একটি পুরনো মাছ ধরার ট্রলার, লোহিত সাগরের সীমানার গভীরে ভেসে আছে নিঃশব্দে। তার ডেকে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষটির চোখে বাইনোকুলার। তার দৃষ্টি সরল নয়—গভীরতা পরিমাপ করছে, লক্ষ্যবস্তু লক করছে, বাতাস মাপছে। তার চারপাশে সাগরের শান্ততা, কিন্তু তার মনের মধ্যে চলছে এক উত্তাল যুদ্ধ।
২০ কিলোমিটার দূরে, বিশাল দানবের মতো দাঁড়িয়ে ইজরায়েলি বিমানবাহী রণতরী লেভিয়াথান।
তার চারপাশে চারটি ডেস্ট্রয়ার—ঘন ঘেরাটোপ।
পাঁচটি সেন্সর সিস্টেম, চারটি হেলিকপ্টার, দুই স্তরের সোনারের জাল।
তবু তারা দেখছে না মৃত্যু আসছে নিচ থেকে—পানির ভিতর দিয়ে।
পাঁচটি প্রশিক্ষিত বিশেষ জাতের ডলফিন, নিউরাল ব্রেইন ইমপ্ল্যান্ট ও ফাইবার অপটিক কম্যুনিকেশন লাইনে সংযুক্ত, সাগরের নিচে ছুটে চলছে তিনটি ভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে। প্রত্যেকে একটা করে টর্পেডো-আকৃতির শক্তিশালী মাইন টেনে নিয়ে যাচ্ছে —যার বিস্ফোরণে যথেষ্ট শক্তি একটি যুদ্ধজাহাজকে ছিন্নভিন্ন করার।
তিনটি দিক, তিনটি লক্ষ্য। সময় সমন্বিত।
ঠিক তখনই রেডিওর ভেতর তীব্র কণ্ঠ:
“Unidentified vessel, this is Israeli Navy Destroyer Shamir. You are within restricted military zone. Identify now.”
নৌকার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি মাইক্রোফোন তুলে নেয়। কণ্ঠস্বর নিঃসঙ্গ, ক্লান্ত—
“This is fishing boat Bismillah-2. Engine kaput. Drifting. Trying to repair.”
এদিকে, শত্রুপক্ষের প্যাট্রোল বোট এগিয়ে আসছে।
রেডিও বেজে উঠলো আবার—
“Invalid ID. We are approaching for inspection. Hold your position.”
অনেক আগেই ডলফিন-৪ ও ৫ আলাদা হয়ে গেছে মূল স্কোয়াড থেকে। তারা লেভিয়াথান থেকে দুই পাশে থাকা ডেস্ট্রয়ারদের দিকে ছুটে যাচ্ছে— নিঃশব্দে।
“ডলফিন-১, ২, ৩ লেভিয়াথানের স্টার্নের নিচে পৌঁছেছে।”
“৪ ও ৫ তাদের টার্গেটের কাছে।”
১০…৯…৮…
ডেকে থাকা সেই লোক হঠাৎ বাইনোকুলার নামায়, তার মুখে নিরুত্তাপ ছায়া।
তার হাতে থাকা কন্ট্রোলার থেকে এক নীরব সংকেত পাঠায় সে।
সাতটি শব্দ — ধ্বংসের সূত্র।
৩…২…১…
একসাথে—তিনটি বিস্ফোরণ।
সমুদ্রের নিচ থেকে উঠে আসে জ্বলন্ত আগুনের শিখা।
– বিমানবাহী রণতরী লেভিয়াথান কেঁপে ওঠে, লেভিয়াথানের পেছনের দিক ছিন্ন হয়ে অনেকখানি আকাশের দিকে লাফিয়ে ওঠে, পানির ফোয়ারা ছিটকে ওঠে আকাশে, তার মাঝে আগুনের ঝলকানি। এরপর বিকট শব্দে সাগরের বুকে আছড়ে পড়ে, আর চারপাশে তৈরি হয় বিশাল ঢেউ।
– ডেস্ট্রয়ার সামিরের মাঝখান থেকে হঠাৎ আগুনের লালচে ফ্ল্যাশ দেখা যায়, যেন মাঝখান ফেটে কিছু ছিটকে উঠছে।
– অনেক দূরে আরেকটি ডেস্ট্রয়ারের পেছনে আগুনের রেখা ছিটকে উঠতে দেখা যায়।।
শত্রুর রেডিওতে কাঁপুনি, বিভ্রান্তি—
“Multiple impacts! What the hell—carrier hit! We’re hit! They’re under us!”
রেডিওতে ইস্রায়েলি ডেস্ট্রয়ার চিনরের অধিনায়ক শ্যারন গর্জে ওঠে—
“Saboteur confirmed! Destroy that boat! All destroyers—open fire!”
২৫ কিলোমিটার দূর থেকে গর্জন তুলে আকাশ ছিঁড়ে ছুটে আসে প্রথম শেল।
সমুদ্রের ওপরে শোঁ শোঁ করে ছুটে যায়, বিশাল ঢেউ তুলে পানিতে পড়ে বিষ্ফোরিত হয় কাছাকাছি জায়গায়।
বিসমিল্লাহ-২ দুলে ওঠে, ঢেউয়ের চাপে।
“আলী, দক্ষিণ-পশ্চিম ৪৫ ডিগ্রিতে স্টিয়ার করো। ফুল থ্রাস্ট। ছামানি, কম্যুনিকেশন চ্যানেল নষ্ট করে দাও—তারা যেন সিগন্যাল ট্র্যাক করতে না পারে!”- বায়নোকুলার চোখে দুরের ডেস্ট্রয়ারের গতিবিধি দেখতে দেখতে শান্ত গলায় নির্দেশ দেয় জামশেদ, হুথি নৌ-কমান্ডো ইউনিট-৭ এর অধিনায়ক।
আরও দুটি শেল আছড়ে পড়ে পেছনে। সমুদ্র ফেটে যাচ্ছে, কিন্তু ট্রলার এখনও ভাসছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০১