somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভিকারুননিসার সাম্প্রতিক অবস্থা ও কিছু পুরোনো কাসুন্দির নূতন করে উদ্ঘাটন

১১ ই জুলাই, ২০১১ রাত ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়েকদিন ধরে দেশকে তোলপাড় করে দেয়া খবর, শিক্ষকের মুখোশধারী নরখাদক পরিমল জয়ধরের ভিকারুননিসার দশম শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণ।...এর প্রতিবাদে ধর্ষণকারীর বিচার এবং ভিকটিম মেয়েটার পাশে এসে দাঁড়াতে ফেসবুকে অনেক পেজ, গ্রুপ, ইভেন্ট দেখলাম। অভিভাবক সহ হাজার হাজার বর্তমান ও পুরোনো ভিক্কি এবং সাধারণ মেয়েরাও শনিবারের রোড মার্চ অংশ নিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হয়তো পরিমল এর বিচার ও হবে আশা করছি। কিন্তু তবুও ভয় হয়, মনিপুর স্কুলের ইসলাম ধর্ম শিক্ষক আমিন আলি মোল্লা বা
বিসিআইসি কলেজ এর বাংলা শিক্ষক সেলিম এর মত পরিমলও কয়েকদিন পর ছাড়া পেয়ে যাবে নাতো??? আর ছাড়া পেয়ে
পূবপুরুষদের মত প্রতিশোধের হিংসায় সেসব মেয়েদের কোন ক্ষতি করে বসবে নাতো, যারা তার কাছে প্রাইভেট পড়ত কিন্তু তার দুঃসময়ে সহযোগিতা করেনি???



২০০৮-এ বিসিআইসি কলেজ এর ঘটনার কথা কি মনে আছে? না থাকলে একটু মনে করিয়ে দেই। আর যদি মনে থেকেই থাকে, তবে এখন বিসিআইসি কলেজ এর একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে একটু ঝালাই করিয়ে নিন।...আমি হয়তো এই লেখাটা লিখতাম না, যদি না কয়েকদিন আগে আমার এক কলেজ সহপাঠীর সাথে দেখা হত। হ্যাঁ, আমার সহপাঠীটি সেই মেয়ে
(সঙ্গত কারণেই তার নামটা প্রকাশ করলাম না) যাকে ২০০৮ সালে সেলিম নামক শিক্ষক মুখোশধারী পিশাচের হাতে ধর্ষিত হতে হয়েছিল। (ভাবছেন, পুরোনো কাসুন্দির বোতলটা কেন নূতন করে খোলার দরকার ছিল? ছিল না, যদি জানতেন কাসুন্দির বোতলের গায়ে আর আসল কাসুন্দিতে আসলে কি কি উপকরণ রয়েছে।) যদিও কলেজ কর্তৃপক্ষ আসলে তত্‍কালীন প্রিণ্সিপাল মিডিয়াকে বলেছেন, ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছিল তবে তাতে উনি (সেলিম) সফল হননি। তবে আসল সত্যটা হয়তো মিডিয়া জানতে পারত যদি না কর্তৃপক্ষ তাদের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলার অনুমতি দিত। ২০০৮ সালের জুন মাসের শেষ সপ্তাহে সেলিম স্যারের কাছ থেকে অফার আসে তার কাছে পড়ার এবং এতে করে HSC তে কি কি ADVANTAGE রয়েছে তা সহ। বলাবাহুল্য এসব শিক্ষকের কিছু কিছু চামচা থাকে শিক্ষার্থীর মধ্যে তারও ছিল, তানজিয়া রহমান তুলি ও নাহিদ ফেরদৌস রাফি (বর্তমানে রেডিও দূরবীনে RJ হিসেবে কর্মরত)। তুলি আমার স্কুল জীবনের বন্ধু, তাই ওর কথা আমি ফেলতে পারিনি, এবং উনি যখন শিক্ষক হিসেবে এতো ভালো তাই আমি সহ আরও অনেকেই ভর্তি হয়েছিলাম উনার কোচিং এ। যদিও এটাকে ক্লাসের অনেকই ভালো চোখে দেখেনি, যেহেতু সবাই জানতো স্যারের উপর তুলির দূর্বলতা আছে। কিন্তু আমি ক্লাস করতে পেরেছিলাম দেড় মাসের মত। দেড় মাস পরের থেকে হঠাত্‍ করেই স্যার কলেজে আসা বন্ধ করে দেন। আসল কারণটা কেউই জানত না, শুধু কলেজ প্রিণ্সিপাল, ওই ভিকটিম মেয়ে ও তার অভিভাবক এবং সেলিম স্যার ও তার চামচারা ছাড়া। তবে কলেজে সবাই এটা জানত যে উনাকে বের করে দেয়া হয়েছে।...............



যেহেতু উনি অনেক জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন, তাই তার চামচাদের খুব একটা বেগ পেতে হয়নি এই বলে যে তিনি কিছু শিক্ষকের চক্ষুশূল, তাই তার এই অবস্থা। এজন্যে তাকে কলেজে ফিরিয়ে আনার জন্যে কিছু শিক্ষার্থী তুলি, রাফির প্ররোচনায় পরে সেলিম স্যারের ছত্রছায়ায় প্রেসক্লাবে মানব বন্ধন করে এবং প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করে। প্রেস কনফারেন্সে তারা বলে, কলেজের বিভিন্ন শিক্ষক পড়ার আড়ালে তাদের যৌন নির্যাতন করেন এবং সেলিম স্যার এর প্রতিবাদ করায় তাকে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটা পুরোপুরি সাজানো ছিল। তবে মুখে কালো কাপড় বেঁধে যারা গিয়েছিল মানব বন্ধনে, তারা প্রায় সবাই উনার কাছে প্রাইভেট পড়ত। এবং এই খবর প্রখম এসেছিল দৈনিক যুগান্তরে। এখানে বলে রাখি তখন যুগান্তরের সম্পাদক যিনি ছিলেন, তিনি সেলিমের স্রী। এই ঘটনা যখনকার আমি তখন টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে ১৫ দিনের শয্যায়। তবে যারা তার কাছে প্রাইভেট পড়েও মানব বন্ধনে যায়নি তাদেরও অনেক বড় মূল্য দিতে হয়েছে, কি মূল্য সেটা পরে বলছি।




যেই অসহায় মেয়েটিকে কলেজের পরের Extra Class এ ধর্ষিত হতে হয়েছিল, তার ঘটনা এবং মানব বন্ধনের ঘটনা জানাজানি হয় অক্টোবর মাসে। এবং এটাও জানা যায় আমাদের আগের ব্যাচের মেয়েদের সাথেও তিনি এমন ঘৃণিত কায়জ করার চেষ্টা করেছেন। এসব জানার পর প্রভাতি শাখার মেয়েরা ও দিবা শাখার ছেলেরা এক হয়ে ঐ শিক্ষকের বিচার এবং তার চামচা তুলি রাফি সহ মোট ৭জনকে T.C দেওয়ার দাবিতে পরীক্ষা, ক্লাস বয়কট করে রাস্তায় নামে। মানব বন্ধন, মিছিল করা সহ কয়েকটা বাসও ভাঙচুর করে ছেলেরা। শিক্ষার্থীদের চাপে প্রিণ্সিপাল মিরপুর থানায় কেস করে সেলিম ও তার চামচাদের নামে। সেলিমকে না পেলেও তার চামচাদের মধ্যে তুলি ও রাফিকে পুলিশ ২৪ ঘন্টা আটক করে রাখে। আর বাকিরা শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাওয়ায় তাদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়। তুলির এই ঘটনা জানার পর ওর সাথে আমার ৮বছরের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়।……………..



সেলিমের কোন বিচার হয়নি, এমনকি তাকে গ্রেপ্তার করাও সম্ভব হয়নি। যুগান্তরসহ কিছু পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল এর সহয়তায় এই ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়। হওয়ার মধ্যে যা হয়েছে, প্রিণ্সিপালকে ঘোড়াশাল শাখায় বদলি করা হয় এবং কলেজকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করে টেস্ট পরীক্ষাও পিছিয়ে দেওয়া হয়। তবে তুলি রাফিদের যে T.C দেওয়া হয়েছিল পরে তা প্রত্যাহার করা হয়। এখনকার মত তখন ফেসবুকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল এত বেশি ছিল না, ব্লগের কথাতো বাদই দিলাম। তাই হয়তো সেই মেয়েটির উপর হওয়া অন্যায়ের বিচারের দাবিতে সবাই এক হতে তখন হয়তো আমরা আজ ভিকারুননিসার মেয়েদের মত ফেসবুক বা ব্লগে আহবান জানাতে পারিনি। পারলে হয়তো সেলিমের মত পিশাচেরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে পারতো না।



এখন সেই কথাটাতে আসি যেটা পরে বলব বলেছিলাম। ২০০৯ এ HSC পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে বিসিআইসি কলেজের একজন HSC পরীক্ষার্থীর মোবাইলে একটা SMS আসে। যাতে অকথ্য ভাষায় কিছু বাক্যসহ RAPE এর হুমকি ছিল। আরেকজনের TNT ফোনে ফোন করে আজে বাজে অফারের পরে RAPE এর হুমকি। এইরকম আরেকজনকে HSC পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে অভিভাবকের সামনে প্রকাশ্যে RAPE এর হুমকি দেয়া হয়। আর এছাড়াও মোবাইল নম্বর ছড়ানোতো আছেই। যাদেরকে এসব হুমকি দেয়া হয়েছিল তারা সবাই সেলিমের কাছে প্রাইভেট পড়ত এবং তার কথামত প্রেসক্লাবে যেতে রাজি না হওয়ায়, সেলিম এবং তার চামচাদের প্রতিশোধের রেষানলের এই রূপ ধারণ। একবার চিন্তা করে দেখুন, একজন HSC পরীক্ষার্থী পরীক্ষা চলাকালীন যখন এতবাজে হুমকি পায় তখন তার মনের অবস্থা কি দাঁড়াতে পারে!!!............



এতকিছু বলার একটাই কারণ, আজ ভিকারুননিসার মেয়েরা যে আন্দোলনে নেমেছে তার ফলস্বরূপ তাদের যেনো, আমাদের যে অবস্থা হয়েছিল সে অবস্থা না হয়। সেলিমদের মত পিশাচদের প্রতিশোধের অনলে তাদের যেন পুড়তে না হয়। একটা কথা জেনে রেখ, তুমি যতই এই সমাজে মাথা উঁচু করে, সম্মানের সাথে বাঁচতে চাও না কেন, এই সমাজ তোমাকে ততটাই পায়ের নিচে দাবিয়ে রাখতে চাইবে। যুদ্ধে জয়ী হও মেয়েরা, শুভকামনা রইল।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১০:১২
২৭টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×