ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিক ফেলানীকে হত্যার অপরাধে ফেলানীর পরিবারকে পাঁচ লক্ষ রুপি প্রদানের সুপারিশ করেছে। পক্ষান্তরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেলানীর মৃত্যুর জন্য তার বাবাকে দায়ী করেছে। ঘটনার শেষ কোথায়, আমরা এখনও জানি না বা আন্দাজ করতে পারছি না। ইতোপূর্বে দুই দুই বার ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর আদালতে ফেলানী হত্যা মামলা থেকে আসামী- স্বীয় বাহিনীর সদস্য হাবলিদার অমিয় ঘোষককে অব্যাহতি দেয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের এক আবেদনের প্রেক্ষিতে সে দেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বিএসএফ-এর নিয়ন্ত্রকারী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এমন নির্দেশনা দিল। ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে ন্যায় বিচার চেয়ে আবেদনরে জন্য বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে প্রশ্ন হলো- আমাদের দেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কি এমন সাহস দেখাবার সাহস রাখে? প্রসঙ্গত, ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) নামে একটি সংগঠন এ বিষয়ে ভারতের সুপ্রীম কোর্টে একটি রিট আবেদন করে, যার শুনানীর দিন ধায় আছে অক্টোবরের ৬ তারিখ। এর আগেই ভারতীয় জাতীয় মানবাধিকার সংস্থার এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবী রাখে। তাদের এমন সিদ্ধান্তে এটা প্রমাণিত হলো, আসামী অমিয় ঘোষ নিরাপরাধ নয়। এখন ভারতীয় সুপ্রীম কোর্টের শুনানী ও তাদের সিদ্ধান্তর জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি ভারতের জাতীয় মানবাধিকার সংস্থার সুপারিশকৃত পাঁচ লক্ষ রুপি ক্ষতিপূরণের বিষয়টি প্রত্যাখান করে ফেলানীর মা ন্যায় বিচার চেয়ে অপরাধীর বিচার চেয়েছেন। আমরা ফেলানীর মায়ের এই সৎসাহসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। একজন হতদরিদ্র মা তার মেয়ের জীবনের বিনিময়ে পাঁচ লক্ষ রুপির ক্ষতিপূরণ প্রত্যাখান করে বীরত্বের পরিচয় দিয়ে অপরাধীর উপযুক্ত বিচার চাইছেন- এটাই হল তাঁর ব্যক্তিত্ব।
এবারে অন্য প্রসঙ্গ। গত সপ্তাহে শরত কালের অকাল ও অতি বর্ষণে রাজধানী ঢাকা প্রায় অচল হয়েছিল। রাজপথসহ নগরীর অলি-গলি জলাবদ্ধতায় নতুন রেকর্ড করে, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে নগরী প্রত্যক্ষ করে সীমাহীন যানজট। নগর জীবনে দুর্ভোগের নতুন মাত্রা যোগ হয়। নড়ে-চরে বসেন কর্তাব্যক্তিরা। মিডিয়ায় চলে ভ্যাপক প্রচারণা। মাথা ব্যাথা শুরু হয় সকলের- তাহলে ঢাকা নগর কি পরিত্যক্ত হতে চলেছে! ঢাকায় যানজট নতুন কিছু নয়, তবে দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় নিয়মিত খবর এটি। জলাবদ্ধতাও ঢাকায় একে-বারে নতুন নয়; তবে এবারে তা প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। চারি-দিকে হৈ-হৈ রব উঠেছে। মনে হচ্ছে এবার এ সমস্যা সমাধানে কিছু একটা হবে। হওয়া দরকার; হতে হবে। প্রশ্ন- দেশের উত্তরা-ঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে চলমান বন্য পরিস্তিতি নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা নেই কেন? প্রায় দুই মাস হতে চললো দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা যুবে আছে প্রবল বর্ষার পানি ও সামুদ্রিক জোয়ারের পানিতে। তাদের নিয়ে দু-একটা রিপোর্ট হলেও কর্তব্যক্তি পর্যায়ে কোন উচ্চবাচ্য শোনা গেল না, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বা উর্ধতন কাউকে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করতে দেখা গেল না। তাহলে কি ওই সব আম-জনতা দেশের কেউ নয়, নাগরিক নয়। কেবল ঢাকায় বসবাসরতরাই দেশের নাগরিক! ওদের জন্য ভাববার কেউ নেই? অথবা ভাববর সময় নেই কারো?
এরই মধ্যে জনৈক মন্ত্রী জাতিকে সুখবর দিয়ে বললেন, দুনিয়ার সর্বত্র তেলের দাম কমলেও দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে এগিয়ে নেয়ার জন্য দেশের সার্থে তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। হায়রে কপাল!
একটা গল্প দিয়ে শেষ করছি- জমিদার নিজে অবাধ্য(!) প্রজাকে লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করে লাঠি ভেঙ্গে ফেললেন। এরপরও রক্তাক্ত প্রজা বলছে: হুজুর আমাকে স্নেহ করেন বলে মেরেছেন, আমি ধন্য। আমি সুস্থ হয়ে যাব, তবে দুঃখ একটাই আমার মত পামরকে মেরে হুজুর তার এত্ত(!) দামী লাঠিটা ভেঙ্গে ফেললেন! তার মত দয়ালু জমিদার আর হয় না।
১১-০৯-২০১৫