শেষ হয়ে গেলো মহান স্বাধীনতার মাস মার্চ মাস। মাসের উল্লেখযোগ্য আলোচিত বিষয় ছিলো উপজেলা নির্বাচন। এই নির্বাচন আওয়ামীলীগ ৫-থেকে ৭ দফায় সমাপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো প্রথম থেকেই। চালাক আওয়ামীলীগ আরো এক বার বি এন পি কে বোকা বানালো। এর আগে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভারতীয় প্রভুদের পরামর্শে ফেয়ার ইলেকশন করে জাতীয় নির্বাচনে জাতীকে আরেকবার ধোঁকা দিতে চেয়েছিলো। বি এন পি সেই ফাঁদে পা না দিলেও আমার ধারণা ভুল করলো উপজেলা নির্বাচনে। ১ম দফা এবং ২য় দফায় ঠিক ঠাক ভাবে নির্বাচন করে ব এন পি কে এগিয়ে রেখেছিলো । ৩য় দফা থেকে দেখানো শুরু করে আওয়ামীলীগের আসল রূপ । ৩য় দফা থেকে ৫ম দফা পর্যন্ত চলে আওয়ামীলীগের ভোট ডাকাতি , সাধারণ ভোটারদের উপর নির্যাতন , কেন্দ্র দখল, প্রিজাইডিং অফিসারকে মারধর, ব্যালট পেপার ছিনতাই , বিরোধী দলীয় প্রার্থীদের প্রাণ নাশের হুমকি কোন কিছুই বাদ দেয়নি আওয়ামীলীগ যা পত্রপত্রিকা এবং ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা দেখেছি। ৫ম দফা নির্বাচনের পর বোকা বি এন পি কে বেকুব বানিয়ে তাদের অনেক পেছনে ফেলে এখন পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচনে এগিয়ে আছে আওয়ামীলীগ। বোকা বি এন পি কখন বুঝবে যারা দেশের ৬ কোটি ভোটার এর ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে তারা কখনো উপজেলা কেন ইউ পি নির্বাচনেও বি এন পি কে ছাড় দিবেনা।
মাসটির অন্য একটি আলোচিত বিষয় ছিলো, স্বাধীনতার ঘোষণা বিতর্ক। এটা নতুন নয় এর সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে নতুন বিতর্ক । দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার পুত্র তারেক জিয়া হঠাৎ করে বলে বসলেন জিয়া দেশের ১ম রাষ্ট্রপতি। অভিযোগ ওঠে ইতিহাস বিকৃত করার। যদিও কিছু দিন আওয়ামীলীগ জিয়াউর রহমান কে পাকিস্তান এর গুপ্তচর ও রাজাকার ঘোষণা করেছিলো রণাঙ্গনে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করা একজন সেক্টর কমান্ডারকে যখন রাজাকার বানানো হলো তখন কিই ইতিহাস বিকৃত হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তাদের কোন যুক্তি সঙ্গত উত্তর নেই। জিয়া যদি রাজাকার হয় তবে তবে সেদিন দেশের ৭ কোটি মানুষ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কার ঘোষণা শুনেছিলো ? বি এন পি জামাতের কথা বাদ দিলাম জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এর স্বীকারোক্তি কি করে অবিশ্বাস করি ? অবশ্যই আওয়ামীলীগ হুমায়ূন আহমেদকেও সত্য কথা বলার অপরাধে রাজাকার বানিয়ে দিয়েছিলো।
রানা প্লাজার ঘাতক হাজারের ও বেশি অসহায় শ্রমিককে হত্যার দায়ে গ্রেপ্তারকৃত সোহেল রানাকে মুক্তি দেওয়ার ঘটনা ছিলো অত্যন্ত ঘৃণ্য। পরে জনতার সমালোচনার মুখে পড়ে ৪ সপ্তাহের জন্য জামিন স্থগিত করে। এই মাসের মহান স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশ লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা গেয়ে গিনেস বুকে নিজের নাম লেখানোর গৌরব অর্জন করে। কিন্তু পরে দেশের মানুষ জানতে রেকর্ডটি এখনো ভারতের। মাসের সর্বশেষ আলোচিত বিষয় ছিলো ভারতীয় দালাল প্রথম আলো গং ও মুসা ইব্রাহীম এর এভারেস্ট চুরি করে ভুয়া সার্টিফিকেট জোগাড় করে , ফটোশপ দিয়ে এভারেস্ট এর চুড়ায় নিজের ছবি বানিয়ে জাতীর সাথে বেইমানী করে চেতনা বাজদের ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া বাংলাদেশকে আরেকবার চোরের দেশ হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করা।
