somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ অবণী, দাঁড়াও!! আসছি....

১০ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-হ্যালো, আঙ্কেল। একটু অবণীকে দেয়া যাবে?
-না। তুমি কে?
-আমি অবণীর বন্ধু ফাহাদ। ও কি খুব ব্যস্ত?
-হ্যা। অবণীর আজ বিয়ে। সে তার ঘরে বিয়ের শাড়ি পড়ে তৈরী হচ্ছে।

এটুকু বলেই অবণীর বাবা ফোন কেটে দিলেন। ফাহাদ অবণীর কাছে শুনেছে ওর বাবা ফোনে কখনও আধামিনিটের বেশি কথা বলেন না। আজ তার প্রমাণ পেয়ে গেল। কিন্তু অবনী এখনও ঘরেই আছে এটা শুনে একটু চিন্তা হচ্ছে ফাহাদের।

আজ তাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। ঠিক এগারোটায় অবণীর এখানে উপস্থিত থাকার কথা। এখন পৌনে এগারো বাজে।

দোতলার বারান্দা থেকে ফাহাদ আকাশ দেখল কিছুক্ষণ। অদ্ভূত কারণে এই দুপুর ছুঁইছুঁই সকালেও আকাশ ভোরবেলার স্নিগ্ধ ভাব ধরে আছে।
বারান্দা থেকে ঘরে ঢুকল ফাহাদ। সোফার উপর থেকে তিনজোড়া আধখোলা চোখ এখন তার দিকে চেয়ে আছে। অদ্রি, শশী আর আবির সোফায় আধশোয়া হয়ে বসে টলছিল।

অদ্রি চোখ ঘষতে ঘষতে বলল, কি আসবেনা অবণী?
-এখনও বাড়িতে। ওর বাবা ফোন ধরেছিল। বলল দেয়া যাবে না।

ফোনটা সোফায় ছুঁড়ে ফেলে আবিরের পায়ে মাথা রেখে পা ঝুলিয়ে শুয়ে পড়ল ফাহাদ।

আজ অবণী আর ফাহাদের পালিয়ে বিয়ে করার কথা। অবশ্য ফাহাদ পালিয়ে বিয়ে কথাটা বলতে নারাজ। তার এই ব্যাপারে যুক্তি আছে। সবাই পালিয়ে বিয়ে করাকে খারাপ চোখে দেখে। কিন্তু কেউ বুঝতে চায়না দু’জন প্রকৃত প্রেমিক-প্রেমিকা কখন পালিয়ে বিয়ে করে।

এক অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীর সাথে আজ অবণীর বিয়ে। বিয়ে ঠিক হয়েছে এক সপ্তাহ আগে। আর ওরা পালিয়ে বিয়ে করবে এটা ঠিক হয়েছে চারদিন আগে। অবণী চারদিন সময় নিয়েছিল ফাহাদের কাছে তার পরিবারকে মানাতে। কিন্তু গতরাতে অবণী ফোন করে বলল, তার বাবার রাগের ভয়ে সে কিছুই বলতে পারেনি। আগামীকাল যেন ঠিক এগারোটায় ফাহাদ আবিরদের বাসায় থাকে।

শশী, অদ্রি, আবির এরা ফাহাদ আর অবণী দু’জনেরই বন্ধু। ফাহাদ ব্যাপারটা বলতেই প্ল্যান করে ফেলল তিনজন। ঠিক এগারোটায় সবাই আবিরদের বাসায় থাকবে। আবিরের বাবা-মা দু’জনই হজ্জে গিয়েছেন। এজন্য আবিরদের বাসাটাই ভাল।

এদিক থেকে শশী গাড়ি নিয়ে আসবে। ওর বাবা ড্রাইভার ছাড়া শশীকে গাড়ি দেয়না। এজন্য ড্রাইভারকে ম্যানেজ করে ফেলেছে পাঁচশ টাকা খরচ করে। অবণী আসতেই ওরা কাজ়ী অফিসে যাবে গাড়িতে করে। তারপর সবাই মিলে খেতে যাবে পুরান ঢাকায়।

