কুয়েটে তো ৪ বছরের আগেই বের হওয়া যায়” এই কথাটা এখন প্রায় রূপকথার মতন শোনায়। যেই কুয়েটে 2k4 ব্যাচ (২০০৪ সালের ব্যাচ) ৩ বছর ৮ মাসে বের হয়েছে সেখানে মাত্র ৪ বছর পরেই 2k8(২০০৮ সালের ব্যাচ) ৪ বছর ৫ মাসে এখনো বের হতে পারলোনা।
বাংলাদেশের অন্যতম সেরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কুয়েটে শিক্ষক সমিতির ধর্মঘটের জের গত দেড় মাস ধরে সব ধরনের ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ আছে। এতে করে আউটগোয়িং 2k8 ব্যাচের মাত্র ২-৩ টি পরীক্ষা বাকি থাকা সত্বেও তারা আটকে আছেন। এছাড়াও স্থগিত হয়ে আছে 2k9 ব্যাচের ৩-২ পরীক্ষাও। ক্লাস না করে বসে আছে 2k10,2k11 ও 2k12 ব্যাচ। মূলত শিক্ষক সমিতি এবং প্রশাসনের মধ্যে দড়ি টানাটানির কারনেই এই ধর্মঘট এবং যার সবচেয়ে বড় স্বীকার হচ্ছেন সাধারণ কুয়েটিয়ানরা।
চলমান এই শিক্ষক ধর্মঘটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে 2k8 ব্যাচের ছাত্ররা কারন এই ধর্মঘট না হলে তাদের এতদিনে ডিফেন্স শেষ হয়ে রেসাল্ট হয়ে যেত।2k8 ব্যাচের অনেকেই চাকরীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার হাতে নিয়ে বসে আছেন কিন্তু পরীক্ষা শেষ না হওয়ার কারনে জয়েন করতে পারছেন না। যারা উইন্টার সেশনে বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তারাও এই মূহুর্তে তাদের কাজ এগিয়ে নিতে পারছেন না। ইতোমধ্যে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ থাকায় ক্যাম্পাসে ছাত্র ছাত্রীরা ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করেছেন এবং তাদের পরীক্ষা শেষ না হওয়ার কারনে বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি কুয়েট ক্যাম্পাসে তাদের ক্যাম্পাস রিক্রুটমেন্ট কার্যক্রম চালাতে পারছেন না। মাইক্রোসফট বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই কুয়েটে তাদের প্রোগ্রাম স্থগিত করেছেন এবং Samsung Bangladesh Research & Development Centre ২৯ তারিখ ক্যাম্পাস রিক্রুটমেন্টের জন্য তাদের কুয়েটে আসার পরিকল্পনা বাতিল করেছে!!!
এবার আসুন আমরা দেখে নেই কেন এবং কি কারনে কুয়েট শিক্ষক সমিতি তাদের এই ধর্মঘট পালন করছেনঃ
১। সাম্প্রতিক কালে সিভিলের এক ঘটনায় বহিস্কৃত ছাত্র ছাত্রীরা হাইকোর্ট থেকে বহিস্কারাদেশের উপর স্থগিতাদেশ নিয়ে এসে পরীক্ষায় অংশ নেন। এটা শিক্ষক সমিতি মানেন না। এবং এই ছাত্রদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগ করতে হবে।
বি.দ্র. হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে উকিল নোটিশ পাঠানোর পরে তারা এই দাবিটি তুলে নেন। তবে পরবর্তীতে শিক্ষক সমিতির দাবীর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উক্ত ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে উকিল নিয়োগ দেন।
২। মেকানিকালের বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া এবং ইলেক্ট্রিকালের শিক্ষকের গাড়ি ভাঙচুরের বিচার চান তারা। অর্থাৎ ক্যাম্পাসে শিক্ষক অবমাননার বিচার চান শিক্ষক সমিতি।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য ক্যাম্পাসে একদিন কিছু বিপথগামী ছাত্র উত্তেজিত হয়ে মেকানিকাল ডিপার্টমেন্টের হেড এবং শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাসুদ স্যারের বিরুদ্ধে অশালীন ভাষায় স্লোগান দেয়। ওইদিনই আরেকটি মিছিল থেকে ইলেকট্রিকাল ডিপার্টমেন্টে এক শিক্ষকের সাইকেলে একটি লাথি মারা হয়(অবশ্য পত্রিকায় এবং হলের নোটিশ বোর্ডে শিক্ষক সমিতির বরাত দিয়ে একে ‘গাড়ি ভাঙচুর’ বলে চিহ্নিত করা হয়)।
উপরোক্ত দুটি ঘটনাই ন্যাক্কারজনক এবং এই দুটি ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার সকল কুয়েটিয়ান ছাত্র-ছাত্রীরা চায়। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে এই ঘটনার তদন্ত এবং বিচার করার দায়িত্ব এবং ক্ষমতা শুধু মাত্র প্রশাসনের। ছাত্রদের এখানে কোন এখতিয়ার নেই। তবুও কুয়েট শিক্ষক সমিতি কেন প্রতি সপ্তাহে মিটিং করে তাদের ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন তা কোনভাবেই বোধগম্য নয়।
এটা তো গেল কুয়েট শিক্ষক সমিতির কথা এবার আসি প্রশাসনের দিকে। কুয়েট প্রশাসনও শিক্ষক অবমাননার কোন সুরাহা করছেন না। আমাদের ভিসি স্যার তো গত সিটি কর্পারেশন নির্বাচনে পুরো শহর চষে নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়ে বেড়িয়েছেন, এদিকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ১ মাস ধরে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ তা নিয়ে তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। যেন রোম যখন পুড়ছে সম্রাট তখন বাঁশি বাজাচ্ছেন।
প্রচলিত আছে শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাসুদ স্যার বিএনপিপন্থী এবং ভিসি স্যারা আওয়ামীপন্থী হওয়ায় তাদের মধ্যে একটি ঠান্ডা যুদ্ধ বিরাজমান। তাই কোন পক্ষই অপরকে ছাড় দিতে নারাজ। কিন্তু তাদের মধ্যকার এই দড়ি টানাটানির মধ্যে পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা পড়ে যাচ্ছেন সীমাহীন সেশন জটে।
এদিকে মাসের পর মাস কুয়েট বন্ধ থাকলেও মিডিয়ার কোন ভ্রূক্ষেপ নেই। যেখানে বুয়েট ১ সপ্তাহ বন্ধ থাকলেই সেটা প্রথম আলোর হেডলাইন হয়ে যায়, কিন্তু তেলিগাতিতে পচতে থাকা কুয়েটিয়ানদের কথা কোন মিডিয়াতেই নেই।
তাই ব্লগের মাধ্যমেই আজকে শিক্ষক সমিতি, উপাচার্য, শিক্ষামন্ত্রী এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সকলের তরেই আবেদন দয়া করে আমাদের এই নোংরা রাজনীতি থেকে বাঁচিয়ে ক্লাসে ফিরে আসতে দিন। আমরা ক্লাস করতে চাই। শিক্ষা আমাদের অধিকার।
সহব্লগারদের যারা পারেন শেয়ার করে ব্যাপারটা সবাইকে জানানোর অনুরোধ করছি।