শুরুর আগে: ব্লগে নাস্তিক আস্তিক বিষয়ে আর লিখবনা বলেই ঠিক করেছি। কারণ সেখানে নাস্তিক গুরুরা গালাগালি শুরু করে। কিন্তু আশা করবো এ টপিকে এধরণের অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটবেনা এবং যারাই এ বিষয়ে আলাপ করবেন তারা সঠিক রেফারেন্স নিয়েই আলাপ করবেন। পুরো টপিক না পড়েই কেউ মন্তব্য করবেননা আশা করি। রেফারেন্স মানে সবকিছুর সলিড প্রমাণ নিয়েই কথা বলবেন। যেহেতু নাস্তিক গুরুরা ধারণা বা বিশ্বাস মানতে চাননা তাই আশা করবো উনারা কোন ধারণা বা বিশ্বাস নিয়ে উনাদের যুক্তি দেখাবেন না। পুরো টপিক না পড়েই কেউ মন্তব্য করবেননা আশা করি।
-------------------------------------------------------------------------------------------
নাস্তিক মানে হচ্ছে তারা স্রষ্টার অস্থিত্বে বিশ্বাসী নন। স্রষ্টার অস্থিত্ব যদি কেউ না মানে তাহলে তার সৃষ্টিতত্ত্ব, তার প্রেরীত নবী রাসুল, তার কিতাব, তার বিধান এবং ইহকাল ও পরকাল মানবেন না এটাই বাস্তবতা।
যাক এটা নাস্তিকদের জন্য একটা বিরাট সুবিধা। যেহেতু তারা পরকাল মানেন না সেহেতু তাদের এজগতে কোন কাজ করতে আর বাধা রইল না। যেহেতু পাপ আর পূন্য বলতেই কোন জিনিষ রইল না সেহেতু ভাল খারাপ সব কিছুর উপরে উঠে নিজের ইচ্ছা মতোই তারা যেকোন কাজ করতে পারেন। এবং করে থাকেন।
আমার প্রশ্ন ভিন্ন জায়গায়।
আপাতত কিছুক্ষনের জন্য ধরে নিলাম সৃষ্টিকর্তা বলতে কেউ নেই। তাহলে আজ থেকে ১৪শত বছর পূর্বে মোহাম্মদ স: নামে একজন ধর্ম প্রচারক যা কিছু প্রচার করেছেন সব কিছুই তার মনগড়া। আল কোরআন নামে যে কিতাবের বানী দিয়ে তিনি সবাইকে ইসলামের পথে ডেকেছেন সবকিছুই তিনি নিজের মন থেকেই বানিয়েছেন এবং এই মনগড়া কাহিনী নিজের এলাকাবাসীর নিকট প্রচার করতে তিনি মৃত্যুর ঝুকি পর্যন্ত নিয়েছেন।
খেয়াল করুন, মাত্র ১৪শত বছর আগের ঘটনা। নবী মোহাম্মদ সা: এর জীবনের ইতিহাস খুব বেশি পুরোন না হওয়াতে উনার জীবনি সবাই জানেন পৃথিবীল যে প্রান্তেই যান উনার জীবনী নিয়ে কারও কাছে দ্বিমত পাবেন না।
আমরা সবাই জানি নবী মোহাম্মদ সা: পড়ালেখা করেন নি। তিনি লিখতে এবং পড়তে জানতেন না। তার ছোটবেলা কেটেছে খুবই কষ্টের সাথে দাইমা হালিমা রা; এর ঘরে। তিনি পাড়ার আর দশটা ছেলের সাথেই মরু পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতেন। তরুন অবস্থায় তিনি চাচার ব্যবসা দেখাশোনা শুরু করেন এবং ব্যবসায়িক কাজে তিনি বিভিন্ন জায়গায় যেতেন। কিন্তু পড়ালেখার কোন সুযোগ তার কখনো হয়নি।
তাহলে মানব জীবন, সৃস্টিতত্ব এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে এমন একটি বই বা কিতাব লেখার জন্য এত বিপুল পরিমাণ জ্ঞান তিনি পেলেন কোথায়? যার অনেকগুলো বিষয় এর আগে কোন বিজ্ঞানীর গবেষনায় প্রকাশ পায়নি এবং অনেক বিষয় বিজ্ঞানের আবিস্কার করতে আরো শত শত বছর লেগে গিয়েছিল।
তাহলে মোহাম্মদ সা: কি একজন বিজ্ঞানী ছিলেন? তিনি তো পড়ালেখায় করেননি। আর কোরআনের বর্ণিত বিজ্ঞানের এতসব বিষয়ে গবেষনার জন্য যতবড় গবেষনাগার প্রয়োজন অতবড় গবেষনাগার আরবেন কোথাও ছিল বলে তো জানিনা।
বিজ্ঞানীরা প্রত্যেকেই বিজ্ঞানের নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের উপর গবেষনা করে থাকেন। কেউ কেউ হতে একই রকমের দুতিনশাখায় ও গবেষনা করেন। কিন্তু একজন বিজ্ঞানী বিজ্ঞানের সবগুলো শাখায় কোন দিন গবেষনা করতে পারেন না।
তাহলে মোহাম্মদ সা: কিতাব লেখার মত এত জ্ঞান কিভাবে পেলেন? কিভাবে তিনি বিজ্ঞানের এতগুলো শাখার আবিস্কৃত এবং অনাবিস্কৃত বিভিন্ন বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছেছেন? এটি কি আসলেই তিনি নিজে লিখেছেন? এটি কি একটি ঐশী গ্রন্থ নয়?
