পথশিশুদের কে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। পথেই থাকে, পথেই সব… কাকের সাথে এদের বেশ বৈসাদৃশ্য … ছেড়া ময়লা কাগজ কুড়ানো, আবর্জনা থেকে খাবার খুঁজে বেড়ানো যাদের সারাদিনের কাজ। মাঝে মাঝে দু-একটা সাহায্যকারী সংস্থা আসে, মানবাধিকার কর্মী আসে,টাকা দিয়ে যায়, ভাগ্য একটু আধটু সহায় হলে শীতবস্ত্রও পাওয়া যায় মাঝে মাঝে।
আবার কখনও আসে স্বার্থান্বেষীরা । হরতালে গাড়ি ভাঙ্গার কাজে কিংবা গুলি চালিয়ে শরীরের রক্ত ঝরানোর কাজে পথশিশুদের চেয়ে নিরাপদ মাধ্যম আর কিছু হতে পারেনা। মৃত্যু যাদের জন্য দিন রাত্রির মতই স্বাভাবিক… কখনো পুলিশি ধাওয়ায়, কখনো গাড়ি চাপায়, কখনো ক্ষুধায়, আবার মাঝে মাঝে খুব স্বাভাবিক অসুখের অস্বাভাবিক মৃত্যু… এভাবেই বছরের পর বছর হাজার হাজার শিশু মরছে, জ্বলছে, ভুগছে…… তাদের হিসেব আমাদের অজানায় থাকুক…… কিচ্ছু আসে যায় না এক দুজন পথশিশু মরে গেলে… মরল নাহয় শত শত , তাতেও আমাদের কি আসে যায়?? মৃত্যু সংখ্যাটা বছর ঘুরে হাজারে আসলো… কার কি তা তে??
ঝড়ো হাওয়ায় উড়তে থাকা লেওয়ারিশ ছিন্নপত্রের মতো এরা আমাদের কাছে… নাম নেই, ঠিকানা নেই… চিনি কেবল ওই নামেই, “কমন জেন্ডার স্ট্রিট চিলড্রেন”
বাসায় ময়না পাখি পোষেন কেও?? অনেক শখ করে কিনে আনার পর দেখলেন ময়না ঘুমোতে দেয়না। সারাদিন কারণে অকারণে কর্কশ স্বরে চেঁচায়। তখন মেজাজ টা তুঙ্গে উঠে। এমন অবস্থায় অনেকে পাখির খাঁচা খুলে দেয়, আবার অনেকে পাখির সাথে প্রতিনিয়ত সখ্যতা গড়ার চেষ্টা করে। এভাবে কয়েকমাস চেষ্টার পর একদিন দেখা যায় পাখি সুন্দর নাম ধরে ডাকছে, আপনার ভাষায়। তখন পাখিকে আর নেহায়েত একটা পাখি ভেবে ছেড়ে দেয়া যায় না। সে তখন পরিবারের সদস্য।
পথশিশুদের কথা বলতে গিয়ে ময়নার কথা বললাম কেন বুদ্ধিমানরা হয়ত ঠিকই বুঝে নিয়েছেন। তাও একটু ঝেড়ে কাশছি।। দেশটাই পরিবার, পথশিশুরা আমাদের ময়না… আমরা কজন এমন কয়েকশত ময়না ধরে কথা শেখানোর কাজ হাতে নিয়েছি। আপ্রাণে চাইছি বনের পাখিরা কথা বলা শিখুক, লিখতে শিখুক, পড়তে শিখুক… তারাও হয়ে উঠুক আমাদের পরিবারের সদস্য। থাকুক তারা ছিন্নমূল, তবুও চাইছি ছিন্নমূলরা নিরক্ষর না থাকুক। তাদের হয়ত আমরা উচ্চ শিক্ষিত করতে পারব না। তাও চেষ্টা করছি, মনের ঘুটঘুটে আঁধারে পথশিশুটা যেন ভয়ে আঁতকে না উঠে… তার মনের ঘরে ইলেকট্রিক বাল্ব না জ্বলুক, অন্তত একটা মোমবাতি জ্বালাতে ক্ষতি কি?? এভাবে শত শত মোমবাতি জ্বালিয়ে একদিন আঁধার কাটানোর স্বপ্ন দেখছি। চাইছি দানের জিনিস হাতে নিয়ে শিশুটি হাসিমুখে ধন্যবাদ বলতে শিখুক, গাড়িতে ককটেল ফোটানোর আগে শিশুটি পড়ে জেনে নিক, প্যাকেটের গায়ে কি লিখা আছে, কাগজ কুড়ানোর কাজ ছেড়ে সে একটা অফিসে কেরানির কাজ নিক… তার আত্মার মানুষটা জেগে উঠুক, সে বুঝতে শিখুক সে সৃষ্টির সেরা জীব।
যারা কোন সংগঠনের হয়ে পথশিশুদের জন্য কাজ করছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যারা করছেন না, তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, অর্থ, সময় কোনটাই দিতে না পারেন অন্তত পক্ষে এমন কাজ যারা করে তাদের উৎসাহিত করুন। আপনার একটা শুভকামনাও আমাদের সামনে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। আর যারা কাজ করতে আগ্রহী তারা এগিয়ে আসুন। কথা বলুন বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীদের সাথে। সাহায্য করুন অর্থ দিয়ে, সময় দিয়ে, শ্রম দিয়ে… তবে যুক্ত হওয়ার আগে জেনে নিন সংগঠনের কাজ এবং উদ্দেশ্য।
এবার বিদেশ বিভূঁইয়ে যারা আছেন তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, বিশেষ করে ইউরোপে। যারা পথশিশুদের নিয়ে অন্তর থেকে কাজ করতে চান তারা আমাকে সাহায্য করতে পারেন। শত শত স্বেচ্ছাসেবক আমার দরকার নেই, দুএকজন স্বচ্ছ মনের মানুষ দরকার যে স্বার্থহীন ভাবে সাহায্য করবে।
BIRD ( Bangladesh International Recovery Development) বাংলাদেশে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে দুটো স্কুল চালাচ্ছে বেশ কিছু বস্তিতে। একজন ইউনিসেফের কর্মী হয়ে অন্য সংগঠনের প্রতি আগ্রহ আমার জন্মানোর কথা না। তবুও তাদের সাথে একাত্ম হয়ে চেষ্টা করছি ভালো কিছু করার, নতুন কিছু করার। আপনি এগিয়ে আসতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন ফেসবুকের মাধ্যমে। কথা বলুন সরাসরি কর্মীদের সাথে, জানান আপনার মতামত, সহযোগীতা কিংবা অনুপ্রেরণা।
নিরক্ষরতার মহামারী থেকে মুক্ত হোক শিশুরা…… বাঁচুক দেশের জন্য, শিক্ষিত জাতি হোক অবিচ্ছেদ্য।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৩:০০