১। অজন্তা গুহা
অজন্তা গুহাসমূহ হচ্ছে ভারতের মহারাষ্ট্রে গভীর খাড়া গিরিখাতের পাথর কেটে খোদাই করা প্রায় ৩০টি গুহা-স্তম্ভ। এগুলি খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতক থেকে খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। এগুলিতে পাওয়া ছবি এবং ভাস্কর্য তৎকালীন বৌদ্ধ ধর্মীয় শিল্পের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। অজন্তার দেয়ালের চিত্রগুলিতে বুদ্ধের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। ফ্রেস্কো ধাঁচের এই দেয়ালচিত্রগুলির জীবন্ত রূপ এবং এগুলিতে নানা রঙের সমৃদ্ধ ও সুক্ষ্ম প্রয়োগ এগুলিকে ভারতের বৌদ্ধ চিত্রশিল্পের সর্বোৎকৃষ্ট নিদর্শনে পরিণত করেছে। গুহাগুলি মহারাষ্ট্রের আউরাঙ্গাবাদ জেলার জলগাঁও রেলস্টেশনের কাছে, আজিন্তা বা অজন্তা গ্রামের প্রান্তে অবস্থিত (২০ ডিগ্রী ৩০ মিনিট উত্তর অক্ষাংশ এবং ৭৫ ডিগ্রী ৪০ মিনিট পূর্ব দ্রাঘিমাংশ)। ১৯৮৩ সাল থেকে এই স্থানটি একটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট।
অজন্তা শৈলী ভারতে এবং অন্যত্র যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে, বিশেষ করে জাভাতে। সংশ্লিষ্ট দুই মিনার গোষ্ঠীর সঙ্গে,ভারতীয় ইতিহাসের দুই গুরুত্বপূর্ণ সময় জড়িয়ে আছে। সামগ্রিক অজন্তা গুহা,ভারতীয় শিল্প বিবর্তনের ব্যতিক্রমী সাক্ষ্য বহন করে, সেইসাথে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ভূমিকা নির্ধারণ করে,বুদ্ধিজীবী ও ধর্মীয় প্রেক্ষাগৃহগুলি, ভারতে গুপ্ত এবং তাদের তাৎক্ষণিক উত্তরাধিকারীর বিদ্যালয়গুলি ও অভ্যর্থনা কেন্দ্রগুলি। ২৯টি গুহা প্রায় ২০০ সালের আগে খনন শুরু করা হয়েছিল কিন্তু তার ইলোরার অনুকূলে ৬৫০ সালে পরিতক্ত্য হয়। পাঁচটি গুহাতে মন্দিরগুলি ছিল এবং চব্বিশটি গুহাতে মঠ ছিল যেগুলি প্রায় ২০০ বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এবং শিল্পীদের দ্বারা অধিকৃত ছিল বলে মনে করা হয়। ১৮১৯ সালে একটি ব্রিটিশ বাঘ-শিকারের দল দ্বারা পুনঃআবিষ্কৃত হবার আগে অবধি, অজন্তা গুহা ধীরে ধীরে বিস্মৃতিতে তলিয়ে গিয়েছিল।চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং-এর ভ্রমণলিপিতে অজন্তার বর্ণনা আছে। গুহাগুলি দীর্ঘকাল অরণ্যের আড়ালে বিস্মৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। উনিশ শতকে, ১৮১৯ সালে, এগুলি নতুন করে আবিষ্কৃত হয়। অজন্তা ও অদূরবর্তী ইলোরা ভারতের অন্যতম প্রধান পর্যটনকেন্দ্র।
টিকেট অফিস থেকে তোলা গুহার বহির্দৃশ্য
এটি এলিফ্যান্টা গুহাসমূহ প্রবেশপথের একটি চিত্র্র
এটি এলিফ্যান্টার মূর্তির একটি চিত্র
গুহার বিশাল হলঘর
এলিফ্যান্টা গুহাসমূহ