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আসুন একটু সংক্ষেপে আলোকপাত করি কুরআনে কি কি আছে।
১. কোরআনের চ্যালেন্জ:
আল্লাহ বলেনঃ
‘আমি আমার বান্দার প্রতি যা নাযিল করেছি, এ বিষয়ে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে,তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে আস।আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সাহায্যকারীদেরকেও সাথে নাও- যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।আর যদি তা না পার,অবশ্য তোমরা তা কখনও পারবেনা,তাহলে,সে দোযখের আগুন থেকে পানা চাও,যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। সূরা বাকারা-২৩-২৪
কোরআন তার যে কোন একটি মাত্র সূরার মত অনুরূপ আরেকটি সূরা তৈরির চ্যালেঞ্জ দিয়েছে। কোরআনে বহুবার একই ধরণের চ্যালেঞ্জের পুনরাবৃত্তিও হয়েছে। বর্তমান কাল পর্যন্ত কোরআনের সূরার মত সৌন্দর্য, অলংকার, গভীরতা ও অর্থের দিক থেকে সমমানের আরেকটি সূরা চ্যালেঞ্জ অপূরণকৃত রয়ে গেছে।বর্তমান যুগের কোন লোক পৃথিবী চেপ্টা এ মর্মে সর্বোত্তম কাব্যিক ভঙ্গীতে কোন ধর্মীয় পুস্তকের বক্তব্যকে মেনে নেবে না। কেননা, আমরা যে যুগে বাস করছি, সে যুগে মানবিক কারন, যুক্তি ও বিজ্ঞানকে প্রাধান্য দেয়া হয়। কোরআনের অতি চমকপ্রদ ও সুন্দর ভাষার জন্য অনেকেই একে ঐশী গ্রন্থ হিসাবে মেনে নিতে চাইবে না। কোন ঐশী গ্রন্থের দাবীদার কে অবশ্যই যুক্তি ও কারণের শক্তির দিক থেকে ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
প্রখ্যাত নোবেল পুরস্কার বিজয়ী পদার্থ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনেষ্টাইন বলেছেনঃ বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম অন্ধ। আসুন আমরা কোরআন নিয়ে গবেষনা চালাই যে,তা বজ্ঞানের সাথে সামজ্ঞস্যপূর্ন না অসামজ্ঞস্যপূন্য। কোরআন কোন বিজ্ঞান গ্রন্থ নয়, বরং নিদর্শন গ্রন্থ। এতে ৬ হাজার নিদর্শন (আয়াত) আছে। এক হাজারেরও বেশী আয়াত বিজ্ঞানের মূল বিষয় বসতু নিয়ে আলোচনা করেছে।
আমরা সকলে জানি যে, বিজ্ঞান অনেক সময় সিদ্বান্ত পরিবর্তন করে। এই লেখায় আমি কেবল বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত সত্য (Fact) নিয়ে আলোচনা করবো, কল্পনা বা ধারনার উপর নির্ভরশীল তত্ত্ব নয়, যা প্রমানিত হয়নি।
২. জ্যোতিষ শাস্ত্র
বিশ্ব সৃষ্টি ও মহা বিস্ফোরণ (বিগ ব্যাংগ)
বিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে জ্যোতিবিদের প্রদত্ত ব্যাখ্যা ব্যাপকহারে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে এবং দীর্ঘ সময় ধরে নভোচারী ও জ্যোতিবিদদের সংগৃহীত ও পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষামূলক উপাত্ত দ্বারাও তা সমর্থিত হয়েছে। মহা বিস্ফোরণ তত্ত অনুযায়ী মহাবিশ্ব ছিল প্রথমে একটি বিশাল নীহারিকা। পরে ২য় পর্যায়ে তাতে এক বিরাট বিস্ফোরণ ঘটে। ফলে ছায়া পথ তৈরী হয়। এগুলো পরে তারকা, গ্রহ, সূর্য ও চন্দ্র ইত্যাদিতে রুপান্তরিত হয়। বিশ্বের সূচনা বিষ্ময়কর এবং দৈবক্রমে তা ঘটার সম্ভাবনা শূন্য পর্যায়ে।
পবিত্র কোরআন মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে নিম্নোক্ত আয়াতে বলেছে,
“কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মূখ বন্ধ ছিল, তারপর আমি ঊভয়কে খুলে দিলাম।” - সূরা আম্বিয়া-৩০
ছায়াপথ সৃষ্টির আগে প্রাথমিক গ্যাস পিন্ড
বিজ্ঞানীরা একমত যে ,মহা বিশ্বে ছায়াপথ তৈরীর আগে আকাশ সম্পর্কিত পদার্থগুলো গ্যাস জাতীয় জিনিস ছিল।সংক্ষেপে বলতে গেলে, বিপুল সংখ্যক গ্যাসজাতীয় পদার্থ কিংবা মেঘ, ছায়া পথ তৈরীর আগে বিদ্যমান ছিল।আকাশ সম্পর্কিত প্রাথমিক পদার্থকে গ্যাস অপেক্ষা ধুঁয়া বলা বেশী সঙ্গত।কোরআন মজীদ ধুঁয়া দ্বারা মহাবিশ্ব সৃষ্টির ঐ অবস্থার প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছে। আল্লাহ বলেনঃ
“তার পর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা কিছু ধূঁম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবী বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল আমরা সেচ্ছায় আসলাম। - সূরা হা-মীম সাজদাহ-১১
এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, এ অবস্থায় মহাবিস্ফোরণেরই ফল এবং মহানবী মোহাম্মদ (ছঃ) এর আগে এ বিষয়টি কারো জানা ছিল না।তাহলে প্রশ্ন জাগে, এ জ্ঞানের উৎস কি ?
