somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহজাহান

০১ লা আগস্ট, ২০১২ রাত ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বেশ আয়েশী ভঙ্গিতে হুডতোলা রিকশায় চেপে যাচ্ছি আর থিওরি অব রিলেটিভিটির ভয়ংকর সব সুত্র মনে করার চেষ্টা করছি ।আকাশের অবস্থাও তেমন ভালো নেই ।যে কোন সময় বৃষ্টি নামতে পারে ।আকাশের এমন অবস্থায় যে কোন একটা বিষয় নিয়ে ভাবাটাও বেশ বিপদের ।ধরুন রিলেটিভিটি অব টাইম বা টাইম ডাইলেশান নিয়ে ভাবছি । তখন মনে হবে “ এই গেল, এই গেল । ট্রেন বুঝি আজ মিস হয়েই গেল ।” এসময় কাল দীর্ঘায়নের ব্যাপার স্যাপার সব ফালতু মনে হয় ।মেজাজ চরমে উঠার আগেই ভাবলাম একটা গান ধরা দরকার ।পরীক্ষার আগে মন প্রফুল্ল রাখাটাই নিয়ম ।একটা রিলেক্স সংগীত দরকার । “বারান্দায় , আমি আরাম কেদারায় বসে দু’পা নাচাইরে………” ।ভাবছি গানটাকে রিলেক্স সংগীত ঘোষনা করব ।এত কঠিন সাবজেক্টের আগে এমন হালকা রসিকতা মনে আসাতেই আনন্দ ।মেঘ আরো বাড়ছে ।বৃষ্টি হবে, হচ্ছে করতে করতেই শুরু হল ঝুম বৃষ্টি ।কোনমতে রিকশার হুড ফেলে এই যাত্রায় রক্ষা পেলেও ভাবছি রিকশা থেকে নেমে ট্রেনে উঠবো কি করে ।স্টেশনে এসে দেখি কাকপক্ষীও নেই । “ আমি কি তবে ট্রেন মিস করলাম” ।ঘড়িতে টাইম দেকলাম নয়টা দশ ।না ট্রেন এখনো আসেনী ।অবশ্য একটু বৃষ্টি হলেই বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যায় ।এটাও কি রিলেটিভিটির পার্ট !

