শীতের সকাল। কুয়াশার চাদর এখনও পুরোপুরি সরেনি, তবু গ্রামের উঠোনের জীবন শুরু হয়ে গেছে। দূরের তালগাছের মাথায় কয়েকটা শালিক একে অপরকে ডাকছে, বটগাছের ডালে বসে দোয়েল পাখি গা ঝাড়া দিচ্ছে। উঠোনের ধারের গরুটার গা থেকে ধোঁয়া উঠছে শীতের ঠান্ডায়, সে ধীরে ধীরে মুখ নাড়িয়ে খড় চিবোচ্ছে। একপাশে ছাগল দুটো নিজেদের গায়ে গা ঘষছে উষ্ণতা পাওয়ার জন্য।
তার ঠিক সামনেই উঠোনে ছড়িয়ে আছে একদলা ধানের খোসা আর ছোট ছোট দানা। আর সেই দানাগুলোর চারপাশে গোল হয়ে নড়েচড়ে বেড়াচ্ছে মুরগির দল। কেউ ঠোঁট চালিয়ে খাবার তুলছে, কেউ মাটি খুঁড়ে ধুলোর ঝড় তুলে দেখছে তলার নিচে কিছু পাওয়া যায় কিনা। এই দলে একটা মুরগির ছানা একটু আলাদা—নক।
নক আর পাঁচটা মুরগির মতোই, তবে তার চোখে কেমন একটা ব্যস্ততা। ধুলো উড়িয়ে দৌড়াচ্ছে, ঠোকরাচ্ছে, লাফিয়ে অন্য মুরগিদের ধাক্কা দিয়ে একটু বেশি খাবার পাওয়ার চেষ্টা করছে। একবার এক টুকরো পিঠা নিয়ে দৌড় দিলে বাকিরাও তাকে ধাওয়া করে। কিন্তু নক বুদ্ধিমান, সে বাঁশঝাড়ের কোণে গিয়ে দাঁতাল ঠোকর মেরে খেয়ে নেয় সেটা, যেন কেউ ভাগ না পায়।
খাবারের খোঁজার মাঝে হঠাৎ তার চোখে পড়ে মাটির ওপরে পড়ে থাকা একটা ছোট পোকা— মোটা, রসালো, লাফিয়ে লাফিয়ে এগোচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে তার শরীরে একটা শিহরণ খেলে যায়। সে ধীরে ধীরে সামনে এগোয়, চোখ সরু করে তাকিয়ে থাকে, যেন শিকার ধরতে যাচ্ছে। অন্য মুরগিরাও খেয়াল করেছে, তারাও দৌড় দিল। কিন্তু নক দেরি করল না—এক ঝটকায় দৌড়ে গিয়ে ঠোঁটের ডগায় ধরে ফেলল পোকাটাকে।
সুস্বাদু পোকাটা গিলে ফেলতেই শরীরটা আরও চনমনে লাগল। নক একটু দূরে গিয়ে দাঁড়াল, শরীর ঝাড়া দিল। তারপর হঠাৎ ডানা একটা প্রসারিত করল। হালকা বাতাসে পালকগুলো কেঁপে উঠল, সকালের রোদ লেগে উজ্জ্বল দেখাল। সে ডানাটা বড় করে মেলে রাখল কিছুক্ষণ, যেন নিজের ওজন পরীক্ষা করছে।
সে কি আসলেই বড় হয়ে উঠছে? শরীরের ভেতর কি শক্তি জমছে? আগের মতো কি সে ছানাদের দলে পড়ে, নাকি মোরগদের মতো শক্ত হয়ে উঠছে?
নক ডানাটা নামিয়ে নিল, একটু নড়েচড়ে দেখল শরীরের ভঙ্গি। একটা নতুন ধরনের আত্মবিশ্বাস অনুভব করল সে।
তারপর আবার ফিরে গেল দলে, মাথা উঁচু করে হাঁটল, খাবারের প্রতিযোগিতায় নামল নতুন উদ্যমে। এখনো সে পুরোপুরি মোরগ হয়নি, কিন্তু খুব শিগগিরই হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:২৭