পৃথিবীর আকার গোল
প্রথম যুগে মানুষ বিশ্বাস করত যে, পৃথিবী চেপ্টা ছিল।বহু শতাব্দী ব্যাপী মানুষ দূরে সফরে যেতে ভয় পেত কি জানি পৃথিবীর কিনারা থেকে পড়ে যায় কিনা।স্যার ফ্রনকিস ড্র্যাক প্রথম প্রমান করেন যে, পৃথিবী গোলাকার । তিনি ১৫৯৭ সনে পৃথিবীর চারপাশে নৌভ্রমন করেন।আমরা দিবা রাত্রির আবর্তনের ব্যাপারে কোরআনের নিন্মোক্ত আয়াতটি বিবেচনা করতে পারি।
“আপনি কি দেখেনা আল্লাহ রাতকে দিনের মধ্যে এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান? -সূরা লোকমান - ২৯
অর্থাৎ রাত আস্তে আস্তে এবং ক্রমান্বয়ে দিনে রূপান্তরিত হয়, অনুরূপভাবে দিন ও আস্তে আস্তে এবং ক্রমান্বয়ে রাতে পরিবর্তিত হয়। পৃথিবী গোলাকৃতির হলেই কেবল এ ঘটনা ঘটতে পারে ।
নিম্নের আয়াত দ্বারাও পৃথিবী যে গোলাকার তা বুঝা যায়্ আল্লাহ বলেনঃ
তিনি আসমান ও জামিন কে সৃষ্টি করেছেন যথার্থভাবে। তিনি রাতকে দিন দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং রাত দ্বারা আচ্ছাদিত করেন।” সূরা যোমর -৫
আয়াতে ব্যবহৃত (আরবী) শব্দের অর্থ হলো কুন্ডলী পাকানো বা কোন জিনিসকে প্যাঁচানো । যেমন করে মাথায় পাগড়ী প্যাঁচানো হয়। রাত ও দিনের আবর্তন তখনই সম্ভব যখন পৃথিবী গোলাকার হয়।
পৃথিবী বলের মত গোলাকার নয়, বরং মেরুকেন্দ্রিক চেপ্টা।
নিম্নের আয়াতে পৃথিবীর আকৃতির বর্ননা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
“তিনি পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন।” সূরা নাযিআত -৩০
আরবী শব্দ এর দুটো অর্থ আছে। একটি অর্থ হলো উঠপাখির ডিম।উটপাখীর ডিমের আকৃতির মতই পৃথিবীর আকৃতি মেরুকেন্দ্রিক চেপ্টা । অন্য অর্থ হল ‘সম্প্রসারিত করা’। উভই অর্থই বিশুদ্ধ।
কোরআন এভাবেই পৃথিবীর আকৃতি বিশুদ্ধভাবে বর্ণনা করেছে।অথচ যখন কোরআন যখন নাযিল হয় তখন প্রচলিত ধারনা ছিল পৃথিবী হচ্ছে চেপ্টা।
চাঁদের আলো হচ্ছে প্রতিফলিত আলো
আগের সভ্যতা গুলোর ধারণা ছিল,চাঁদের নিজস্ব আলো আছে।কিন্তু বিজ্ঞান বর্তমানে আমাদেরকে বলে যে,চাঁদের আলো হচ্ছে প্রতিফলিত আলো।এ সত্যটি কোরআন আমাদেরকে আজ থেকে ১৪শ বছর আগে বলেছে।আল্লাহ বলেনঃ
“কল্যাণময় তিনি, যিনি নভোমণ্ডলকে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে রেখেছেন সূর্য ও দীপ্তিময় চন্দ্র।”- সূরা ফুরকান-৬১
আরবীতে সূর্যকে () বলে।কোরআনে (আরবী )শব্দ দ্বারাও সূর্য বুঝানো হয়েছে।এর অর্থ হল,বাতি বা র্মশাল।অন্য জায়গায় ,সূর্যকে (আরবী) উল্লেখ করা হয়েছে।এর অর্থ হল ‘জ্বলন্ত কিরণোজ্জল বাতি বা মশাল।’অন্য আরেক জায়গায়, একই অর্থ বুঝানোর জন্য (আরবী ) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।এর অর্থ হল ‘কিরণোজ্জল সূর্য ’।এই তিনটি বর্ণনাই সূর্যের উপযোগী।কেননা,সূর্য নিজ দহনক্রিয়ায় ব্যাপক তাপ ও আলো উৎপাদন করে।
চাঁদের আরবী প্রতিশব্দ হল (আরবী ) কোরআন চাঁদকে (আরবী ) বলেছে।এর অর্থ হল‘ স্নিগ্ধ আলোদানকারী।’অর্থাৎ প্রতিফলিত আলো দেয়।কোরআনের বর্ণনা চাঁদের আসল প্রকৃতির সাথে খাপ খায়।চাঁদ নিজ থেকে আলো দেয় না।বরং তা এমন এক নিষ্ক্রীয় জিনিস যার উপর সূর্যের আলোর প্রতিবিম্ব ঘটে।কোরআনে কখনও চাঁদকে (আরবী )কিংবা (আরবী ) বলা হয়নি এবং সূর্যকেও (আরবী )কিংবা (আরবী ) বলা হয়নি।
এর দ্বারা বুঝা যায় যে,কোরআন সূর্য ও চাঁদের আলোর মধ্যকার পার্থক্যকে স্বীকার করে।
নিম্নের আয়াত,চাঁদ ওসূর্যের আলোর প্রকৃতি উল্লেখ করেছে।আল্লাহ বলেনঃ
“তিনিই সত্তা যিনি সূর্যকে কিরণোজ্জল এবং চাঁদকে স্নিন্ধ আলোয় আলোকিত করেছেন।”সুরা ইউনুস-৫
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো বলেনঃ
“তোমরা কি লক্ষ্য করনা যে,আল্লাহ কিভাবে সাত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন,সেখানে চাঁদকে রেখেছেন স্নিন্ধ আলোরূপে এবং সূর্যকে রেখেছেন প্রদীপরূপে ?”- সুরা নূহ-১৫-১৬
মহান কোরআন এবং আধুনিক বিজ্ঞান চাঁদ ও সূর্যের আলোর ব্যবধানের ব্যাপারে অভিন্ন কথা বলে।
সূর্যের আবর্তন