২। এলিফ্যান্ট গুহা
এলিফ্যান্টা গুহাসমূহ ঘরপুরি দ্বীপের একেবারে প্রধান ভাগে অবস্থিত। পর্তুগিজরা মুম্বাই পোতাশ্রয়ে অবস্থিত এই দ্বীপের নামকরণ করেছিল এলিফ্যান্টা দ্বীপ।
৩। ইলোরা গুহাসমূহ
ইলোরা গুহা হচ্ছে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের আওরঙ্গবাদ শহর থেকে ৩০ কিমি বা ১৮.৬ মাইল দূরে অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। রাষ্ট্রকুট রাজবংশ এই নিদর্শনের স্থাপনাগুলো নির্মাণ করেছিলেন। এখানে রয়েছে প্রচুর স্মৃতি সংবলিত গুহার সারি। এটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান মর্যাদায় ভূষিত হয়েছে।ভারতের শিলা কেটে কোন কিছু তৈরি করার প্রাচীন প্রতিরূপ স্থাপত্যটি এখানে অনুসৃত হয়েছে। এখানে মোট ৩৪টি গুহা রয়েছে যেগুলো চরনন্দ্রী পাহাড়ের অভ্যন্তর থেকে খনন করে উদ্ধার করা হয়েছে। গুহাগুলোতে হিন্দু, বৌদ্ধএবং জৈন ধর্মের মন্দিরের স্বাক্ষর রয়েছে। ৫ম থেকে ১০ম শতাব্দীর মধ্যে এই ধর্মীয় স্থাপনাগুলো নির্মিত হয়েছিল। এখানে বৌদ্ধ ধর্মের ১২টি হিন্দু ধর্মের ১৭টি এবং জৈন ধর্মের ৫টি মন্দির রয়েছে। সব ধর্মের উপাসনালয়ের এই সহাবস্থান সে যুগের ভারতবর্ষে ধর্মীয় সম্প্রীতির নিদর্শন বহন করে।
১২ নাম্বার গুহা চিত্র
ইলোরা কে ভেলুরা বা এলুরা বলা হয়। এটি প্রাচীন এলাপুরা নামের বিকৃত শব্দ । ইলোরা গুহা মন্দির কালাচুরি, চালুক্য ও রাষ্ট্রকুট শাসনামলে তৈরী হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন মন্দিরের জন্য বিখ্যাত। নবম শতাব্দীতে রাষ্ট্রকুটের শাসনামলে তৈরী হয় জগন্নাথ সভা পাচটি জৈন মন্দিরের সমষ্টি।
থমাস ড্যানিয়েলের ১৮০৩ সালের আকা ইলোরা পাহাড়ের একটি চিত্র
এই গুহাসমূহ খ্রিস্টাব্দ ৫ম ও ৭ম শতাব্দীতে স্থাপিত হয়। ধারণা করা হয় যে বৌদ্ধ গুহাসমূহ প্রাথমিক স্থাপনারগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল। প্রথম পর্যায়ে ১ থেকে ৫ নাম্বার গুহা ৪০০ থেকে ৬০০ সালে এবং পরবর্তী পর্যায়ে ৬ থেকে১২ নাম্বার গুহা মধ্য ৭ম-মধ্য ৮ম খ্রিস্টাব্দ। কিন্তু বর্তমানে এইটা আধুনিক বিশেষজ্ঞদের কাছে এইটা নিশ্চিত যে, হিন্দু গুয়া ২৭, ২৯, ২১, ২৮, ১৯, ২৬, ২০, ১৭ এবং ১৪ নাঃ গুহা এর আগে তৈরী। সর্বপ্রথম স্থাপিত বৌদ্ধ গুহা ৬ নাম্বার গুহা ডান পাশের ৫, ২, ৩, ৫ এবং ৪, ৭, ৮, ১০ ও ৯ নাঃ ব্লক। আর সর্বশেষ স্থাপিত গুহা হল ১১ ও ১২ নাঃ গুহা। সকল বৌদ্ধ গুহা স্থাপিত হয় ৬৩০-৭০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে । এই বিশাল স্থাপনাটি বেশিরভাগ বিহার এবং মঠের সমন্বয়ে গঠিত। এর মধ্যে বড় পাহাড়ের হায়ে খোদাইকৃত বহুতল ভবন বাসস্থান, শোবার ঘর, রান্নাঘর এবং অন্যান্য কক্ষ বিদ্যমান। এই স্থাপনার কিছু গুহাতে পাহাড়ের গায়ে খোদাইকৃত গৌতম বুদ্ধ, বৌদিসত্তব এবং পন্ডিতদের প্রতিমা সম্বলিত মন্দির বিদ্যমান।