স্টেশনের একপাশে বাচ্চু ভাইয়ের টং ।বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমার সকালের নাশতার প্রধান দুই যোগানদাতা বাচ্চু ভাইয়ের টং আর মউর দোয়ান । আজ কিছুই খেতে ভালো লাগছেনা । সিগারেট জ্বালিয়ে চায়ের অর্ডার দিলাম ।কিছু কিছু সময় থাকে যখন অমৃতও গরল মনে হয় ।আজ তাই হচ্ছে ।চায়ে চুমুক দিতেই মনে হল এই রকম ফালতু জিনিষ মানুষ খায় ।মনে হচ্ছে অস্থিরতা আরো বাড়ছে ।আরেকটা সিগারেট ধরালাম । নাহ, চোখ বন্ধ করে থাকি কিছুক্ষন ।
“ ভাই, পেপার নিবেন” চোখ খুলে দেখি সাত কি আট বছরের একটা ছেলে সামনে দাড়িয়ে । একমুহূর্ত না ভেবে বললাম “ না ” ।
“ আপনের কি মন খারাপ ।আফা আহে নাই ” ।
“ প্যাটপ্যাট করিস নাতো । যা সামনে থেকে” ।
“ চিন্তা কইরেন না । আফা আইসা পড়ব”
এবার ভালো করে তাকালাম ছেলেটার দিকে । উষ্কখুষ্ক চুল, লাল রংয়ের শার্ট পরা ।চেহারায় একটা মায়ামায়া ছাপ আছে ।
“ভাই আফায় তো অনেক সোন্দর ।আপনে তারে বিয়া করবেন”
“ আপারে তোর ভালো লাগে ”
“হ । আফার চেহারায় অনেক মায়া ।আমার মার মত”
“ কই থাকস তুই ”
“ ওই যে আমাগো লাইগা সেন্টার আছে। পথশিশু সেন্টার । হেইখানে”
“ তোর মা কই থাকে ? ”
“ জানিনা ”
“তোর বাপ ”
“ হেয় মইরা গেছে ”
এত সহজভাবে ছেলেটা এসব বলে দিলো আর আমার মাথায় বজ্রপাতের মত এসে লাগলো ।আমি বলার মত কোন কথাই পাচ্ছিনা ।কিছু একটা বলবো এমন সময় সে বলে উঠলো “বাপ মইরা যাওনের পর মায় একডা বাসায় কাম করতো ।একদিন সকালে ঘুম থেইকা উইঠা দেহি, মায় নাই ।বইসাই আছি, বইসাই আছি । মায় আর আহে না ।হেই যে গেছে, মায় আর ফিরা আহে নাই ।”
কি ভয়ংকর অবস্থা । আমাকে সাগরের মাঝখানে ছোট্ট একটা ভেলা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হল ।আমি তখন কি করবো ? ডানে যাবো না বামে যাবো ? গেলেই বা কি হবে ।এসব চিন্তার জট পাকছে মাথায় ।সাংঘাতিক ।মনে হচ্ছে আমি মিনকোস্কির সময় ব্যাখ্যার t=0 এর আগে চলে যাচ্ছি । যে সময়ে ঘটে যাওয়া বিষয়াবলি এখনো মানুষের অজানা । কি ঘটেছে, তার ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীদের কাছে নেই ।
“ একটা পেপার কিনেন।১০০টা পেপার বেচতে পারলে ৫০ টেকা পামু ।সকাল থেইকা কিছুই খাই নাই”
“ নে ধর । সিঙ্গাড়া খা”
ক্ষুধার্ত শিশু গোগ্রাসে গরম গরম ধোয়া তোলা সিঙ্গাড়া খাচ্ছে । এমন সুন্দর দৃশ্য দেখে মন ভরে গেল ।জিজ্ঞেস করলাম “ নাম কিরে তোর ”
“ মায় কি নাম রাখসিলো ভুইলা গেছি ।তয় একেকজন একেক নামে ডাকে। চাইলে আপনেও একটা নাম দিতে পারেন”
কোন কিছুই না ভেবেই বললাম “যা, তোর নাম শাহ জাহান ”
“ হুনছি এইডা কোন বাদশার নাম”
“ তুই লেখাপড়া করস নাকি? ”
“না ”
“পড়বি । সকালে এই কাম করবি আর বিকেলে পড়বি ”
“ হ । তাইলে তো বালোই অয় ”
পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে কল দিলাম সবুজকে ।তারা পথশিশুদের জন্য চারুলতা নামে একটা স্কুল চালায় ।প্রায় চল্লিশ জন ছিন্নমুল শিশু পড়তে যায় ওখানে ।রিং পড়ছে , কিন্তু নবাবজাদা রিসিভ করছে না ।সময়মতো একজনরেও পাওয়া যায়না ্বোর অভিক ।ফোন দেয়ার আগেই দেখি সে সামনে এসে হাজির ।তাকে শাহজাহানের কথা বললাম ।ওকে ভর্তি করিয়ে দিতে চারুলতায় ।

ট্রেন চলা শুরু করেছে আমি ট্রেনে চেপে যাচ্ছি বিশ্ববিদ্যালয় ।এখন ভাবছি, ছেলেটার নাম শাহ জাহান দিলাম কেন ।কোন ব্যাখ্যা দাড় করাতে পারলাম না ।শাহ জাহান পড়াশোনা করে রাজা বাদশাহ টাইপ কিছু হবে এমনটা আমি ভাবছিনা ।ভাবছি পড়াশোনা করে সে ছোট একটা চাকরি করবে ।তরি একটা পরিবার হবে ।একটা ছেলে, একটা মেয়ে ।হয়তো মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে মেয়ে তাকে বলবে “ বাজান, কও কাইল আমারে বাজার থেইকা লাল ফিতা কিন্না দিবা।” সারাদিন কাজের ক্লান্তি আর রাজ্যের ঘুম ফেলে শাহ জাহান তার মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বলবে “হ। কিন্না দিমু মা ্আয় আমার বুকে শান্তিতে ঘুমা ”


৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×