somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোর ঘুমো ঘোরে এলে...

১৮ ই জুলাই, ২০১৩ ভোর ৬:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি দাঁড়িয়ে আছি এয়ারপোর্টের সামনে।আমার প্রাণের বন্ধু অয়ন আজ বিদেশ থেকে আসছে।আহ,কি মজা।কতদিন ওর সাথে আড্ডা দেয়া হয় না।পেট ফুলে ঢোল হয়ে আছে।অনেক অনেক কথা জমা করে রাখার কুফল।আহ,কতদিন ওর সাথে একই সিগারেটে টান দেয়া হয়নি!টাকার অভাবে একই কাপের চা ভাগাভাগি করে খাওয়ার মুহুর্ত গুলো হঠাৎ করে মনে পরে যায়।হারিয়ে যাই পুরনো দিন গুলোতে...

আমার “বড় বেলা’র” বন্ধু অয়ন।“ছোট বেলা’র” বন্ধুদের মতো সে হারিয়ে যায়নি কখনও।আমরা দুজনে একসাথে থেকেছিলাম অনেকদিন।সেই স্কুলের নবম শ্রেণীতে ওঠার পর ওর সাথে পরিচয়।উচ্চমাধ্যমিকের পর আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম দুজন।তারপরও বাকি বন্ধুদের থেকে ওর সাথেই ঘনিষ্ট ছিলাম বেশি।খুব মনে পড়ে,পারু যখন আমার প্রেমের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিল,তখন আমি,অয়ন আর তানভীর গিয়েছিলাম তানভীরের গ্রামের বাড়িতে।রাতে জমির মধ্যে মদ,গাঁজা খেয়ে আমি সবচেয়ে বেশি নেশাগ্রস্থ্য হয়ে পরেছিলাম।নেশার ঘোরে নাকি অয়ন কে বলেছিলাম,”দোস্ত,মারা যাচ্ছি রে।আমি মারা গেলে এখানেই আমার কবর দিয়ে দিস।আব্বা আম্মা শুনলে ঝাড়ি দিয়া বাড়ি থেকে বাহির করে দিতে পারে।“ সেই রাতে নাকি অয়ন সারা রাত ওর গেঞ্জি খুলে সেটা দিয়ে আমাকে বাতাস করেছিল।পরে তানভীরের কাছে শুনেছি এসব।

আমার সব পাগলামীর সাথেই একটা নাম জড়িয়ে আছে ওতপ্রোত ভাবে।তা হল “অয়ন”।হুট করেই যেদিন পারুর বিয়ের খবর পেয়েছিলাম,সেদিন ২৫টা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেলেছিলাম।অয়ন একাই আমাকে ঢাকা মেডিকেল এ নিয়ে গিয়েছিল।সেখানে কোন বেডের ব্যবস্থা করতে না পেরে ফ্লোরেই আমার থাকার জায়গা হয়েছিল।কিভাবে সেই সময় গুলো পার হয়েছে জানিনা।মাঝে মাঝে যখন জ্ঞান আসত,চোখ খুলে দেখতে পারতাম অয়ন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।সেখান থেকে ফেরার পর ঠিক করেছিলাম,ভালো যদি বাসতেই হয় তবে বাবা-মা,ভাই বোন আর বন্ধুদেরই বাসব।এরা থাকতে আমি মারা যাবো এক মেয়ের জন্যে!

অয়ন ওর বান্ধবী সিঁথি কে খুব ভালোবাসত।তবে মনে মনে।নানা খিস্তিখেউর করে ওকে বুঝিয়েছি,”প্রেমের কথা গোপন করে লাভ নেই।জানিয়ে দে।“ ও হাসত।বলত,”সময় হোক।”
একদিন ফেইসবুক এ ঘাটাঘাটি করছি।অয়ন বিছানায় শুয়ে সিঁথি’র সাথে ফোনে কথা বলছে।
-সিঁথি,আমার বউ হবি?
-কি?
-বললাম,আমার বউ হবি?
-কি সব আজাইরা কথা বলিস তুই?
-না মানে... আমি কিন্তু SERIOUS.
-ধুর...ফোন রাখ।
বলে সিঁথি নিজেই ফোন রেখে দেয়।অয়ন আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
-দোস্ত,সিগারেট আছে নাকি রে?
-ভাগ শালা,এতোক্ষন ফোনে কথা কইতে কইতে আমার ৭টা বিড়ি শেষ করছিস।আর ২টা আছে।দেয়া যাবে না।
-দে না দোস্ত।সকালেই পেয়ে যাবি।
-আমি বলি কি দোস্ত,তুই সিঁথি’র পেছনে লেগে থাক।কাজ হয়ে যাবে।
অয়ন যে সত্যিই আমার সেই কথা মেনে নিবে,সেটা বুঝিনি।