খাওয়া-দাওয়া শেষে ফাহাদের বাড়িতে একবার ঢু মারা হবে। ফাহাদ রাতে বড়আপাকে বলে রেখেছে। বড়আপা মা কে মানাতে পারবে কিন্তু বাবাকে নিয়েই যত সমস্যা। অবশ্য বড়আপা প্রেগনেন্ট এজন্য ফাহাদ বাড়তি সুবিধা পেতেও পারে। বাবা বড়আপার সাথে বেশি তর্ক করবেন না এজন্য। ফাহাদের বাসায় না মেনে নিলে আবার আবিরের বাসায় ফিরে আড্ডা হবে।

এইটুকু পর্যন্ত প্ল্যান হয়েছে।

কিন্তু অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে এত মানুষের ভালবাসার মাঝেও ফাহাদের খুব একা লাগছে। হঠাৎ খুব ভয় করছে ওর। অবণী না আসলে কি হবে? যদি কোনভাবেই বাড়ি থেকে বের হতে না পারে?
শতপ্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে ফাহাদ কাঁপছিল প্রায়। অবনী ওই অস্ট্রেলিয়ান গরুটার সাথে বিয়ের স্টেজে বসে আছে ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে ফাহাদের।

প্রথমে ফাহাদ অপ্রস্তুতই হয়ে গেল প্রায়। তার বন্ধুরা মাঝে মাঝে তাকে কাঁদিয়েই ছাড়ে। তবে প্রতিবারই হাসতে হাসতে কাঁদতে হয়। এইবেলায় শশী ‘অবণী, বাড়ি আছ?’ আবৃত্তি শুরু করেছে। কি দারূণ করছে মেয়েটা। এদিকে আবার আবির ঘাড় মাসাজ করে দিচ্ছে ফাহাদের। সবই ওর টেনশন কমানোর জন্য।

ফাহাদ এক ঝটকায় উঠে বলল, দোস্ত চল। ওর বাড়ির দিকে এগোই। সাড়ে এগারো বাজে।
শশী বলল, যদি অবণী অন্য রাস্তায় এসে আমাদের দেখা না পায়? রাস্তায় আমাদের দেখা নাও হতে পারে।
ফাহাদ বলল, তাহলে তুই আর অদ্রি থাক। আমি আর আবির যাই।
আবির এবার ইতস্তত করে বলল, দোস্ত, দেখ। যদি অবণীর বিয়ে হয়ে যায় তাহলে ওখানে গেলে তোর আরও কষ্ট হবে।

হঠাৎ ঝরঝর করে বৃষ্টি পড়া শুরু করল। তখনই ফাহাদের ফোনটা বেজে উঠল।

শশী ফোন ধরে বলল, হ্যা অবণী, বল।

ফাহাদের চোখে হাসি খেলে গেল। সাথে আচমকা দুঃসংবাদের ভয়ও আছে। তবে নিজেকে স্বান্ত্বনা দিল ফাহাদ, অবণী যখন ফোন করেছে তখন নিশ্চয়ই দুঃসংবাদ দেয়ার জন্য নয়।

-তোর সাথে কথা বলবে।
শশী ফোনটা ফাহাদের দিকে ছুঁড়ে দিল।

-হ্যালো?
ফাহাদের হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে। মনে হলো এই একটা ফোনকলের উপর ভাসমান ভেলার মত দাঁড়িয়ে আছে সে।

-হুম। আচ্ছা শোন, আবিরের বাড়ির নাম্বারটা যেন কত? আমি অনেকক্ষণ মেইনি রোডে দাঁড়িয়ে। কোন রিক্সা পাচ্ছিনা।

ফাহাদের মনে হলো সে ভেলার বৈঠা পেয়ে গেছে। তার হৃদস্পন্দন আরো বেড়ে গেল।

-অবণী, দাঁড়াও! আসছি....

ফাহাদ অবণীপাণে ছুটতে লাগল। বৃষ্টির জলে সদ্য ভেজা মাটি তার নগ্ন পা দুটিকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে মৃদু শিস বাজিয়ে।
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×