দীর্ঘদিন ব্যাপী ইউরোপীয় দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করত যে,পৃথীবি মহাবিশ্বের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং সূর্য সহ অন্যান্য জিনিসগুলো একে কেন্দ্র করে চারদিকে ঘুরে।এ ভূকেন্দ্রিক ধারণা,পাশ্চাত্যে খৃষ্টপৃর্ব ২য় শতাব্দীতে টলেমীর যুগ থেকে বিদ্যামান ছিল।১৫১২ খৃঃ নিকোলাস কোপারনিকাস গ্রহের গতি আছে মর্মে- সূর্যকেন্দ্রিক তত্ব দেন।এই তত্বে বলা হয়,সৌরজগতের কেন্দবিন্দু- সূর্য গতিহীন।কিন্তু অন্যান্য গ্রহগুলো একে কেন্দ্র করে চারদিকে ঘুরে।
১৬০৯ খৃঃ জার্মান বিজ্ঞানী ইউহান্নাস কেপলার ‘Astronomia Nova’নামক একটি বই প্রকাশ করেন।তিনি তাতে মত প্রকাশ করেন যে, গ্রহগুলো শুধুমাত্র সূর্যের চারদিকে ডিম্বাকৃতির কক্ষপথেই চলে না,বরং সেগুলো নিজ নিজ কক্ষপথে অনিয়মিত গতিতে আবর্তিত হয়।এ জ্ঞানের আলোকে ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের পক্ষে সৌরজগতের বহু বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব হয়েছে,যার মধ্যে দিন রাতের বিষয়টি অন্যতম।
এসকল আবিষ্কারের পর ধারনা করা হয় যে, সূর্য স্থিতিশীল যা পৃথিবীর মত নিজ কক্ষপথে আবর্তন করে না।
আমরা এখন কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটি ব্যাখ্যা করবো।আল্লাহ বলেনঃ
“তিনি সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন এবং চাঁদ-সূর্য। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।” (সূরা আম্বিয়া -৩৩)
এ আয়াতে (আরবী)শব্দটি ব্যবহূত হয়েছে যা (আরবী) থেকে এসেছে। শাব্দিক অর্থ সাঁতার কাটা। এ শব্দটি কোন জিনিসের গতি বুঝানোর জন্য ব্যবহূত হয়। আপনি যমীনে কোন ব্যাক্তির জন্য এ শব্দটি ব্যবহার করলে এর অর্থ এটা নয় যে, তিনি গড়াগড়ি দিচ্ছেন। বরং এর অর্থ হবে তিনি হাটেন বা দৌড়ান।আর পানিতে অবস্থানকারী কোন ব্যক্তির জন্য ব্যবহার করলে এর অর্থ তিনি ‘ভাসেন’ হবে না, বরং এর অর্থ হবে, তিনি সাঁতার কাটেন।
অনুরূপভাবে আপনি যদি শব্দটি আকাশ সম্পকির্ত কোন জিনিস,যেমন সূর্য সম্পর্কে ব্যবহার করেন,তখন এর অর্থ শুধু মহাশূন্যে উড়া নয়,বরং এর অর্থ হল,তা মহাশূন্যে আবর্তিত হয়। স্কুলের অধিকাংশ পাঠ্যপুস্তকে এ সত্যটি উল্লেখ আছে যে,সূর্য নিজ কক্ষপথে ঘুরে। সূর্যের নিজ কক্ষে আবর্তনকে বুঝার জন্য টেবিলের উপরে সূর্যের প্রতিকৃতি প্রদর্শন করা দরকার। চোখ বাঁধা না হলে যে কেউ সূর্যের প্রতিকৃতিটি পরীক্ষা করতে পারে। দেখা গেছে,সূর্যের রয়েছে অবস্থান স্থলসমূহ যা প্রতি ২৫দিনে একবার আবর্তন করে থাকে। অর্থাৎ নিজ কক্ষপথে আবর্তন করতে সূর্যের প্রায় ২৫ দিন সময় লাগে।
সূর্য প্রতি সেকেন্ডে মহাশূনে ২৪০ কিলোমিটার গতিতে চলে। আমাদের ছায়াপথের কেন্দ্রে একবার তার আবর্তন করতে ২০০ মিলিয়ন বছর সময় লাগে।
আল্লাহ কোরআন মজীদে বলেনঃ
“সূর্য নাগার পেতে পারে না চাঁদের এবং রাত আগে চলে না দিনের। প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে।” সূরা ইয়াসিন -৪০
এ আয়াতে এমন সব বৈজ্ঞানিক সত্য রয়েছে, যা মাত্র সম্প্রতি আধুনিক জ্যোতিষ শাস্ত্র আবিষ্কার করেছে। সেগুলো হল,চাঁদ ও সূর্যের স্বতন্ত্র কক্ষপথ আছে এবং সেগুলো নিজস্ব গতিতে মহাশূন্যে ভ্রমন করছে।
সূর্য সৌরজগতকে নিয়ে যে নির্দ্দিষ্ট স্থানের দিকে চলছে,সে স্থানটি আধুনিক জ্যোতিষশাস্ত্র সুনির্দ্দিষ্টভাবে আবিষ্কার করেছে। এর নামকরণ করা হয়েছে সৌর শৃঙ্গ বা (Solar Apex )। সৌরজগত মহাশূন্যে যে দিকে ধাবিত হয়,সে দিকটির অবস্থান বর্তমানে যথার্থ ও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং সেটি হল বৃহদাকারের এক গ্রুপ তারকা। Consellation of Hercules(Alpha Lyrae )
চাঁদ নিজ কক্ষপথে অতটুকু সময়ে একবার আবর্তন করে,পৃথিবীর চারদিক ঘুরতে যতটুকু সময় লাগে। একবার ঘুরে আসতে তার সাড়ে ২৯ দিন সময় লাগে।
কোরআনের আয়াতের বৈজ্ঞানিক যথার্থতা সম্পর্কে যে কেউ আশ্চর্য না হয়ে পারেনা। আমাদের কি এ প্রশ্নের উপর চিন্তা করা উচিত নয় যে,কোরআনের জ্ঞানের উৎস কি?