সবচেয়ে বিখ্যাত বৌদ্ধ গুহা হল ১০ নাম্বার গুহা একটি চৈত্য হল,চন্দরশালা অথবা ভিশভাক্রাম গুহা, যা কারপেন্টারস কেভ 'Carpenter's Cave' নামে সর্বাধিক পরিচিত। এই গুহাটিতে অনেকটা গির্জার মত একটি বিশাল হল বিদ্যমান যার নাম চৈত্য, যার ছাদ এমন ভাবে খোদাইকৃত যে দেখতে অনেকটা কাঠের বিমের মত। এই গুহার ঠি মধ্যখানে একটি ১৫ ফুট লম্বা আসনকৃত বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে। অন্যান্য বৌদ্ধ গুহার মধ্যে ১-৯ নাঃ গুহা হল মঠ এবং দো-তাল ১১ নাম্বার গুহা এবং তিনতালা ১২ নাম্বার গুহা ।
গুহা-১০ একটি বিহার যার আট ক্ষুদ্র কক্ষ বিশিষ্ট। যার চারটি ক্ষুদ্র কক্ষ সামনের দেয়ালের সাথে লাগানো বাকি চারটি ক্ষুদ্র কক্ষ পেছনের দেয়ালের সাথে লাগানো। এই গুহার সামনে একটি ক্ষুদ্র কক্ষসহ খোদাইকৃত স্তম্ভ আছে। সম্ভবত এই গুহাটি অন্যান্য বিহারের সরবরাহকৃত খাদ্য ভান্ডার হিসেবে ব্যবহৃত হত।
বৌদ্ধ গুহাসমূহের মধ্যে বিশ্বকর্মা একমাত্র চৈত্য গৃহ। এই গুহা স্থানীয়ভাবে বিশ্বকর্মা বা সুতার কা ঝপদা Sutar ka jhopda/ carpenter's hut নামে ডাকা হয়। এই গুহার নকশা দেখতে অনেকটা অজন্তা গুহাসমূহের মন্দিরের ১৯ ও ২৬ নাম্বার গুহার মত। ৭০০ খ্রিস্টাব্দতে এই গুহা স্থাপিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। চৈত্য গুহায় একসময় একটি বড় দেয়াল ছিল, যা বর্তমানে নেই। এই গুহার প্রধান হল একটি চক্রাকারে তৈরী এবং এর চারপাশে অষ্টভূজাকৃতির ২৮ স্তম্ভ বিদ্যমান।
হিন্দু গুহা
হিন্দু গুহাসমূহ স্থাপিত হয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে অষ্টম শতাব্দীর শেষ সময়ের মধ্যে। প্রাথমিক গুহাসমূহ ১৭-২৯ নাম্বার গুহা তৈরী হয় কালাচুরির শাসনামলে। সর্বপ্রথম নির্মান করা হয় ২৮, ২৭ ও ১৯ নাম্বার গুহা। এই গুহাগুলো নির্মাণ করা হয় প্রাথমিক পর্যায়ে নির্মিত ২৯ ও ২১ নাম্বার গুহার নির্মানের কৌশল অবলম্বন করে। ১৪, ১৫ ও ১৬ নাম্বার গুহা তৈরী হয় রাষ্ট্রকূটের শাসনামলে। সকল স্থাপনা বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গি ও সুচারু দক্ষতার পরিচায়ক। কিছু কিছু স্থাপনা এতটাই জটিল যে এর নির্মাণকাজ সমাপ্ত করতে কয়েক বংশপরাম্পরা পরিকল্পনা এবং পরিচালনার প্রয়োজন হয়েছিল।
