একদিন একটি নিউজ পড়ে খুবই দুঃখ পেয়েছিলাম। যার সারমর্ম ছিল- কোন একটি স্কুলে একজন মন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে তাকে অভ্যর্থণা জানানোর জন্য চৈত্র মাসের রোদের মধ্যে দাড়িয়ে থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল কয়েক’শ ছাত্রছাত্রীকে। এমন কি রোদের প্রকোপে অনেক শিক্ষার্থী চরমভাবে অসুস্থও হয়েছিল।এবং আমাদের দেশে এইটা একটা খুবই স্বাভাবিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি। কিন্তু মাত্র একজন মন্ত্রীর মনকে একটুখানি খুশি করার জন্য এমন ধরনের বর্বরোচিত কাহিনীর অবতারনা করার কি কোনই দরকার আছে?
আমাদের দেশের এমনই কিছু আবালমার্কা রাজনৈতিক সংস্কৃতির স্বীকার দেশের আবালমার্কা জনগন। আজ হয়তবা এই আবাল মার্কা সংস্কৃতির শিকার হয়ে প্রাণ হারাতে হল আমার এক বন্ধুর বাবাকে। আমাদের প্রধানমন্ত্রির আগমন উপলক্ষ্যে ঢাকা আরিচা মহাসড়ক প্রায় দুই হাত পরপর একেকটা গেট দিয়ে সাজানো হয়েছিল। কিন্তু আজকের সন্ধার ঝড়ের কারনে প্রায় অর্ধেক গেট রাস্তার উপরে পড়ে যায়। থেমে যায় হাজার হাজার গাড়ী। যার শিকার হয় আমার বন্ধুর মুমূর্ষ বাবাকে বহন করা এ্যাম্বুলেঞ্চটি। জ্যামে আটকা পড়ে রাস্তায়ই প্রাণ হারান তিনি। আমি বন্ধুকে শান্তনা দিতে পারছিলাম না। ওর একটাই কথা “বাবাকে হয়ত সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিলে আমাকে বাবাহীন সন্তান হতে হতনা”। এছাড়াও শুনলাম আরো দুইজন নাকি ঐ সকল গেট ভেঙে পড়ে মারা গেছেন।
ক্ষমতাশীন সরকার একটা দিবস পাইলেই রাস্তা সাজানোর প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়। সাথে যুক্ত হয় আমাদের প্রধানমন্ত্রী সহ হাজার হাজার চেলা, পুটি মার্কা নেতাদের নামের আর ছবির বিজ্ঞাপন। মনে হয় ব্যানারের কোন চিপায় পুটিমার্কা নেতাদের নাম বা ছবি থাকা মানেই সে পুটি থেকে তিমি মাছ হয়ে যাবে। আজকের ২৬ শে মার্চ উপলক্ষ্যে কয়েক লাখ টাকা খরচ মহাসড়ক সাজানো হয়েছিল। যে দেশের মানুষ দুই বেলা ভালোমত খাইতে পারেনা সে দেশে এত হুদাই সাজসজ্জার কতটুকু প্রয়োজন আছে সেটা একবার ভাববার বিষয়।
প্রধানমন্ত্রিকে বলছি, আমার বন্ধুর বাবার কপালে হয়ত মৃত্যুর লেখা ছিল তাই তিনি মারা গেছেন। কিন্তু আজকে রাস্তার এই অবস্থার কারণে যে অন্য যে দুটি প্রাণ নিভে গেল আপনি কি পারবেন এই প্রাণগুলিকে ফিরিয়ে দিতে? আপনি কি পারবেন জ্যামে আটকে থাকা হাজার হাজার যাত্রীর হাজার হাজার ঘন্টার সময়ের মুল্য দিতে? আপনি কি পারবেন অসংখ্য অসুস্থ মানুষের অসহ্য যন্ত্রণা ফিরিয়ে নিতে?............................