দেশটাকে অকার্যকর প্রমানের জন্য সম্ভবত একটি গোষ্ঠী সরকারের ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে আছে। আমার ধারণা স্বাধীনতার পর সব ক’টি সরকারেরই এমন ঘাপটিওয়ালারা ছিল। বঙ্গবন্ধু সরকারে যেমন ছিল মোশতাক গং তেমনি জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া ও হাসিনা সরকারেও এরা ছিল এবং আছে বেশ সক্রিয়। বঙ্গবন্ধু ও জিয়া হত্যাকান্ডের দায় কতিপয় বিপথগামী সামরিক অসিফারের ঘাড়ে চাপানো হলেও সকলেই মানবেন এর পেছনে রাজনৈতিক অপদেবতারা কাজ করেছিল সক্রিয় ও অতি গোপনীয়তার সাথে। অতীতের কথা বলে লেখার পরিধি না বাড়িয়ে সা¤প্রতিক ঘটনাবলীর দিকে নজর দেই। হাসিনা সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ঝালকাঠীর কলেজ ছাত্র লিমনের ঘটনায় দায়ী র্যাব সদস্যদের শাস্তি দিলে বাহিনী হিসেবে র্যাবে সুনাম বাড়তো বই কমতো না, এ কথা তখনই বলেছি। অতি সা¤প্রতিক বাংলা নববর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় নারী নির্যাতনের যে ঘটনা ঘটে গেল, আমার বিশ্বাস সরকার (বিশেষত সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনী) চাইলে দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে পারতো। তা না করে কেউ কেউ দোষীদের রক্ষার কাজটিই করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়। কেউবা বলেছেন- সে দিন এমন কোন ঘটনা ঘটে নি। বিষয়টা শেষ পর্যন্ত হাস্যকর হয়ে গেছে। এতে করে দায়ী ব্যক্তিদের সাহস আরো বেড়েছে এবং হয়তো এদরে এক সময়ে সামলানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবী অনুসারে নির্দিষ্ট সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আজো প্রকাশ করা হয় নি, বরং অন্যান্য ক্যামেরার ফুটেজ থেকে পুরো দায় কথিত জঙ্গীবাদী বা মৌলবাদীদের কাজ বলে প্রচালনা চালানো হয়েছে। আমি মনে করি এতে ক্ষতি হয়েছে সরকারেরই। সেদিনে সেই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে একটি ছাত্র সংগঠন- বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ডিএমপি কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দিতে গেলে পুলিশ যেভাবে অ্যাকশনে নেমেছে, তাতে মনে হয়েছে তারা কোন জঙ্গী সংগঠনের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। অথচ দেশের সকলেই জানে ছাত্র ইউনিয়ন দেশের সবগুলো ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সবচেয়ে সুশৃংখল এবং ভদ্র। এক সময়ে এ সংগঠনকে বলা হতো ‘লিপস্টিক পার্টি’। ছাত্র ইউনিয়নকে ডিএমপি কমিশনার বরাবরে স্মারকলিপি দিতে দেয়া হলে কী ক্ষতি হতো পুলিশের? নিরস্ত্র ছাত্ররা পুলিশের সামনে এমন কি করতো যা পুলিশ বা দেশের জন্য ক্ষতিকর হতো? বরং যে ঘটনা ঘটানো হলো, তাতে গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা হলো এবং নারী নির্যাতনের প্রতিকার চাইতে গিয়ে প্রকাশ্যে পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হতে হলো নারীকেই; পুরুষরাও হয়েছে- সেটা অহরহ ঘটে বলে কেউ তেমন আমলে নেয় না। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে প্রকাশ্যে পুলিশের হাতে ভার্সিটির ছাত্রী নির্যাতন বা লাঞ্ছনার ছবি কী বার্তা দিচ্ছে আমাদের? মডারেট গণতান্ত্রিক বাংলাদশে সম্পর্কে কী বার্তা গেল বহির্বিশ্বে? তবে কি পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের সাথে বাংলাদেশের কোন তফাত নেই? যদিও এ ঘটনায় দায়ী এক পুলিশ বরখাস্ত হয়েছে; প্রশ্ন বরখাস্তকৃত ওই কনস্টবল বা ল্যান্স নায়েক কি একাই এ ঘটনার জন্য দায়ী? তার কমান্ডে থাকা উর্ধতন কর্মকর্তার কি কোন দায় নেই? খুশী হতে পারতাম যদি ওই স্কোয়াডে থাকা কমান্ডারের (পদ/পদবী জানা নেই বলে এমনটি বলছি) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতো। বাংলাদেশের পুলিশ কি কখনো গণতান্ত্রিক দেশের পুলিশ হবে না? বাংলা নববর্ষের নারী লাঞ্ছনার ঘটনা মানুষ ক্রমে ভুলে যাবে, ভুলে যাবে পুলিশের নারী নির্যাতনের ঘটনা।
আমি মনে করি, সরকারের ভেতরে হয়তো বা কোন মহল সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য আগ-বাড়িয়ে এমন সব ঘটনার প্রেক্ষাপট তৈরী করছে, যা হবে সরকারের জন্য বুমেরাং। তাই বলতে চাই সময় থাকতে সাধু সাবধান- ‘সময় গেলে সাধন হবে না’।
১৩-০৫-২০১৫