১৬ নাম্বার গুহা, যা কৈলাশ অথবা কৈলাশনাথ নামেও পরিচিত, যা অপ্রতিদ্বন্দীভাবে ইলোরা’র কেন্দ্র। এর ডিজাইনের জন্য একে কৈলাশ পর্বত নামে ডাকা হয়। যা শিবের বাসস্থান, দেখতে অনেকটা বহুতল মন্দিরের মত কিন্তু এটি একটিমাত্র পাথরকে কেটে তৈরী করা হয়েছে। যার আয়তন এথেন্সের পার্থেনন এর দ্বিগুণ।প্রধানত এই মন্দিরটি সাদা আস্তর দেয়া যাতে এর সাদৃশ্য কৈলাশ পর্বতের সাথে বজায় থাকে। এর আশাপ্সহ এলাকায় তিনটি স্থাপনা দেখা যায়। সকল শিব মন্দিরের ঐতিহ্য অনুসারে প্রধান মন্দিরের সম্মুখভাগে পবিত্র ষাঁড় নন্দী র ছবি আছে।প্রধান মন্দির নন্দী মন্ডপ এ লিঙাম অবস্থিত। নন্দী মন্ডপ ১৬ টি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে আছে যার উচ্চতা ২৯.৩ মিঃ। নন্দী মডপে একটি বিশাল আকৃতির পাথরের তৈরী হাতি বিদ্যমান। একটি জীবন্ত পাথরের সেতু দ্বারা নন্দী মন্ডপ ও শিব মন্দিরের যোগাযোগ সাধিত হয়েছে। এই স্থাপনাটি তৎকালীন শিল্পীদের প্রতিভার সাক্ষর বহন করে। এই মন্দির তৈরীতে হয় ২,০০,০০০ টন পাথর কেটে, যার জন্য সময় লেগেছিল ১০০ বছর।
দশাবতার ১৫ নাঃ গুহা প্রাথমিকভাবে ছিল বৌদ্ধ মন্দির। এই মন্দিরটির গঠনগত দিক থেকে ১১ এবং ১২ নাম্বার গুহার সাথে সাদৃশ্য আছে। দেয়ালের খিলান থেকে মেঝের উপরের অংশের একটি বিশাল স্থাপত্য কলা বিদ্যমান যা বিভিন্ন দৃশ্য দিয়ে সাজানো। এই দৃশ্যের মধ্যে বিষ্ণুর দশাবতার চেহারা অন্তর্ভুক্ত আছে।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য হিন্দু মন্দিরগুলো হল রামেশ্বর ২১ নাম্বার গুহা, যার প্রবেশদ্বারের সম্মুখে গঙ্গা এবং যমুনা মূর্তি খচিত। ধুমুর লিনা ২৯ নাম্বার গুহা যা দকেহতে অনেকটা মুম্বাইয়ের নিকটে অবস্থিত এলিফ্যান্ট দ্বীপের গুহার মত। অপর দুইটি মন্দির হল, রাভন কি খাই ১৪ নাম্বার গুহা এবং নীলকণ্ঠ ২২ নাম্বার গুহা যেখানে অনেক স্থাপত্যের নিদর্শন বিদ্যমান। অন্যান্য হিন্দু গুহাগুলো হল, কুম্ভারব্দা ২৫ নাম্বার গুহা এবং গোপেলিনা ২৭ নাম্বার গুহা, এতে তেমন উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য নিদর্শন নেই।
ইলোরা মোট পাঁচটি জৈন গুহা আছে যা খ্রিষ্টীয় নবম থকে দশম শতাব্দীর মধ্যে স্থাপিত। এর সবগুলো গুহা ডিঘাম্বরা’র সাথে সম্পর্কযুক্ত। জৈন গুহাগুলো জৈন দার্শনিক ও ঐতিহ্যের ধারক। এই গুহাগুলো কঠোর তপস্যার অনুভূতির প্রতিফলন ঘটায়। কিন্তু এসব এখন অন্যান্য গুহার তুলনায় তেমন বৃহৎ নয়। কিন্তু এসব গুহা বিভিন্ন শিল্পকলার পরিচয় বহন করে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য জৈন মন্দিরগুলো হল ছোট কৈলাশ ৩০ নাম্বার গুহা, ইন্দ্র সভা ৩২ নাম্বার গুহা এবং জগন্নাথসভা ৩৩ নাম্বার গুহা। ৩১ নাম্বার গুহাও জৈন গুহা কিন্তু এটি একটি অসমাপ্ত চার স্তম্ভবিশিষ্ট্য হল এবং একটি মন্দিরের সমন্বয়ে গঠিত। ৩৪ নাম্বার গুহাটি আয়তনে ছোট যা ৩৩ নাম্বার গুহার বামদিকে অবস্থিত। অন্যান্য ভক্তিমূলক খোদাইচিহ্ন, একটি স্থান যার নাম সামভতস্বর্ণ যা ইলোরায় বিদ্যমান। সামভতস্বর্ণ জৈন ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি বিশেষ স্থান।
