নাজু’র ফোন পেয়ে ঘুম ভেঙে গেল।ঘুমের ঘোরে “হ্যালো” বলতেই ও পাশ থেকে মেয়েটা ভেজা গলায় গড়গড় করে কি সব বলে গেল।আমার পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে ওর কথা শুনে।আজ নাকি পারু আসছে।আমি উঠে বসলাম।আহ,কতদিন পর পারুকে কাছ থেকে দেখব।
বিছানায় বসেই ঠিক করলাম,আজ পারুকে ভালোবাসা’র কথা জানিয়েই দিব।মনের ভেতর চরম উত্তেজনা,তবুও সবার সামনে স্বাভাবিক ভাবেই থাকব।কাউকে কিছু বুঝতে দেয়া যাবে না।ব্রাশ করে,গোসল দিয়ে আলমারি থেকে ভাঁজ করা পাঞ্জাবি টা বের করে পড়লাম।কখন যে ১০টা বেজে গিয়েছে,টেরই পাইনি। বাসা থেকে বের হব,সেই সময় পেছন থেকে আম্মা ডাকলেন খাওয়ার জন্য।আগেই ঠিক করেছি,কাউকে কিছু বুঝতে দিবো না।তাই বাধ্য ছেলের মত খেতে বসে গেলাম।খুব সাবধানতার সাথে সবকিছু করছি,তারপরও আম্মা কিভাবে যেন ধরে ফেললেন।মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
-কিছু হয়েছে তোর?এরকম অস্থির হয়ে আছিস কেন বাবা?
-আরে নাহ। কি হবে? জানো আম্মা,আজ খুব important একটা কাজ করব।দোয়া কোরো,যেন ঠিক মত করতে পারি।
আম্মা আবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।একটু সাহস বাড়ল।
বাসা থেকে বের হয়ে সোজা চলে গেলাম জাহাঙ্গীর এর চায়ের দোকানে।নিয়ম ভেঙে কড়া করে চিনি আর মালাই দিয়ে ১ কাপ চা দিতে বলে কোনার দিকের টেবিলে গিয়ে বসলাম।মানসিক ভাবে প্রস্তুতির ব্যপার আছে।ওকে কি কি বলব,তা গুছিয়ে নিতে হবে না! পরে যদি এলোমেলো হয়ে যায়?আমি আবার ওর সামনে গেলেই কেন যেন তোতলা হয়ে যাই।এইতো,গত বছর যখন ওর সাথে দেখা হয়েছিল,তখন “ক্যামন আছিস?” কথাটা বলতেই ১মিনিট পার হয়ে গিয়েছিল।সামনে থাকা বন্ধুরা এটা নিয়ে এখনও খোঁটা দেয়।বন্ধুরাও যা হয়েছে না!
হেঁটে হেঁটে ওর বাসার দিকে আসলাম।ওইতো ওর বাসা দেখা যাচ্ছে।হুট করে ১০/১২ বছরের একটা মেয়ে এসে বলল,
-স্যার,ফুল লইবেন?আইজ সকাল সকাল সব ফুল বিক্রি হয়া গ্যাছে।মাত্র এই কয়টা আছে।লইবেন?
- কতগুলো আছে তোমার হাতে?
- ৫টা। লইবেন? কম রাখুম নে। ৫টা ২৫ টাকা।
আমি সবগুলো ফুল নিয়ে নিলাম।ভালোবাসার কথা জানাব,আর ফুল দিবো না,তা কি করে হয়!মেয়েটির হাতে ১০০ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে হাঁটা দিলাম।মেয়েটি পেছন থেকে ক্রমাগত ডেকে যাচ্ছে,”স্যার টাকা লয়া যান।” আমার ওইসব শোনার সময় কোথায়!পারু’র বাসায় এসেই পরেছি।সবাই দল বেধে কোথাও যাচ্ছে।আমিও যন্ত্রের মতো সেই মানুষগুলোর পেছন পেছন হাঁটছি...
বড় দরজা’র কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ভেতরে অনেক মানুষ।ঠিক করেছি, সবাই চলে গেলে তারপর ওর কাছে যাব।আমার পা কাঁপছে।সবাই এত সময় নিচ্ছে কেন?মনে হচ্ছে,অনন্তকাল ধরে দাঁড়িয়ে আছি। ওই ফুলওয়ালী মেয়েটাও যে আমার পেছনে পেছনে টাকা দেয়ার জন্য এসেছে,তা বুঝিনি।কাছে এসে আবার বলল,”স্যার,টাকা লইবেন না?” আমি মেয়েটির কথার কোন জবাব না দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম।ততক্ষনে সবাই চলে গিয়েছে।মেয়েটি বড়বড় চোখে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কি সব বলছে।অথচ আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি,মেয়েটি বলছে,”যতসব পাগল ছাগল।তুই টাকা না লইলে আমার কি?”
হাতে রাখা ফুলগুলো কিছুক্ষন আগের বানানো পারু'র কবরের কাছে রেখে স্বাভাবিক ভাবেই বললাম, "পারু,তোকে খুব ভালোবাসি।সারা জীবন এই ভাবেই ভালোবেসে যাব। যেখানেই থাকিস,ভাল থাকিস।"