এভাবেই এগোয়, অনেকে বাঁচার জন্য স্বপ্ন দেখে আবার অনেকে স্বপ্ন দেখবে বলে বাঁচে।।
জীবন থেমে থাকে, স্বপ্ন থামেনা ..
সে যাই হোক, মূল কথা হচ্ছে স্বপ্ন নামের পুরো বিষয়টাই নিঃসন্দেহে একটি বড় ব্যাপার । আজ আবার লিখছি সাধ্যের মধ্যে থাকা কিছু ছোট ছোট স্বপ্নের কথা। যে স্বপ্নগুলো সদ্য জন্ম নিয়েছে, ছোট্ট মনের আঙ্গিনায় বাসা বাঁধা কিছু স্বপ্নের বীজ, যা একটু একটু করে বড় হচ্ছে… কুড়িয়ে পাওয়া কাগজের মোড়কে বাঁধা এসব স্বপ্ন… খুব বেশি কিছু না, কখন দু মুঠো চাল, এক টুকরো রুটি, একটি নতুন জামা কিংবা স্লেট,পেন্সিল,স্কুল ব্যাগ… যাদের ছোট্ট বুকে এইসব অপরিকল্পিত স্বপ্ন বাসা বাধে তাদের আমরা সুবিধাবঞ্ছিত বলি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সুবিধাবঞ্চিত শব্দটি এখানে একদমই বেমানান। সুবিধা হল চাহিদার বাইরে আরাম আয়েশের জন্য অতিরিক্ত প্রাপ্য বিষয় কিন্তু যেখানে একটা শিশুকে অন্ন, বস্ত্র কিংবা শিক্ষা নিয়ে স্বপ্ন দেখতে হয় তাহলে তাদের আমরা সুবিধাবঞ্চিত বলব কেন? তারা তো অধিকার বঞ্চিত… আমাদের নাগরিক, আমাদের অংশ, আমাদের প্রজন্ম।
বাংলাদেশের পথশিশুদের অধিকার নিয়ে বেশ কিছু এনজিও এবং মানবাধিকার সংস্থা কাজ করছে, কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা এখনো ১২ই জুন শিশু দিবসে বাণী দেয়ার মাঝেই সীমাবদ্ধ। ২০১১ সালের শিশু অধিকার জরিপে বাংলাদেশে অধিকার বঞ্চিত শিশুর সংখ্যা ৫৪ লাখ , এর মধ্যে ৩২ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং ইউনিসেফ পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী দেশের শহরাঞ্চলে প্রায় ৩০০ ধরনের অর্থনৈতিক কাজে শিশুরা শ্রম দিচ্ছে। ২০০৩ সালে এক সমীক্ষায় ৭০৯টি ফ্যাক্টরির মধ্যে জরিপ চালিয়ে দেখা যায়, মোট নয় হাজার ১৯৪ জন শ্রমিকের মধ্যে ৪১.৫ ভাগ যাদের বয়স মাত্র ৯ থেকে ১২ বছর।
সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৬ সালের মধ্যে সরকার শিশুশ্রম নিরসনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু মিরাকলের স্বপ্নে বিভোর থাকা ছাড়া এই সিদ্ধান্ত কতটা বাস্তবসম্মত তা রীতিমত ভাবার বিষয়।
দেশে সরকারি প্রাথমিক এবং নিন্ম মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজারের কাছাকাছি, প্রতি স্কুলে মাত্র ১০জন করে এসব অধিকার বঞ্চিত শিশুদের জায়গা দিলেও ৩০ লক্ষ শিশুর পড়াশোনা নিশ্চিত হয়ে যায়। তাদের স্বপ্নগুলো পূরণের দায় সরকারের একার নয়, আমাদের দায়টাই সবচেয়ে বেশি। যেসব শিশু গৃহপরিচারিকার কাজ করে, তাদের নুন্ন্যতম আক্ষরিক বিদ্যাটা ঘরে বসেই শেখানো যায়… আমরা কজনই বা সে ব্যাপারে সচেতন ? আমরা অচিরেই ভুলে বসে আছি, এই ৫৪ লক্ষ মেধাশুন্য শিশু একদিন এক কোটি মেধাশুন্য জাতি দেবে… আর এই মেধা শূন্যতা মানেই অপরাধ আর দুর্নীতির শেকড় বিস্তৃত করা।
ফিরে আসছি আবার ছোট্ট ছোট্ট বুকের স্বপ্নের চিলেকোঠায়। তাদের স্বপ্নগুলো খুব সীমিত,কখনো হাস্যকর কখনো নগণ্য… আবার কখনো চোখে জল এনে দেয়ার মত…
মাঝে মাঝে আত্মকেন্দ্রিকতার শেকলটা খুলে অন্তত একটি পথশিশুর যেকোন একটি স্বপ্নের ফানুশ উড়িয়ে দিন, একদিন হয়ত লক্ষ লক্ষ ফানুশে আকাশটা ভরে যাবে …
ভ্যানের চাকা মুছতে মুছতেই ছেলেটা গাইছিল,
"" এই ফটকাবাজির দেশে স্বপ্নের পাখিগুলো বেঁচে নেই…
ও গানওয়ালা , আরেকটা গান গাও…....
আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই, কিচ্ছু করার নেই…… ""
তাকিয়ে ছিলাম অবাক হয়ে … কিচ্ছু বলতে পারিনি, তার যে স্বপ্নের হাতেও হাতকরা……
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২২