গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় রক্তাক্ত ট্র্যাজেডির আজ একটি বছর কেঁটে গেলো ।দেশের সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা ছিল গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয়। নৃশংস হত্যাকাণ্ডে আকস্মিকতায় ভীত এবং হতবিহ্বল প্রত্যক্ষদর্শীরা এখনও ভয়ার্ত আর শোকগ্রস্ত। ভয়ঙ্কর সেই হামলার দুঃসহ স্মৃতি এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে অনেকের মনের কোনে। আর স্বজনহারাদের কান্নাও থামেনি এখনো। দিনটি ছিল শুক্রবার, ১ জুলাই ২০১৬। রমজানের শেষদিকে ঈদকে ঘিরে যখন উত্সবের প্রস্তুতির ব্যস্ততা ঠিক তখনই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরায় ঘটে নারকীয় ভয়াবহ সেই হত্যাযজ্ঞ। রাত ৯টার দিকে একদল অস্ত্রধারী রেস্তোরায় হামলা চালালে অবস্থানরত অতিথিরা সেখানে আটকা পড়ে যান। জিম্মি করা হলো প্রায় ৩৫ জনকে দেশি ও বিদেশী নাগরিকদের। তাদের কেউ বাথরুম এবং কেউ কিচেনসহ বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে থাকার কারনে প্রাণে বেঁচে যান। ঘটনা শেষে রেস্তোরার বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকতে দেখা যায় অনেক লাশ । নৃশংসভাবে গুলি করে এবং কুপিয়ে তাদের হত্যা করা হয়েছিল। জঙ্গিরা সেই রাতে ২০ জনকে হত্যা করে যাদের নয়জন ইতালিয়ান, সাতজন জাপানি এবং তিনজন বাংলাদেশি ও একজন ভারতীয়। তাছাড়াও সন্ত্রাসীদের হামলায় দুজন পুলিশ কর্মকর্তাও প্রাণ হারায়। জঙ্গিদের গুলি এবং বোমায় আহত হন র্যাব এবং পুলিশের অনেক সদস্য কর্মকর্তা। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন হলি আর্টিজানে হামলার সূত্রের সন্ধানে নেমে জঙ্গিদের শেকড়ের কাছাকাছি যেতে সমর্থ হয় গোয়েন্দারা। আর সেইসব সূত্রেই জঙ্গিদের সব ডেরার খবর পাওয়া যায়। বিগত ১১ মাসে বিভিন্ন জেলায় এমন ১৯টি শক্তিশালী ঘাঁটিতে অভিযান চালানো হয়। অপারেশন থান্ডারবোল্ট থেকে শুরু করে অপারেশন সান ডেভিল নামে এই অভিযানে ৬০ জঙ্গি নিহত হয়। আর জঙ্গি দমন করতে গিয়ে প্রাণ হারান আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন চৌকস কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট এক সূত্রে জানা যায় মাওলানা শাকের নামে এক ব্রিটিশ নাগরিকের বিরুদ্ধে হলি আর্টিজানে হামলার ইন্ধনকারী হিসেবে গোয়েন্দাদের খাতায় নাম উঠেছে। আর ওই ব্যক্তির সঙ্গে তাজউদ্দিন নামে লক্ষ্মীপুরের এক দুর্ধর্ষ জঙ্গিও আছে যে সিরিয়ায় আইএসের পক্ষে যুদ্ধ করছেন। তাজউদ্দিনের সঙ্গে মাওলানা শাকেরের একটি যোগসূত্র রয়েছে। কয়েক দিন আগে লক্ষ্মীপুরের একটি মাদ্রাসার খতিব মুফতি মুস্তাকুন্নবীকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে। মুস্তাকুন্নবীর সঙ্গে তাজউদ্দিনেরও যোগাযোগ ছিল। মাওলানা শাকেরের বিরুদ্ধে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে জঙ্গি কার্যক্রম প্রচারণার অভিযোগ রয়েছে। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় গুলশান থানায় এসআই রিপন কুমার দাস বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ওই মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর। আর সেই মামলায় এখনও পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এরা হলেন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিম, বগুড়ার দুর্ধর্ষ জঙ্গি জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, কল্যাণপুরের অভিযান থেকে আটক রাকিবুল ইসলাম রিগ্যান এবং অস্ত্র সরবরাহকারী চাঁপাইনবাবগঞ্জের মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান। জঙ্গি হামলার পর কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সারাদেশে জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। এসব অভিযানে হলি আর্টিজানে হামলার সঙ্গে জড়িত আটজন নিহত হয়।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিট দাবি করেছেন কানাডা প্রবাসী তামিম আহমেদ চৌধুরী সেই হামলার মাস্টারমাইন্ড। সারোয়ার জাহান জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা হিসেবে সেই হামলার পুরো বিষয়টি তত্ত্বাবধান করেছেন। তানভীর কাদরীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসা ভাড়া নিয়ে হামলাকারী, নিবরাস ইসলাম, মীর সামীহ মুবাশ্বির, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, খায়রুল ইসলাম পায়েল এবং শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ওরফে বিকাশ, অবস্থান করেন। অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদুল ইসলাম এবং আবু রায়হান তারেক পাঁচ হামলাকারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। আবদুল্লাহ এবং ফরিদুল ইসলাম আকাশও এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। গুলশান হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে আরও অন্তত ২২ জন জড়িত রয়েছে।
হামলার ঘটনায় পাঁচজন পলাতক রয়েছে। তারা হলেন,বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট, সোহল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, রাশেদ ওরফে র্যাশ, হাদিসুর রহমান সাগর এবং ছোট মিজান। তাদের মধ্যে প্রথম তিনজনকে গুরুত্বপূর্ণ আসামি বলছেন তদন্তকারী সংস্থা কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। জঙ্গি হামলার ঘটনায় নিহতদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পুলিশের হাতে পৌঁছলেও পাঁচ জঙ্গির ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এখনও তৈরি করতে পারেনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন হামলায় অস্ত্র এবং বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে তারা। পাশাপাশি অপারেশনের আগে অপারেশনাল সামগ্রী অর্থাত কেডস, টিশার্ট, ব্যাগও সংগ্রহ করেছে তারা। আমরা দেখেছি, এটা খুব অল্প ব্যয়ের একটি বড় অপারেশন। এখানে ৮ থেকে ৯ লাখ টাকার বেশি তাদের খরচ হয়নি। হামলায় অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করেছেন তানভীর কাদরী। তানভীর কাদরী আগে ব্যাংকে বড় পদে চাকরি করতেন। তার স্ত্রীও একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিল। তারা সমুদয় টাকা এ জঙ্গি কর্মকাণ্ডের ফান্ডেই দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৭ ভোর ৫:৫৯