ট্রলার বিসমিল্লাহ-২ ছুটছে উপকূলের দিকে, বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে বারুদের গন্ধে। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ইসরায়েলি ডেস্ট্রয়ার চিনর গর্জে ওঠে—
"Target locked! Firing now!"
গোলার আওয়াজ আকাশ কাঁপিয়ে ছুটে আসে—
ধাঁই!!
একটি শেল এসে আঘাত করে ট্রলারের পিছনের দিকে। কাঠের শরীর ছিঁড়ে যায়, ইঞ্জিন চুপ করে যায়। আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
জামশেদ চিৎকার করে ওঠে—
"প্ল্যান-বি! সবাই ডাইভ গিয়ারে নামো!"
জামশেদ দ্রুত একটা রাবার-ক্যাপ ঢাকা বোতাম টিপে দেয়। ট্রলারের ভেতরের টাইমড চার্জগুলো সক্রিয় হয়ে যায়। ১ মিনিট পর বিস্ফোরণ ঘটবে।
তারা তিনজন একে একে জলে ঝাঁপ দেয়। ঠাণ্ডা পানি যেন এক নিমেষে সমস্ত আওয়াজ চুষে নেয়। ডুবে যেতে যেতে ওপরে দেখা যায় আগুনে জ্বলতে থাকা ট্রলার, আর আকাশে ঘুরতে থাকা হেলিকপ্টারের ছায়া। তাদের পিঠে শক্তিশালী অক্সিজেন ট্যাঙ্ক, ব্যাটারি চালিত হ্যান্ড প্রপালশন ইউনিট—সব কিছু প্ল্যান-বি-র জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। তারা নিচে নামতে নামতে প্রপালশন চালু করে দেয়।
সাগরের নিচ থেকে ঘন কম্পন অনুভব হয়। ওপরে বিস্মিল্লাহ-২-এর শরীর বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। আগুনের আলো পানিতে প্রতিফলিত হয়।
হেলিকপ্টার পাইলট চিৎকার করে ওঠে—
“Massive explosion! Target is gone! I repeat, target destroyed!”
রেডিওতে আওয়াজ—
“This is Sharon, scan for survivors.”
“Negative thermal—initiate wide range FLIR sweep!”
আকাশে ঘুরছে দুটি সি-হক হেলিকপ্টার। আলো ফ্ল্যাশ করে খুঁজে চলছে সাগরের চূড়ায়। কিন্তু ততক্ষণে জামশেদ ও তার টিম সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে—প্রপালশন চালিয়ে তারা ছুটছে এক নির্দিষ্ট কোঅর্ডিনেটের দিকে। সাগরের গভীরে একটি ছোট প্রাকৃতিক গুহা, যেটা আগেই চিহ্নিত করে রাখা ছিল।
গুহার প্রবেশপথে পৌঁছতেই জামশেদ ইশারা করে,
"ভিতরে যাও, চুপ করে থাকো। ওরা আমাদের খুঁজবে, কিন্তু পাবে না।"
হেলিকপ্টার গর্জে ওঠে ওপর দিয়ে—
“FLIR shows no movement. We may have neutralized the target.”
“Roger that. Mission Kill Confirmed.”
ইসরায়েলি রণতরী লেভিয়াথান এখন এক বিশাল কালো ধোঁয়ার মেঘের নিচে। স্টার্ন প্রায় নেই বললেই চলে, আগুন জ্বলছে প্ল্যাটফর্মে। হেলিকপ্টার লঞ্চপ্যাড ধসে পড়েছে, রাডার সিস্টেম অকেজো। ডেস্ট্রয়ার সামিরের মাঝখান ফেটে গেছে। আগুন ছড়িয়ে পড়েছে গোলাবারুদ রাখার চেম্বারে। এক বিশাল বিস্ফোরণে সেটিও দুভাগ হয়ে যায়। আরেকটি ডেস্ট্রয়ার—ইউরিয়েল—ছিন্ন হেলিপ্যাড নিয়ে স্থবির অবস্থায় ভেসে আছে।
বাকি দুই ডেস্ট্রয়ার, চিনর ও মিশরাহ, আর্টিলারি বন্ধ করে দ্রুত উদ্ধার মিশনে যুক্ত হয়। হেলিকপ্টার পাঠানো হয় আহত নাবিকদের সরাতে।
ডেস্ট্রয়ার চিনরের ক্যাপ্টেন শ্যারন হতাশ কণ্ঠে বলল—
"We underestimated them. Sabotage from beneath… brilliant and brutal."
রাত গভীর হলে জামশেদ তার ছোট পানির নিচে ন্যাভিগেশন ডিভাইসে দেখল, উপকূল আর বেশি দূরে না।
“চলো, এখন। টার্বো চালাও, উপকূল আমাদের একমাত্র রাস্তা।”
তারা সমুদ্রতল দিয়ে ছুটে চলে ইরিত্রিয়ার উপকূলের দিকে।
দূরে দেখা যায় একটি ছোট ইন্জিন বোট। জামশেদ সিগন্যাল লাইট ছুঁড়ে দেয়—তিনবার সাদা, একবার লাল। চেনা সংকেত।
বোটটা ধীরে ধীরে আসে, এরপর তাদের তুলে নেয়।
“আল্লাহু আকবার, তুমি এখনো বেঁচে আছো, ক্যাপ্টেন জামশেদ!” – বলে সোমালিয়ান জলদস্যু সর্দার।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:২২