সূর্য নিষ্প্রভ হয়ে যাবে
বিগত ৫ বিলিয়ন বছর ব্যাপী রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সূর্যের দেহে তাপ সৃষ্টি হচ্ছে। ভবিষ্যতে এক সময়ে এর অবসান ঘটবে এবং তখন সূর্য নিষ্প্রভ হয়ে যাবে। ফলে পৃথিবীর সকল অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে।সুর্যের অস্থায়িত্ব সম্পর্কে আল্লাহ কোরআন মজীদে বলেনঃ
“সূর্য তার নির্দ্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশ্যালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর নিয়ন্ত্রণ” (সূরা ইয়াসিন-৩৮) অনূরূপ বর্ণনা সূরা রাদ- এর ২নং আয়াত, সূরা ফাতের এর ১৩নং আয়াত, সূরা যোমারের ৫নং আয়াত ও ২১নং আয়াতে আছে।
এখানে উল্লেখিত (আরবী)শব্দটির অর্থ হল‘নির্দ্দিষ্ট স্থান’ বা ‘সময়’। কোরআন বলেছে,সূর্য একটা নির্ধারিত স্থানের দিকে আবর্তিত হচ্ছে যা একটা নির্দ্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এর অন্য অর্থ হল,একদিন তার অবসান ঘটবে। এ মর্মে আল্লাহ বলেন (আরবী) ‘যখন সূর্য নিষ্প্রভ হয়ে যাবে। (সূরা তাকবীর-১)সূর্যের নিষ্প্রভ হওয়া কেয়ামতের লক্ষণ।
মহাশূন্যে বস্তুর অস্তিত্ব
সুসংগঠিত সৌরজগতের বাইরের স্থানকে প্রথমে শুণ্য মনে করা হত। জ্যোতির্বিদরা পরবর্তীতে মহাশুন্যে বস্তুর সেতু আবিষ্কার করেন। বস্তুর সেতুকে প্লাজমা বলে,যাতে পারমানবিক গ্যাস রয়েছে এবং তাতে সমান সংখ্যক মুক্ত ইলেকট্রন ও ইতিবাচক পরমাণু আছে। কোন কোন সময় প্লাজমাকে বস্তুর ৪র্থ অবস্থা বলে। অন্য তিনটি অবস্থা হল,কঠিন তরল এবং বায়বীয়। কোরআন নিম্নের আয়াতে মহাশুন্যের ঐ বস্তুর অস্তিত্ব সম্পর্কে কথা বলেছে। আল্লাহ বলেনঃ (আরবী)
“তিনি সে সত্তা যিনি আসমান ও যমীন এবং এ দুয়ের মাঝে অবস্থিত সকল সৃষ্টি করেছেন। সূরা ফোরকান-৫৯
১৪০০ বছর আগে মহাশূন্যে সৌর বস্তুর জ্ঞান অস্তিত্বের জ্ঞান সম্পর্কে বললে যে কেউ তা উপহাস করতে পারে।
সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্ব
১৯২৫খৃঃ জ্যোতির্বিদ এডউইন হাবেল পর্যবেক্ষণমূলক প্রমাণের সাহায্যে বলেছেন,প্রতিটি ছায়াপথ অন্য ছায়াপথ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলে। এর অপর অর্থ হল,মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ এখন বৈজ্ঞানিক সত্য। কোরআন মহাবিশ্বের প্রকৃতি সম্পর্কে একই কথা বলেছে।আল্লাহ বলেনঃ
“আমি নিজ ক্ষমতা বলে আকাশ নির্মাণ করেছি এবং আমি অবশ্যই এর সম্প্রসারণকারী।”সূরা যারিয়াত-৪৭
আরবী শব্দ (আরবী) এর বিশুদ্ধ অনুবাদ হল,‘সম্প্রসারণকারী।’ এটা মহাবিশ্বের ব্যাপক সম্প্রসারণশীলতার প্রতি ইঙ্গিতবাহী।
প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ স্টিফেন হকিং তার A Brief History of time বইতে লিখেছেন মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ সম্পর্কিত আবিষ্কার বিংশ শতাব্দীর মহান বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব। মানুষ কর্তৃক টেলিষ্কোপ আবিষ্কারের পূর্বে কোরআন মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের কথা জানিয়েছে।
কেউ প্রশ্ন করতে পারে যে, আরবরা যেহেতু জ্যোতির্বিদ্যায় অগ্রসর ছিল, সেহেতু কোরআনে জ্যোতিবিজ্ঞান সম্পর্কিত সত্যের উল্লেখ আশ্চর্যের বিষয় নয়। জ্যোতির্বিদ্যায় আরবদের অগ্রসরতার প্রতি তাদের স্বীকৃতি সত্য বটে। কিন্তু জ্যোতির্বিদ্যায় আরবদের অগ্রসরতার কয়েক শতাব্দী পূর্বে কোরআন নাযিল হয়েছিল। অধিকন্তু আরবরা তাদের বৈজ্ঞানিক শৌর্যবীর্যের সময়ে ও উল্লিখিত বিগ ব্যাং -এর মাধ্যমে মহাবিশ্বের অস্তিত্ব সম্পর্কে কিছু জানত না। জ্যোতির্বিদ্যার অগ্রগতির কারণে কোরআনে বর্ণিত বৈজ্ঞানিক সত্যগুলোতে আরবদের কোন অবদান ছিল না। বরং বিপরীতটাই সত্য। আর তা হল,তারা জ্যোতির্বিদ্যায় এজন্য অগ্রগতি অর্জন করেছে যে, কোরআনে জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে আলোচনা স্থান পেয়েছে।
৩.পদার্থ বিজ্ঞান
অণূকে বিভক্ত করা যায়ঃ প্রাচীন যুগে ‘অণুতত্ব’ নামে একটি তত্ব ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে।২৩০০ বছর আগে, গ্রীকদেশীয় এ তত্বটি যিনি দেন,তার নাম,Democritus।ডেমোক্রিটাস ও তার পরবর্তী যুগের লোকেরা মনে করত যে,বস্তুর সর্বাধিক ক্ষুদ্র একক হচ্ছে,অণু।প্রাচীন আরবরাও তা বিশ্বাস করত।আরবী শব্দ (আরবী) এর সাধারণ অর্থ হচ্ছে,অণু।সম্প্রতি,আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে যে, বিভক্ত করা যায়।অণুকে বিভক্ত করার বিষয়টি বিংশ শতাব্দীর আবিষ্কার।আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে এ শব্দটি আরবদের কাছেও ছিল অসাধারণ।কেননা,কেউ (আরবী )শব্দের সীমাবদ্ধ অর্থের গতি অতিক্রম করতে পারেনি।কোরআনের নিম্নের আয়াতটি (আরবী ) শব্দের এই সীমা স্বীকার করেনা।আল্লাহ বলেনঃ