এপ্রিল মাস শুরু হয় একটি দুঃসংবাদ দিয়ে। বাংলাদেশের ন্যায্য পানি লুণ্ঠন করে বাঁধ দিয়ে তৈরি বিদ্যুৎ ভারত নিয়ে যাবে বাংলাদেশের উপর দিয়েই! ভারতকে বিদ্যুৎ করিডোর দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ সরকার। এ করিডরের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে ১ লাখ ২৬ হাজার ৫৮৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা হয়ে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে যাবে। বিনিময়ে সামান্য কিছু বিদ্যুৎ পাবে বাংলাদেশ। তবে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ পাবে বাংলাদেশ তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হিমালয় থেকে নেমে আসা বিভিন্ন নদীর ওপর ৪২৯টি বাঁধ দিয়ে এ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। কিছু বাঁধ ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে; আর কিছু নির্মাণাধীন। বাংলাদেশ ও আসামের জনগণ যে টিপাইমুখ বাঁধের বিরোধিতা করছেন, ১৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সেই বাঁধ এইসব বাঁধের একটি।
১৫ ই মার্চ থেকে ৩১ শে মার্চ পর্যন্ত ৩য় থেকে ৫ম দফা উপজেলা নির্বাচনে পত্রিকায় এবং টিভিতে আওয়ামীলীগ আসল রূপ দেখে যখন পুরা জাতী স্তব্ধ তখন ভারতীয় শিল্পীদের কনসার্ট আর ফ্ল্যাশ মোব দিয়ে গোটা জাতীর দৃষ্টি অন্য দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো।
চলতি মাসের সবচেয়ে হার্ট টাচিং সংবাদ হলো “ বাংলাদেশের ন্যায্য পানি লুণ্ঠন করে বাঁধ দিয়ে তৈরি বিদ্যুৎ ভারত নিয়ে যাবে বাংলাদেশের উপর দিয়েই!ভারতকে বিদ্যুৎ করিডোর দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ সরকার” এমন খবরে যখন গোটা জাতী হতবাক তখন হটাত করে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের যুবলীগ এবং পুলিশকে দিয়ে পিটিয়ে এক লাটি তে সাপ মেরে লাটি না ভেঙ্গে গোটা দেশের দৃষ্টি অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে সুচতুর আওয়ামীলীগ। আমরা তো ইস্যু প্রিয় জাতী । একটা ইস্যু পেলেই হলো। জাহান্নামে যাক বিদ্যুৎ করিডোর। এমন কি ভারতীয় আগ্রাসনে বাংলাদেশ মূল্যবান খনিজ সম্পদ হারালেও সেসব নিয়ে ভাবার সময় কোথায়?
১৯৮২ জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রক্তপাতবিহীন এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার পর এই জাতীর উপর নেমে আসে চরম অভিশাপ । ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত এই দেশের অসহায় দরিদ্র মানুষের উপর চালানো হয় স্বৈরাচার নামের নির্যাতনের রোলার। এরশাদ দুর্নীতির পাহাড় শুধু গড়েননি দেশের সকল স্তরের মানুষের উপর করেছে অমানবিক নির্যাতন। অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বলতে হয় সে এরশাদ আজ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রী পদমর্যাদায় বিশেষ দূত । বর্তমানে দেশের কথিত বিরোধী দল। আমরা শহীদ নুর হোসেন দিবস পালন করি অথচ শহীদ নূর হোসেনের হত্যাকারীকে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ রাষ্ট্রদূত বানাই। জানি শহীদ নূর হোসেনের আত্মা কেঁদে উঠে বলছে এই জন্যই কি প্রাণ দিয়েছিলাম ? নিজেদের হীন স্বার্থ হাসিল করার জন্য গণতন্ত্র আর স্বৈরাচার মিশে গিয়ে আজ একাকার।
স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে হলেও রাজাকারের বিচার হচ্ছে। কিন্তু আমি যখন দেখি এখন যারা বিচার করছে ১৯৮৬ সালে , ১৯৯১ সালে এবং ১৯৯৬ সালে তারাই রাজাকারের সাথে ক্ষমতা লাভের জন্য জোট করেছিলো এমনকি তাদের সাথে জোট করে একই সাথে বি এন পি এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করে ১৯৯৬ সালে তারা সরকার গঠন করেছিলো ।
