দু'টোই গালি, কটাক্ষপাতের উদাহরণ। উভয়ে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি। আপনার ইসলামী বিদ্যার ধারণা না থাকলে আপনি আল্লামা আহমদ শফি দা.বা. কে চিনবেন না। আবার আপনার সাহিত্য ও বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা না থাকলে আপনি জাফর ইকবাল স্যারকে চিনবেন না। উভয়ে একেক দিক থেকে উঁচু মাপের লোক। কেউ স্থায়ী শিক্ষায়, কেউ অস্থায়ী শিক্ষায়। কারো জ্ঞানের দৌড় কবর পর্যন্ত কারো জ্ঞানের দৌড় কবর পরবর্তী জীবন পর্যন্ত; এই পার্থক্য।
আমাকে অনেকেই দু'জনকে একই শিরোনামে দাঁড় করানোর কারণে গালাগালি করতে পারেন। কেউ বলবেন, কই শায়খ আহমদ শফি আর কই জাফর ইকবাল স্যার অথবা কেউ বলবেন, কই জাফর ইকবাল স্যার আর কই আল্লামা আহমদ শফী। একেকজন একেকজনকে উপরে রাখবেন আর অপরজনকে ফেলবেন ডাস্টবিনে, আরও কোন নোংরা জায়গা থাকলে সেখানেই ফেলবেন।
এক সময় আপনি তেতুল তেতুল জপতেন আর এখন ষাঁড় ষাঁড় শুনে রেগে যাচ্ছেন।
তেতুল বলি আর ষাঁড় বলি উভয়টাই কটাক্ষ করে বলা। কটাক্ষ করা সর্বসম্মতিক্রমে অপছন্দনীয়, ঘৃণ্য। একজন ভালো মুসলিম যেমন কাউকে ষাঁড় বলতে পারেন না তেমন একজন শিক্ষিত লোক তেতুল বলতে পারেন না।
শেরে বাংলা একে ফজলুল হক বাঘের মত হিংস্র নন বরং সাহসী, ক্ষিপ্ত; সুতরাং বুঝে নিতে হবে তিনি নারীকে তেতুলের সাথে তুলনা করেননি।
কেউ নাস্তিক হলেও তাকে গালি দেয়া বা কটাক্ষ করা আদৌ ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ স. কাফের বা মুনাফিককে গালি, কটাক্ষ কিছুই দেননি বা করেননি। আল্লাহ তা'আলা তো নিষেধই করেছেন। (সূরা হুজরাত-১১)
আপনি যখন একজন হুজুরকে দেখে নাক ছিটকান, বলেন ব্যাকডেটেড, এরা গোঁড়া, উন্নয়ন বলতে কিছু বোঝে না। তখন কি একটু ভেবে দেখেছেন এরা ইসলামের ধারকবাহক, স্থায়ী জীবনে অনেক খানি এগিয়ে, এরা কেয়ামত দিবসে থাকবে প্রথম সারির ব্যক্তি হিসেবে যদিও বা তারা এমপি-মন্ত্রী বা বিসিএস ক্যাডার না।
আপনি হুজুর হয়ে যখন মাদরাসা শিক্ষার বাহিরের শিক্ষায় ধারণা রাখেন না, বরং তাকে হেয় করেন তখন কি ভেবেছেন? এ শিক্ষা অনেক ভালো ব্যক্তি গড়ে তুলছে। যাদের হাত দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক ও প্রাশাসনিক কার্যক্রম চলছে, উন্নত হচ্ছে দেশের চাকা। এই শিক্ষা না থাকলে আপনি কি পারবেন আন্তর্জাতিক মানে দেশটা চালাতে?
আমি আসলে কে নাস্তিক আর কে আস্তিক কিংবা কে মহান ব্যক্তি তা নিয়ে কিছু বলছি না। আমি বলছি একজন "হুজুর" ও একজন "স্যার" এর মাঝে দূরত্ব সম্পর্কে। উভয়টার অর্থ 'জনাব'। ইসলামী জ্ঞানে পণ্ডিত হলে হুজুর, সাধারণ শিক্ষায় পণ্ডিত হলে স্যার। অবশ্য কাউকে সম্মানার্থেও এই দু'টো শব্দ ব্যবহার করা হয়।
একজন হুজুর জানেন না বিশ্ববিদ্যালয়ে কি পড়ানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে কতটা প্রতিভা আছে আর কত মহা কারিগররা বাস করে। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যক্তিরা জানে না মাদরাসা ও জামিয়াতে কি পড়ানো হয়, জামিয়া মানে বিশ্ববিদ্যালয় তাও তো জানা নেই অনেকের। ইসলামী শিক্ষার বিবেচনায় কওমি মাদরাসায় যে কত প্রতিভাবান ও মহান মহান ব্যক্তি রয়েছেন তা অনেকেরই অজানা। এই শিক্ষায় শিক্ষিত হলে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার চেয়ে বেশী শ্রম দিতে হয় তা তো কেউ বিশ্বাসই করবে না। এখানে যে এমফিল ও পিএইচডিও আছে তা অনেকের ধারণারই বাহিরে।
এই জানা না জানার দূরত্বের কারণে একজন অপরকে দেয় গালি, বাড়ে হিংসা ও ঘৃণা। বুঝতে চায় না একে অপরের ভালো মন্দ। এই দূরত্ব কি সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব বিরোধী নয়? এদেশকে এগিয়ে নিতে হলে সর্বস্তরে কি সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের প্রয়োজন নেই? ইসলামের প্রচার প্রসার ও রাসূলুল্লাহ স. এর আদর্শ অনুসরণে এই দূরত্ব কমানোর কি কোন প্রয়োজন নেই?
সুবুদ্ধির উদয় হবে কবে! হিংসা ও ঘৃণা আর ক্ষতি করবে কত!