“কাফেররা বলে,আমাদের উপর কেয়ামত আসবে না।বলুন,কেন আসবেনা? আমার প্রতিপালকের শপথ,অবশ্যই আসবে।তিনি অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত।আসমান ও যমীনে অণু পরিমাণ কিংবা তা থেকে ক্ষুদ্র ও বড় কোন কিছুই তার অগোচরে নয়।সমস্তই আছে সুষ্পষ্ট কিতাবে।”( সূরা সাবা-৩)
অনুরূপ বর্ণনা সূরা ইউসুফের ৬১নং আয়াতেও আছে।
এ আয়াত আল্লাহর সর্বজ্ঞান এবং প্রকাশ্য ও গোপন সকল কিছু সম্পর্কে অবগতির কথা উল্লেখ আছে।আয়াত আরো বলা হয়েছে,আল্লহ অণু অপেক্ষা ছোট বড় সকল কিছু সম্পর্কে জ্ঞাত।আয়াত পরিষ্কার বলেছে যে, কোন জিনিস অণু অপেক্ষাও ক্ষুদ্র আছে।অণু অপেক্ষা ক্ষুদ্র জিনিসের অস্তিত্ব আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কার।
৪.পানি বিজ্ঞান
পানি চক্রঃ
১৫৮০ খৃঃ বর্ণার্ড পলিসি সর্বপ্রথম বর্তমান যুগের পানি চক্র সম্পর্কে আলোচনা করেন।তিনি সাগর থেকে বাষ্পাকারে পানির উড়ে যাওয়া এবং পরে ঠান্ডা হয়ে মেঘে পরিণত হওয়ার বিষয়ে মত প্রকাশ করেন।মেঘমালা সাগর থেকে দূরবর্তী ভূখন্ডের উপর ঘনীভূত হয়ে পরে বৃষ্টি আকারে নীচে পতিত হয়।বৃষ্টির পানি খাল-বিল ও নদী-নালায় জড় হয়ে অব্যাহত নিয়মে সাগরে প্রবাহিত হয়।খৃষ্টপূর্ব ৭ শতাব্দী আগে,মিলেটাসের থেলসের মতে সাগরের উপরিভাগের ছিঁটানো পানি কণাকে ধারণকারী বাতাস, ভূখন্ডে তা বৃষ্টি আকারে ছড়িয়ে দেয়।
আগের যুগের লোকেরা ভূগর্ভস্থ পানির উৎস সম্পর্কে জানতনা।তারা ভাবত যে,সাগরের পানি দমকা বাতাসের মাধ্যমে সজোরে ভূখন্ডে এসে পতিত হয়।তারা আরও বিশ্বাস করত যে,গোপন পথে কিংবা গভীর জলরাশি থেকে পানি পুনরায় ফিরে আসে যা সাগরের সাথে জড়িত।প্লেটোর যুগ থেকে এটাকে ‘তারতারুস’ বলা হত।এমন কি ১৮শ শতাব্দীর বিখ্যাত চিন্তাবিদ ডেস কার্টেজও এমত পোষণ করতেন।১৯শতকে এরিষ্টেটলের তত্ব সর্বত্র বিদ্যমান ছিল।ঐ তত্বে বলা হয় যে, পাহাড়ের ঠান্ডা গভীর গুহায় পানি ঘনীভূত হয় এবং মাটির নীচ দিয়ে প্রবাহিত হ্রদ ঝর্ণাগুলোকে পানি সরবরাহ করে।বর্তমান যুগে আমরা জানতে পেরেছি যে, বৃষ্টির পানি মাটির ফাটল দিয়ে ভেতরে চুইয়ে পড়ার কারণে ঐ পানি পাওয়া যায়।
একথাই কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতে এভাবে বলা হয়েছেঃ
“তুমি কি দেখনি যে,আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, তারপর সে পানি যমীনের ঝর্ণাসমূহে প্রবাহিত করেছেন,এর দ্বারা বিভিন্ন রংয়ের ফসল উৎপন্ন করেন?- সূরা যোমার -২১
তিনি আরো বলেনঃ
“তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন এবং মৃত্যুর পর ভূমির পূনরুজ্জীবন করেন।নিশ্চয়ই এতে, বুদ্ধিমান লোকদের জন্য রয়েছে নিদর্শনাবলী।” (সূরা আর রুম -২৪ )
আল্লাহ বলেনঃ
“আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে থাকি পরিমাণ মত, তারপর তাকে যমীনে সংরক্ষণ করি এবং আমি তা অপসারণও করতে সক্ষম। -সূরা আল মুমিনূন -১৮
১৪০০ বছর আগের অন্য কোর বই পানি চক্রের এরূপ নিখুঁত বর্ণনা দেয়নি।
বাষ্পে পরিণত হওয়া
পানি বাষ্প হয়ে আকাশে উঠে।কোরআন এ সত্য তুলে ধরে বলেছে (আরবী) “শপথ চক্রশীল আকাশের ।” (সূরা আত - তারেক -১১ ) পানি চক্রও এর মধ্যে শামিল।
বৃষ্টিগর্ভ বাতাস
আল্লাহ বলেনঃ
“আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ু পরিচালনা করি,তারপর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি ,এরপর তোমাদেরকে তা পান করাই।”সূরা হিজর ২২
এখানে উল্লেখিত (আরবী ) শব্দটি (আরবী )এর বহুবচন ।এর অর্থ হল গর্ভবতীকারী।এখানে এর ব্যাখ্যা হচ্ছে,বাতাস মেঘমালাকে একসাথে ধাক্কা দিয়ে ঘনীভূত করে।যার ফলে আকাশে বিদ্যুৎ চমকায় এবং পরে বৃষ্টি বর্ষিত হয়।
কোরআনের নিম্নের আয়াতেও অনুরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়ঃ
“তুমি কি দেখনা যে, আল্লাহ মেঘমালাকে সঞ্চারিত করেন,তারপর তাকে পুঞ্জীভূত করেন,অতঃপর তাকে স্তরে স্তরে রাখেন,তারপর তুমি দেখ যে, তার মধ্য থেকে বারিধারা নির্গত হয়। তিনি আকাশস্থিত শিলাস্তুপ থেকে শিলা বর্ষণ করেন এবং তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা,তা অন্যদিকে ফিরিয়ে দেন।তার বিদ্যুত ঝলক দৃষ্টি শক্তিকে যেন বিলীন করে দিতে চায়।” সূরা আননূর -৪৩
