পিতা মাতা হত্যার দায়ে ঐশীর ডাবল মৃত্যুদন্ড এর সিদ্বান্তে অনেকে স্বস্তির ঢোল পিটাচ্ছেন দেখছি।
হ্যা খুনি খুন করলে এবং তাও যদি হয় আপন পিতামাতা এবং রায়টা যদি হয় মৃত্যুদন্ড তাহলে আমাদের স্বস্তি হওয়ারই কথা।
এরপরও স্বস্তির পিছনেও অস্বস্তি , কিন্তু থাকতে পারে তা আমরা বোধ করি ভূলতেই বসেছি।
আমরা যে ধর্মেই বিশ্বাস করিনা কেন,যে মতেই বিশ্বাস করিনা কেন সবাই বিশ্বাস করি পৃথিবী একছত্র মায়াডোর বৈ কিছুই নয়।
পৃথিবীতে জন্মের পর এই মায়ার সৃষ্টি, আর এর শুরু মা,বাবাকে দিয়েই।
মা বাবার আদর শাসনের মিশ্র অনুভূতিগুলো আমাদের মনুষ্যকূলকে মায়াডোরে আরো বেশী শৃঙ্খলিত করে ফেলে।
এমন মানুষ নেই যে তার পিতামাতাকে ভালোবাসে না।হয়তো সাময়িক রাগ,অভিমান,ঘৃণা,পারিপাশ্বিক অবস্থা সন্তানের মাঝে কাঁচের দেয়াল হয়ে দাড়ায় কিন্তু দিন শেষে সবাই আমরা বাবা মাকে ভালোবাসি।
মা বাবা স্বর্গীয় দান তা আমরা কখনো হারাতে চাই না।
ঐশীর ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম তবে কেন ঘটলো? কেন সে স্বপ্রণোদিত হয়ে পিতামাতাকে হত্যা করলো?
সাইকোলজি বলে,মানুষ প্রচন্ড ঘৃণা,ক্ষোভ, প্রতিশোধ প্রবণতা কিংবা আত্মরক্ষার্থে হত্যা করে।
কিংবা উন্মাদ হলেও হত্যা করতে পারে।
মেডিকেল রিপোর্ট বলে ঐশী উন্মাদ নয় তবে ড্রাগ এডিকটেড।
হয়তো অনেকে মনে করছেন ড্রাগ এডিকটেড হওয়াতে সে হত্যা করেছে।
তা খুবই দূর্বল যুক্তি।কারণ একজন মানুষ এডিকটেড অবস্থায় এতবড় পরিকল্পিত কাজটি কখনো করতে পারেনা।
কারণ তখন সেন্স অব হিউমার এতোটাই তলানীতে থাকে যে পরিকল্পনা দূরে থাক ঠিকভাবে যেকোন কাজ করাই তখন দায় হয়ে পড়ে।
তাহলে প্রশ্ন জাগে ঐশী অন্তত ঐ সময়টাতে ড্রাগ নেননি।
আর ড্রাগ না নিলে এডিকটেড হলেও কোন কারণ ব্যতিরেকে
ঠান্ডা মাথায়,পরিকল্পিতভাবে ঘুমের বড়ি খাইয়ে তারপর ক্ষতবিক্ষত করে হত্যা করতে পারেনা।
তাহলে বুঝতেই পারছেন যুক্তিটি কতটা দূর্বল।
ডিপ্রেশনও এক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ হতাশাগ্রন্থ মানুষ পিতামাতাকেই শেষ আশ্রয় হিসেবে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চায়। এমন হাজারো উদাহরন আমাদের দেশে আছে যারা জীবনের চরম হতাশায়ও মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বেচে থাকে।
তাছাড়া সাইকোলজী বলে, হতাশাগ্রস্থ মানুষ আত্মঘাতি হয়,পরাঘাতী নয়।
তাহলে কিজন্য ঐশী তার পুলিশ অফিসার বাবা আর মাকে হত্যা করলো?
তবে কি আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় ঘুনে ধরেছে?
মরিচা পড়েছে আমাদের মায়ার বাধনে?
একজন মানুষকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদন্ড দিয়ে দিলেই কি আদালতের কাজ শেষ?
এরকম একটি স্পর্শকাতর খুনের পিছনের কারণটি কি জানার কোন প্রয়োজন নেই?
কেন একটি সদ্য যৌবনে পা দেয়া মেয়ে তার পিতামাতাকে নিসকৃষ্টভাবে হত্যা করলো তা জানার ইচ্ছে একবারও বিচারকের মাথায় জাগ্রত হয়নি?
তবে কি আমাদের সামগ্রিক বিবেক বুদ্ধি লোপ পেতে শুরু করেছে?
নাকি ঘুনে ধরা সমাজ ব্যবস্থা,মায়ার বাধনগুলোর মত বিচারিক ব্যবস্থায়ও ঘুনে ধরেছে?
নাহলে কেন বিচারকার্য সমাপ্তের পরও ঐশী আমাদের মাঝে যে ক্ষত দেখিয়ে দিয়ে গেছেন তার পিছনের নিয়ামক কি ছিল তা জানা হলো না?
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪৫