আজকে পেপারে মানষের চোখের কান্না দেখে মনটা কেমন যেন খারাপ হয়ে গেলো।এতদিন এই মানুষগুলোকে মনে হত এরা অনেক বোকা।এই বোকা মানুষেরা খুব সহজে এবং খুব তাড়াতাড়ি বড়লোক হওয়ার জন্য কিছু না বুঝেই শেয়ারে ইনভেস্ট করেছে।
আমার এক পরিচিত জাহাঙগীরনগর থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে পাশ করে ২৫০০০ টাকায় ভালো জব করত একটা সফটওয়ার কোম্পানীতে।প্রথমে উনি অফিস থেকে মাঝে মাঝে সময় পেলে শেয়ার বিজনেস করতেন।দুইটা আইপিও দিয়ে শেয়ার শুরু করলেন।প্রথমবার লটারিতে একটাও বাঁধলো না।দ্বিতীয়বার একটা পেলেন এবং ওটার দাম বাড়া দেখে খুব উৎসাহিত হলেন।এরপর মা-বাবা , ভাই-বোন , বন্ধু-বান্ধবী সবার নামে একটা করে একাউন্ট খুল্লেন ডাচ-বাংলা ব্যাংক থেকে।তাদের এটিএম কারড গুলো নিজের কাছে রাখতেন এবং ওদের নামে বিও একাউন্ট খুললেন।বেশ কয়েক হাজার টাকা তার খরচ হয়ে গেলো এতে।গ্রামীণ ফোন বাজারে আইপিও ছাড়বে বলে বাসা থেকে তিন লাখ টাকা নিলেন এই বলে যে আইপিও ব্যবসায় কোন লস নাই।১৪০০০ টাকা করে ২০ টা আইপিওকরলেন। লটারী হল কিনতু দুঃখের কথা হল তিনি একটাও পেলেননা।খুব কষ্ট পেলেন উনি।একদিন হটাৎ এক বন্ধু উপদেশ দিল সেকেন্ডারিতে আসার।প্রথমে শেয়ার নিয়ে পড়াশুনা করলেন।পিই রেশিও, নেট এসাট ভ্যালু ইত্যাদি দেখে কয়েকটা ব্যাংক আর কয়েকটা অন্য কোম্পানীর শেয়ার কিনলেন।কয়েক মাস খুব স্লো লাভ করতে লাগলেন।উনি আশা হারালেন না।অফিসে ইন্টারনেটে ব্রাউযারে একটা ট্যাবে সবসময় ডিএসইবিডি খুলে রাখতেন।কয়েকদিন পর উনি দেখলেন তার ওনেক ফ্রেন্ড বিশাল লাভ করে ফেলসে এর মধ্যে।এ্টা দেখে তার মনে হল টাকা যখন ইনকাম করতেই হবে রিস্ক না নিয়ে লাভ নাই।সো, উনি বন্ধুদের সাথে যোগ দিলেন।বন্ধুরা যে শেয়ার কিনত, উনি সেই শেয়ার কিনতেন, যে শেয়ার বেচত উনি সেই শেয়ার বেচতেন।আমি একদিন বললাম :" এটা টো জুয়া খেলতেছেন আপনে।"উনি বললেন যে বেশির ভাগ মানুষ এমনকি ফিনান্স-ইকোনোমিক্স এর টিচাররাও খেলতেছে।আমি আর কিছু বললাম না।কয়েকদিন পর উনার সাথে দেখা।বেশ হাসি-খুশী।বললেন উনার নাকি তিন লাখ থেকে পাঁচ লাখ হয়ছে।চাকরিটও নাকে ছেড়ে দিয়েছেন ফুল টাইম কাজে মনোনিবেশ করার জন্য।শুনে একটু চমকিত হলাম।আরও বললেন ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে আরও ১০ লাখ টাকা ইনভেস্ট করবেন।
এরপর ওনেকদিন তার সাথে দেখা হয় না।কালকে উনারে ফোন দিসিলাম।মোবাইল বনধ পেয়ে টিএন্ডটিতে ফোন করলাম।উনার ছোট বোন বলল ভা্ইয়া সারাদিন দরজা আটকায় রাখসে আর বাইরে থেকে একটু পরপর কান্নার আওয়াজ আসছে।এটা শুনে মনটা একদম থেমে গেলো।উনার কষ্ট দেখে মনে হচ্ছিলো নিজেই বিশাল লস খেয়েসি।উনার নাকি মূলধন থেকে টাকা কমে গেছে।সাথে ব্যাংকের বিশাল লোনও ঝুলছে।
শেষ কথা, কারও অলস টাকা থাকলে শেয়ারে ইনভেস্ট করুন।আইপিও করতে পারেন।সেকেন্ডারীতে ডেভিডেন্ট খাওয়ার জন্য শেয়ার বিজনেস করতে পারেন।কিন্তু লোভে পড়ে জুয়া খেলতে যেয়েন্না।বাংলাদেশের শেয়ার আসলেই একটা জুয়া।এই বাজার শেয়ারের কোন প্রিন্সিপাল মানে না। হাজার পি্ই রেশিও,ক্যাপিটাল,গ্রাফ দেখে শেয়ার কিনলেও ৯৬ ,২০১১ ,২০** এর মত টাকা কাগজ হয়ে যেতে পারে।
দিনটা শুভ হোক।হ্যাপি ব্লগিং।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