আল্লাহ আরো বলেনঃ
“তিনি আল্লাহ ,যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর তা মেঘমালাকে সঞ্চারিত করে।অতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে স্তরে স্তরে রাখেন।এরপর তুমি দেখতে পাও তার মধ্য থেকে নির্গত হয় বৃষ্টিধারা।তিনি বান্দাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা পৌঁছান,তখন তারা আনন্দিত হয়।”- সূরা আর রুম-৪৮
পানি বিজ্ঞানের আধুনিক উপায় এই বিষয়ে কোরআনের বর্ণনার সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ্য।কোরআন মজীদের নিম্নোক্ত সূরা সমূহেও পানি চক্র সম্পর্কে উল্লেখ আছে।
সূরা আরাফ -৫৭; সূরা রাদ -১৭; সূরা ফোরকান -৪৮-৪৯; সূরা ফাতির -৯; সূরা ইয়াসিন -৩; সূরা জাসিয়া-৫; সূরা আল ক্কাক -৯-১১; সূরা ওয়াকেয়া- ৬৮-৭০; এবং সূরা আল মূলক -৩০।
৫.ভূতত্ব বিজ্ঞান
পাহাড় - পর্বতসমূহ তাঁবুর পেরেকের মত
ভূতত্ব বিদ্যায় ভাজ করার বিষয়টি সম্প্রতি আবিষ্কৃত সত্য এবং পাহাড় - পর্বত সৃষ্টির পেছনে ভাঁজ করার বিষয়টি কার্যকর।আমরা যে ভূপৃষ্ঠে বাস করি তা শক্ত ছালের মত।পক্ষান্তরে এর গভীর স্তরগুলো গরম ও তরল যা কোন প্রাণী বাস করার উপযোগী নয়।এটা জানা কথা যে, পাহাড় - পর্বতের স্থিতিশীলতার সম্পর্ক ভাঁজ করার ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত।কেননা ভাঁজ করার ফলেই পাহাড় - পর্বতের ভিত্তি তৈরি হয়েছে।
ভূতত্ববিদরা বলেন যে, পৃথিবীর ব্যাসার্ধ হল,৬,০৩৫ কিলোমিটার।আর আমরা যে ভূপৃষ্ঠে বাস করি তা বেশী পাতলা যার পারিসর ২-৩৫ কিলোমিটার।যেহেতু,ভূপৃষ্ঠ পাতলা,তাই তার নড়ার সম্ভাবনা বেশী।পাহাড় গুলো খুটি কিংবা তাঁবুর পেরেকের মত কাজ করে যা ভূপৃষ্ঠকে স্থিতিশীল রাখে।কোরআন হুবহু এরূপ কথাই বলেছে।
আল্লাহ বলেনঃ
“আমরা কি যমীনকে বিছানা এবং পাহাড়কে পেরেক লোহা বানাইনি?” -সূরা আন নাবা- ৬-৭
(আরবী) এগুলো হল,ভৌগলিক ভাঁজের ভিত্তি।‘Earth’নামক একটি বই বিশ্বের বহু বিশ্বদ্যালয়ে ভূ-তত্ব বিদ্যার রেফারেন্স বই হিসেবে গণ্য হয়।ঐ বইয়ের একজন প্রখ্যাত লেখক হলেন ডঃ ফ্রাস্ক প্রেস।তিনি ১২ বছর ব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান একাডেমীর প্রেসিডেন্ট এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিম্মি কার্টরের বিজ্ঞান উপদেষ্টা ছিলেন।ঐ বইতে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে,পাহাড় হচ্ছে গোঁজ বা পেরেকের আকৃতি বিশিষ্ট এবং তা সকল কিছুর একটা ক্ষুদ্র অংশ মাত্র যার মূল মাটির গভীরে প্রোথিত।ডঃ প্রেসের মতে, পাহাড় ভূপৃষ্টের স্থিতিশীলতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কোরআন মজীদ পাহাড়ের কার্যক্রম পরিষ্কার ভাবে উল্লেখ করে বলেছে, তা পৃথিবীকে কম্পন ও নড়া থেকে রক্ষা করে।আল্লাহ বলেনঃ
“আমি পৃথিবীতে ভারী বোঝা রেখে দিয়েছি যাতে তাদেরকে নিয়ে পৃথিবী ঝুঁকে না পড়ে ।”সূরা আল আম্বিয়া -৩১
অনুরূপ বর্ণনা সূরা লোকমানের ১০নং আয়াত এবং সূরা নাহলের ১৫নং আয়াতেও আছে।
কোরআনের বর্ণনা আধূনিক বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্ণ সাদৃশ্যপূর্ণ।
পাহাড় দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত
ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ বহু শক্ত প্লেটে বিভক্ত এবং এর ঘনত্ব হচ্ছে ১০০কিলোমিটার। প্লেটগুলো আংশিক গলিত অঞ্চলে ভাসমান,যাকে Aesthenosphere বলে।
প্লেটের সীমানে- পাহাড়গুলো অবস্থিত।ভূপৃষ্ঠের ত্বক সাগরের ৫ কিলোমিটার নীচ পর্যন্ত ঘন।প্রায় ৩৫ কিলোমিটার ঘন নীচু প্লেট হচ্ছে মহাদেশের উপরিভাগ এবং প্রায় ৮০ কিলোমিটার ঘন নীচুতে বিশাল পাহাড়ের পরিসর।এগুলো পাহাড়ের শক্তিশালী ভিত্তি।কোরআন নিম্নের আয়াতে পাহাড়ের ঐ শক্ত ভিত্তি কথা উল্লেখ করেছে।
‘তিনি পাহাড়কে মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।সূরা নাযিয়াত -৩২
কোরআনের সূরা গাশিয়ার ১৯নং আয়াতেও অনুরূপ বক্তব্য এসেছে।
পাহাড়ের গঠন সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের বর্ণনা ভূতত্ব বিদ্যার সাথে পুরো মিলে যায়।
৬.মহাসাগর
মিষ্টি ও লবণাক্ত পানির মধ্যে অন্তরায়
এমর্মে আল্লাহ কোরআন মজীদে বলেনঃ
“তিনি পাশাপাশি দু’সাগর প্রবাহিত করেছেন উভয়ের মাঝে রয়েছে অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করেনা।”সূরা আর রাহমান -১৯-২০