যখন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থেকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হয় গোলাম আযমের নিকট জন , যখন ইসলামী ব্যাংকের হাতে সেরা ব্যাংক এর পুরষ্কার তুলে দেওয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দেন জাফর ইকবাল , জামাতি অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করে আব্দুর নূর তুষার , ইসলামী ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন করে চেতনাবাজ মখা আলমগীর , পাবনার জামাতের নায়েবে আমীর শতাধিক শিবির কর্মী নিয়ে যখন আওয়ামীলীগে যোগ দেওয়ার পর আওয়ামীলীগ নেতা তাদের চেতনার সার্টিফিকেট প্রদান করে এবং সর্বশেষ গণ জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র সহ ২য় প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধাদের স্বার্থ শেষ হয়ে যাওয়ার পর মেরে তক্তা বানিয়ে দেয় অথচ এই অনির্বাচিত সরকারকে একসময় সি সি ক্যামেরা বসিয়ে , ফ্রি বিরিয়ানি আর মিনারেল ওয়াটার দিয়ে নিরাপদ বেষ্টনীর চাদরে ঢেকে পুলিশ পাহারায় ঘিরে রেখেছিলো, যার কথায় বাংলাদেশের সকল স্কুলে জাতীয় পতাকা উড়াতে আর নামাতে হয়েছিলো তাকে আজ মেরে তক্তা বানিয়ে দিয়েছে । হায়রে ! চেতনার স্বার্থ শেষ !!! হলে বুঝি এমনই হয়।
কয়েকদিন আগে খবরে প্রকাশ পায় রানা প্লাজার রানাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। যখন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো তখনই জানতাম অসহায় বঞ্চিত দরিদ্র গার্মেন্ট শ্রমিকদের টকানো হবে এবং রানাকে এক সময় মুক্তি দেওয়া হবে। যখন মন্ত্রী বলে বি এন পি জামায়াত ভবন ধরে নড়াচড়া করেছে তাই রানা প্লাজা ধ্বসে পড়েছে , যখন যাবতজীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত ফাঁসির আসামীকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে আবারো মানুষ হত্যা করার সুযোগ করে দেওয়া হয় , যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সরকার-সমর্থক নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুল আজিজ দাবী করে যারা ছাত্রলীগ করে তাদের গায়ে দাগ দেখে চাকুরী দিতে হবে যোগ্যতার কোন দরকার নেই, যখন সরকার দলীয় অপু উকিলের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের মহিলা ক্যাডাররা সুপ্রিম কোর্টে পাথর ছুড়ে মারে , যখন ছাত্রলীগ ক্যাডার জাতীয় পতাকা হাতে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের দিকে চেতনার লিঙ্গ প্রদর্শন করে
তখন আমি বলতে বাধ্য হই চেতনার রাজ্যে রাজাকার মুক্তিযুদ্ধা ময় , এক একজন রাজাকার/ ভাদাকার যেন এক একটি চেতনার সনদপত্র।
সরকার যখন আইন প্রয়োগ করে স্টেডিয়ামে ভিনদেশী পতাকা উড়ানো যাবেনা , অথচ চেতনাবাজ পীযুষ এর বউ যখন কুকুরের গায়ে বাংলাদেশের পবিত্র পতাকা জড়িয়ে বাংলাদেশের পতাকাকে অবমাননা করে শুধু থেমে থাকেনি বরং ভারতীয় জাতীয় পতাকা হাতেও স্টেডিয়ামে ক্যামেরা বন্ধী হয় এবং আইন প্রয়োগকারীরা নীরব থাকে, যখন আমি জানতে পারি প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ করে লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা গেয়ে বিশ্বরেকর্ড করার উদ্দেশ্যটি সফল হয়নি। রেকর্ডটি এখনো এখনো ভারতের।
তখন আমি বলতে বাধ্য হই চেতনার রাজ্যে রাজাকার মুক্তিযুদ্ধা ময় , এক একজন রাজাকার/ ভাদাকার যেন এক একটি চেতনার সনদপত্র।
এসব সবারই জানা। অনেকে মন খারাপ করে পোস্ট পড়েনা অথবা এসব ব্যাপারে বিরক্ত হয়েও ট্যাগ খাওয়ার ভয়ে কিছু বলেনা। অনেকে আবার দেশ নিয়ে খুব হতাশ। কিন্তু মুমিনরা হতাশ হবেনা। মুমিনরা আল্লাহকে এতোটাই বিশ্বাস করে যে তারা তার উপর আস্তা রাখে এবং তারা জানে একদিন আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য আসবে। গভীর রাতের অন্ধকার কেটে গিয়ে দেখা দিবে সোনালী ভোর। তেমন একটি ভোরের অপেক্ষায় আমরা নির্যাতিতরা।
আল্লাহ আমাদের দেশটাকে শকুনের হিংস্র থাবা থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
জয় বাংলা । চেতনা দীর্ঘজীবী হোক।