সিঁথি ওর ছোট বেলার স্কুলের বান্ধবী।এখন ডাক্তারী পড়ছে।আমার সাথেও পরিচয় হয়,তবে অনেক পরে।অনেক আগে থেকেই সিঁথিকে অয়ন পছন্দ করত,কিন্তু বলার সাহস ছিল না।ভেবেছিলাম কখনও বলতেই পারবে না।কিন্তু সে সত্যিই সিঁথিকে ওর ভালোলাগার কথা বলেছিল।সব শুনে সিঁথি বলেছিল,
-বাবা মা কখনই মেনে নিবে না।আমি তাদের অমতে কিছুই করতে পারব না।
-তোকে কারও অমতে কিছু করতে বলছি না তো।
-তার পরেও সম্ভব না।ভালোবাসা তো দুইটা মনের ব্যপার।তাইনা?আমি কখনও তোকে সেরকম ভাবে দেখতে পারিনি।চেষ্টা যে করিনি,তা না।কিন্তু যা পারিনা,তা করতে যাবো কেন?
-একটু চেষ্টা করে দেখ,ভাল লাগতেও তো পারে।
-না,সম্ভব না।
-তুই অন্য কাউকে পছন্দ করিস?
-করলে তোর কি?আমাকে ছেরে দিবি?
-তোকে খুশি দেখতে চাই।
-সত্যিই যদি তাই চাস,তাহলে আমাকে আর বিরক্ত করিস না।আর,যোগাযোগ না রাখলেই আমি বেশি খুশি হব।

সিঁথিকে খুশি করতেই বোধহয় অয়ন আর ওকে “বিরক্ত” করেনি।তারপর হুট করেই স্কলারশীপ পেয়ে ও জার্মানি চলে যায়।আজ সে আসছে...

দূর থেকে অয়নকে দেখে হাত নাড়ালাম।কাছে এসেই আবার সেই পুরানো হাতাহাতি শুরু।
-আরে শালা,তুই তো মোটকু হয়ে গেছিস রে।
-হ রে মামা।বিদেশের বাতাসে ভিটামিন ওড়ে তো।দেখ না,আর কয়েক দি থাকলেই ভুঁড়ি ঘাড়ে করে ঘুরতে হত।হা হা হা...
-চল বাসায় যাই।আম্মা রে কইছি,ডিম চপ আর গরুর ভুনা করতে।আজ আমার বাসায় রাতে থেকে কাল তোর বাসায় যাবি।
-তোর মনেই আছে আমার পছন্দের আইটেম গুলার কথা?
-আরে নাহ,আজ টিভি তে রেসিপি দেখাইলো,তাই মনে পড়ল।হে হে... চল তো।
-দোস্ত একটা কথা ছিল। সিঁথি কই?
-স্বামীর বাড়ি।
-বিয়া হইছে নাকি?
-করব না তো কি তোমার জন্য *** ফাঁকা কইরা বইসা থাকব?
-কই থাকে এখন?
-উত্তরা।
-চিনিস নাকি জায়গা টা?
-হু...
অনেক বুঝানোর পরও ওর জেদের কাছে হার মেনে যেতে হল উত্তরায়।
সিঁথি’র বাসায় কলিংবেল নেই।দরজার নব ঝাকানোর অনেক পরে দরজা খুলল সিঁথি নিজেই।শুকিয়ে গিয়েছে মেয়েটা।অয়ন বলে ওঠে,
-চিনতে পারছিস সিঁথি?
-চিনব না ক্যান?
-ভেতরে আসতে বলবি না?
-আয়,তবে খেয়ে যেতে বলব না।বাসায় তেমন কিছু নেই।
বলে হাসতে লাগল সে।আমরা ভেতরে গেলাম।পলেস্তারা খুলে পড়া দেয়ালে মাকড়শা নিজের সম্পত্তি ভেবে জাল বুনেছে।আসবাব বলতে এক কোণায় একটা বিছানা,একটা আলনা,দেয়ালে ঝুলানো ছোট্ট আয়না আর একটা টেবিল।পাশেই রান্নাঘর।অনেক্ষন কথা বলার পর আমি সিঁথিকে জিজ্ঞেস করলাম,
-তোর বর কই?
-ও একটু বাইরে গিয়েছে।
-তোদের ফ্যামিলি কি ব্যপারটা মেনে নিয়েছে?
-নাহ্‌।মানবে বলে মনে হয়না।
অয়ন চোখ বড় বড় করে আমাদের কথা শুনছিল।হঠাৎ করে উঠে দাঁড়িয়ে সিঁথিকে বলল,”থাক যাই।ভালো থাকিস।পরে দেখা হবে।“ বলে আর কোন কথা না বলে বেরিয়ে গেল।আমিও ওকে অনুসরণ করলাম।গাড়িতে বসেই বলল,
-কি ব্যপার বলতো!
-ভালোবেসে দুজন ঘর ছেড়েছিল।ওর স্বামী ওষুধের দোকানে কাজ করত।পরিবার মেনে নেয় নি।
-আমাকে আগে বলিস্‌নি ক্যান?
-কি করতি তুই?

অয়ন চুপ হয়ে যায়।ওর চোখ ভেজা।কান্না লুকানোর বৃথা চেষ্টা করতে থাকে ছেলেটা।ওকে কাঁদার সময় দেই আমি। কাঁদুক ও। অনেক কান্না জমা হয়ে আছে অয়নের...
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৩ ভোর ৬:১৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×