আরবী ভাষার (আরবী )মানে ,আড়াল বা অন্তরায়।অবশ্য এটা কোন দৈহিক অন্তরায় নয়।(আরবী )শব্দের অর্থ হল,তারা উভয়ে (দু’সাগর )এক সাথে মিশে একাকার হয়ে যায়।’প্রাথমিক যুগের তাফসীরকারকরা পানির দু’টো ধারার দু’টো বিপরীতমুখী অর্থের ব্যাখ্যা করতে অপারগ ছিলেন।অর্থাৎ কিভাবে তারা মিশে একাকার হয়ে যায়,অথচ উভয়ের মধ্যে রয়েছে আড়াল।আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে যে,যেখানে দু’সাগর এসে মিলিত হয় সেখানে উভয়ের মাঝে একটি আড়াল বা অন্তরায় থাকে।ঐ অন্তরায় দু’সাগরকে বিভক্ত করে রাখে।ফলে দেখা যায়,প্রত্যেক সাগরের রয়েছে নিজস্ব তাপমাত্রা,লবণাক্ততা এবং ঘনত্ব।(1.principles of oceanography, Davis,pp 92-93)সাগর বিশারদদের পক্ষে এ আয়াতের ব্যাখ্যা দানের উত্তম সুযোগ রয়েছে।সাগরের মাঝে প্রবাহমান ঢালু পানির অদৃশ্য আড়াল আছে যার দিয়ে এক সাগরের পানি অন্য সাগরে যায়।
কিন্তু যখন এক সাগরের পানি অন্য সাগরে প্রবেশ করে তখন সে পানি তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলে এবং অন্য সাগরের পানির বৈশিষ্ট্যের সাথে একাকার হয়ে যায়।দু’পানির ধারার মধ্যে ঐ অন্তরায় একটি অন্তবর্তীকালীন একাকারকারী জোন হিসেবে কাজ করে।
কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতেও এই বিষয়ের উল্লেখ এসেছে।আল্লাহ বলেনঃ (আরবী )
“তিনি সে সত্তা যিনি দু’সাগরের মাঝে অন্তরায় সৃষ্টি করেছেন।” সূরা নমল -৬১
এ অবস্থা বা অন্তরাল বিভিন্ন সাগরে দেখা যায়।জিব্রাল্টারে ভূমধ্যসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের মিলন স্থলে,কেপ পয়েন্ট,কেপ পেলিনসুলা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার যেখানে আটলান্টিক মহাসাগর ভারত মহাসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে সেখানে।
কিন্তু কোরআন যেখানে মিষ্টি পানি ও লবণাক্ত পানির কথা বলে,তখন তা ঐ অন্তরালের সাথে নিষেধকারী প্রতিন্ধকতার কথা উল্লেখ করে।আল্লাহ বলেন,
“তিনি সমান্তরালে দু’সমুদ্র প্রবাহিত করেছেন, এটি মিষ্ট,তৃষ্ণা নিবারক ও এটি লোনা,বিস্বাদ ;উভয়ের মাঝেখানে রেখেছেন একটি অন্তরায়,একটি দুভের্দ্য আড়াল।” সূরা ফোরকান- ৫৩
আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কার অনুযায়ী দেখা যায়,মিষ্টি পানি যেখানে লবণাক্ত পানির সাথে গিয়ে মিশে, সে স্থানের অবস্থা ঐ স্থান থেকে ভিন্ন যেখানে দু’লবণাক্ত পানি গিয়ে মিশে।নদীর মোহনার লবণাক্ত পানি ও মিষ্টি পানি মিলিত হলে যে পার্থক্য সূচিত হয়,তার কারণ হল, সেখানে দুটো স্তরকে পৃথককারী চিহ্নিত ঘনত্বের ধারাবাহিতাবিহীন pycnocline zone রয়েছে।(oceanography, Gross, p.242,introductory ocanograpry, Thurman pp300,301) আর এই আড়াল সৃষ্টিকারী জোনে মিষ্টি পানি ও লবণাক্ত পানির লবণাক্ততার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।(do)
এদৃশ্য মিসরের নীল নদ ভূমধ্যসাগরের যে মিলিত হয়েছে,সেখানে সহ আরো বহু জায়গায় দেখা যায়।কোরআনে উল্লেখিত এই বৈজ্ঞানিক বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্বেবিদ্যালয়ের প্রখ্যাত সমুদ্র বিজ্ঞানী ও ভূতত্ব বিদ্যার অধ্যাপক ডঃ উইলিয়াম হের বক্তব্য দ্বারাও প্রমাণিত হয়েছে।
মহাসাগরের গভীরের অন্ধকার
অধ্যপক দুর্গা রাও একজন প্রখ্যাত সামুদ্রিক ভূতত্ববিদ এবং জেদ্দার বাদশাহ আবদুল আযীয বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ছিলেন।তাঁকে কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতের উপর মন্তব্য করতে বলা হয়ঃ
“অথবা (তাদের কর্ম) প্রমত্ত সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকারের ন্যায়, যাকে উদ্বেলিত করে তরঙ্গের উপর তরঙ্গ,যার উপরে ঘন কালো মেঘ আছে।একের উপর এক অন্ধকার।যখন সে তার হাত বের করে,তখন তাকে একেবারেই দেখতে পায় না।আল্লাহ যাকে জ্যোতি দেন না,তার কোন জ্যোতি নেই।সূরা আন নূর-৪০
অধ্যপক রায় বলেন, বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি মাত্র আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে মহাসাগরের গভীরের অন্ধকার সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পেরেছে।মানুষ বিনা সাহায্যে পানির ২০-৩০ মিটার নীচে ডুব দিতে পারেনা এবং সাগরের ২০০ মিটারের অধিক নীচের অঞ্চলে বাঁচাতেও পারেনা। এ আয়াতে সকল সাগরের কথা বলা হয়নি। কেননা, সকল সাগরের নীচে অন্ধকারের স্তর নেই। আয়াতে কেবল গভীর সাগর বা মহাসাগরের কথাই বলা হয়েছে।