কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে।দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়।হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মোছে।টেনে টেনে শ্বাস নেয়।হাত বাড়িয়ে হাট করে জানালার পাল্লাটা খুলে দেয়।
আস্তে আস্তে সূর্য চোখ মেলে।পরমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে।ভোর না হতেই শিউলিতলায় ছুট দিত ফুল কুড়োতে।তারপর সূর্য উঠত।ও যেদিক দিয়ে হাঁটত,সূর্যটাও সেদিক দিয়ে যেত।কি আশ্চর্য!ভাবত,সূর্যটা ওকে এত ভালবাসে!সে ওর এত কাছের বন্ধু!
পরমা জানে,সেটা ছিল ওর বোঝার ভুল।একটু একটু করে বড় হয়েছে,অনেক কিছু বুঝতে শিখেছে- জীবনের ভুলগুলোও একটা একটা করে ওর কাছে ধরা দিয়েছে।কত ভুল,কত ভুল.............হিসেবি ভুল,বেহিসেবি ভুল।যাদেরকে কাছের ভেবেছে তারাও ভুল ; আবার যাদের ভুল ভেবেছে তারা.........................নাহ!ভাবনাগুলো কেমন পেঁচিয়ে যাচ্ছে।
বাইরে তাকায় পরমা। অনেকদিন পর ভোর দেখছে।সবুজ সর্ষে ক্ষেত হলুদ শাড়ির জমিনে নিজেকে সাজিয়েছে।অপলক তাকিয়ে পরমা নীল আকাশ,সবুজ ধানক্ষেত,গাছ,ডালপালার আড়মোড়া ভাঙা দেখে।আবার জীবনের ভুলগুলো সামনে এসে ভিড় করে।হাত দিয়ে সেগুলো সরিয়ে দিতে চায়,আবার জট পাকিয়ে যায়।আচ্ছা,ভুলগুলো কি শুধু ওর একারই?না,তা কেন?তবু সব কেমন যেন গোলমেলে লাগে....
কাল রাতে শিয়ালের ডাক শুনছিল।কেমন গা শিউরে ওঠা।ছোটবেলায় একবার দেখেছিল শিয়াল কিভাবে অসহায় একটা মুরগির ওপর চড়াও হয়েছিল।মাঝে মাঝে ওর নিজেকে সেই অসহায় মুরগি মনে হয়....আর শিয়ালগুলো?শিয়ালের কি অভাব আছে!
ধুর!এসব সে কি ভাবছে?এত সুন্দর একটা সকাল,আর সে কিনা....!আসলে অসুন্দরের ভেতর থাকতে থাকতে ভাবনাগুলোও আর সহজ-সরল-সুন্দর হতে চায় না।
নাহ!আর কোন ভুল করতে চায় না সে।আবার সে সূর্যকে ভালবাসবে,ভালবাসবে তার দিদিমা'র রূপকথার পরীকে,পঙ্খীরাজে চড়ে আসা রাজকুমারকে- একেবারে তার নিজের মতন করে!
ভাবতে ভাবতে জানালার শিক খুব শক্ত করে আঁকড়ে ধরে পরমা।কাঁচের চুড়ি মটমট করে ভেঙে যায়।ভাঙা টুকরো হাতে ঢুকে যায়,দরদর করে রক্ত পড়তে থাকে.......
সেদিকে খেয়াল নেই পরমার।খেয়াল নেই সাদা বিছানার চাদরে ক্রমশ শুকিয়ে জমাট বাঁধতে থাকা লাল স্রোতের দিকেও!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০০৮ রাত ৮:৪৫