ইন্দ্র সভা ৩২ নাম্বার গুহা দ্বীতলবিশিষ্ট গুহা যাতে একটিমাত্র পাথর কেটে তৈরী মন্দির বিদ্যমান। এর ছাদের দেয়ালে অপূর্ব সুন্দর করে কাটা পদ্মফুল বিদ্যমান।
অন্যান্য জৈন গুহাগুলোও জটিল শিল্পকলায় পরিপূর্ণ। অনেক স্থাপনার ছাদ খুবই উচ্চমানের ছবি সম্বলিত, যার অনেকগুলো অংশ এখনো বিদ্যমান।
ইলোরা ওয়েস্টার্ন ঘাটের সমতল ভূমি দখল করে গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন প্রাচীন আগ্নেয়গিরি কর্মকান্ডের ফলে এই এলাকায় বিভিন্ন স্তরে গঠিত, যা ডেকান ফাদ Deccan Traps নামে পরিচিত। ক্রেটাচিয়াসের সময়, একটি আগ্নেয়গিরি ইলোরা দক্ষিণ পশ্চিম দিকে গঠিত হয়েছিল।
ইলোরায় খ্রিস্টাব্দ ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে পঞ্চদশ শতাব্দীর অনেক খোদাইচিহ্ন বিদ্যমান। তাদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল রাষ্ট্রকুট দান্তিদুর্গা যা ১৫ নাম্বার গুহার মন্ডপের পেছনের দেয়ালে খোদাইকৃত। এটি খোদাই করা হয় রাষ্ট্রেকুটের বিজয়ানন্দে। কৈলাশ মন্দিরের খোদাইচিহ্নগুলো খ্রিস্টাব্দ ৯-১৫ শতাব্দীর মধ্যে অঙ্কিত। জৈন গুহার জগন্নাথসভায় তিনটি খোদাইচিহ্ন আছে। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত পার্সভান্ত মন্দিরে একাদশ শতাব্দীর একটি খোদাইচিহ্ন আছে। মহা কৈলাশ (১৬ নাম্বার গুহা) কৃষ্ণা (খ্রিস্টপূর্ব ৭৫৭-৮৭ খ্রিস্টাব্দ) দিগ্বিবিজয়ী এবং দান্তিদূর্গার চাচা তার সম্মানার্থে তৈরী হয়। কার্কা II (খ্রিস্টপূর্ব ৮১২-১৩ খ্রিস্তাব্দ) এর অনুদানে ইলোরার একটি পাহাড়ে মহান স্মৃতিচিহ্ন খোদাইকৃত একটি তামার থালা স্থাপিত হয়। অজন্তা গুহার ন্যায়, ইলোরা গুহাসমূহ কখনো ধ্বংসের সম্মুখীন হয় নি। বিভিন্ন লেখা ও ভ্রমণকাহিনী থেকে পাওয়া যায় যে, ইলোরায় নিয়মিত পরিদর্শন করা হত। তার মধ্যে প্রথমে লেখা পাওয়া যায় আরব ভূতত্ত্ববিদ আল-মাসা’উদি, যা লেখা হয় খ্রিস্টাব্দ দশম শতাব্দীতে। ১৩৫২ সালে সুলতান হাসাব বাহ্মী, যিনি এই স্থানে কিছুকাল অবস্থান করেন ও পরিদর্শন করেন। অন্যান্যের মধ্যে ফিরিশ্তা, থেভেনট (১৬৩৩-১৬৬৭ খ্রিস্টাব্দ), নিকালো মানাউচি (১৬৫৩-১৭০৮ খ্রিস্টাব্দ), চার্লস ওয়্যার ম্যতালেট (১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দ), এবং সেলী (১৮২৪ খ্রিস্টাব্দ)।
সূত্রঃ Dhavalikar, M.K. (২০০৩)। Ellora। Oxford University Press, New Delhi।
http://ajantacaves.co.in/Ellora-Caves.aspx
http://vishwakala.org/uniportal/info/index.asp?mi=82&xp=557&xi=0&xl=3&o=0&t=
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৩৪