মেঘে মেঘে ঘর্ষণে এবার যেন বিজলী চমকালো রবির দৃষ্টিতে, হৃদয়ে। তিথি এসে দাঁড়িয়েছে গলির মুখে। একা নাকি! এলোমেলোভাবে রাস্তার এপাশ ওপাশ তাকাচ্ছে রিকশার খোঁজে। এরই ফাঁকে রবির সাথে দুই-একবার চোখাচোখিও হলো। আজ তিথির তাকানোর ভঙ্গিটা এতো নরম কেন! রবির সাথে ওর দৃষ্টি মিলে গেলে তো তিথি এমন ভাব করে যেন নোংরা কিছু দেখে ফেলেছে, মহাপাপের কাজ হয়েছে। আজ এমন কেন! তবে কি আজ শ্রাবণের মেঘ ভর করেছে তিথির হৃদিকোণে!
রবি প্রথমবার যখন তিথিকে প্রপোজ করেছিল এরপর থেকেই তো তিথি ওকে দেখতে পারে না। দেখলেই ভেংচি কেটে চোখ ফিরিয়ে নেয়, মুখ তো সেই কবেই ফিরিয়েছিল। তবুও রবি আজ দাড়িয়েছে তিথির পাণিপ্রার্থী হয়ে, একপলক কাঠালচাপার গন্ধ মেশানো মনের দৃষ্টি হাতের মুঠোয় নিয়ে। শ্রাবণে ঈদ বলে কথা। আজ... যদি কিছু হয়ে যায়! গল্প কবিতায় তো শ্রাবণ এক প্রণয়ের মহাপুরুষ। তার জীবনে হবে না কেন!
তিথি রিকশা পেয়েছে। একপাশে সরে এসে রবিকে সামনের দৃষ্টিতে রেখে বসেছে। এবার রবি পলক ফেলবে না। তিথিও তার দিকে চেয়ে আছে একপেশে ভাবে। সেই চোখের চাওয়াতে কি আছে, কি তার অর্থ তা রবির বোঝার দরকার নেই যেন। এবার সত্যি সত্যি মেঘ ডেকে উঠলো, একসাথে তিনটি আকাশে। হন্তদন্ত হয়ে তিথির মা এসে রিকশায় উঠে পড়ল। তিথি চোখ ফেরালো, সামলে নিল চটজলদি। রবি পারল না।
রবি যে তার মেয়ের দিকে অন্য কোন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বুঝতে বাকি থাকে না তিথির মায়ের। 'এই রিকশা চল'- বেশ জোরেশোরেই বললেন তিনি যাতে রবির হুশ ফেরে। রবি ফিরল, কিন্তু একটু পাগলামি নিয়েই ফিরল।
সামন দিয়ে তিথিদের রিকশাটা যাওয়ার সময় তিথির মায়ের একস্রোত অগ্নিদৃষ্টিও রবিকে আটকাতে পারলো না। মোটরসাইকেল স্টার্ট করে ওদের রিকশার পিছু নিল রবি। এক মিনিটেই নাগাল পেয়ে গেল রিকশাটার। কথাবার্তাহীন বৃষ্টি চুপুচাপ স্বর্গদেবীর মত তখনই নেমে এলো যেন। তিথির মা হুড তোলার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লেন। একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে রবি গান ধরল, তার শখের মোটরসাইকেলটা, রাস্তার পাশের চায়ের দোকানের টিনের চালে পড়া বৃষ্টির পানির শব্দ যেন তার গলার সাথে মিলিয়ে অনবদ্য কোন ইন্সট্রুমেন্টাল তৈরী করে ফেলল নিমিষেই।
'এমনও দিনে বলা যায়, এমনও ঘন ঘোর বরিষায়...'
এইপ্রথম সিনেমার বাইরে স্লোমোশনের অস্তিত্ব খুজে পেল রবি। রিকশাটা কাটিয়ে হাত দশেক সামনে গিয়ে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকেই ঘাড় ঘুরিয়ে পেচনে থাকালো রবি। তিথি আর তিথির মা হুড থেকে মাথা বের করে তার দিকে তাকিয়ে আছে, তিথির মুখে হাসি। তিথির মায়ের অগ্নিদৃষ্টিটাকেও যেন এই দুইমিনিটের বৃষ্টিজলেই একেবারে গলিয়ে আদুরে বানিয়ে ফেলেছে।
পিক-আপ টেনে তার দুইচাকার পংখীরাজের গতি বাড়ালো রবি। সূচের মত বৃষ্টির ফোটা পড়ছে তার মুখে, চোখে, কপালে। তাতে কি বা আসে যায়। এই শ্রাবণধারাই তো তাকে আরেকবার স্বপ্ন দেখার সাহস যোগাচ্ছে। নিশ্চয়ই তিথিও এখন রিকশার হুড ফেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টিজলকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। আর ওর মা পড়মড়ি করে হুড তোলায় ব্যস্ত।
আর পেছনে তাকালো না রবি। সেই এক চিলতে হাসিতে যে সে তিথির কাছ থেকে তাকে নিয়ে নিজের মত করে ভাবার অধিকার নিয়ে নিয়েছে।
(ছবিখানা গুগল থেকে ডাউনলোড মারা)