একটা ছোট্ট গ্রামের কথা কল্পনা করি
খুব খরা ছিল গ্রামটায়, ফলত না কিছু
না খেয়ে মরত মা, না খেয়ে মরত বাবা
কঙ্কালসার হয়ে যেত চার বছরের শিশু,
স্তন শুকিয়ে যেত সদ্য প্রসূত মার।
হঠাৎ একদিন কিছু সাহসী তরুণ-তরুণী
আর কিছু প্রৌঢ় ঘর থেকে বেরিয়ে এল
দূরের ওই নদীটিকে কেটে গ্রামের দিকে
নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের
অনেকেই কাজ শুরুর আগেই স্রোতে
ভেসে গেল, না খেয়েও মরল কিছু।
কিন্তু পিছু হটল না কেউ, ঘাম ঝরিয়ে
যেতে লাগল তারা,সুন্দর একটা খাল গ্রামের
মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করার ইচ্ছা ছিল তাদের।
কিন্তু পরিকল্পনামত কাজের অভাবে তারা যেটা
পেল, বিস্তীর্ণ এক জলভূমি, একটা বিশাল বিল।
যেটাই হোক, জলধারা পেয়ে তারা বেজায় খুশি।
আচানক এর মধ্যেই দু’দল বাটপার-স্বার্থানেষী
লোকের উদ্ভব হয়, একদল নৌকা বানালো,
বিলে মাছ ধরতে লাগল,আরেকদল বিলেত থেকে
বীজ এনে ফসল ফলাতে শুরু করল বিলের ধারে।
গ্রামের মানুষজন ক্ষেতে মজুরি খেটে, মাঝিগিরি করে
তাদের পেট চালাতে লাগল, কিন্তু নৌকায় মাছ ধরা
কিংবা ফসল ফলানোতে তারা পাত্তা পেত না, শুধু
ঐ দুইদলের লোকেরাই একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়েছিল সেগুলোর।
তাই সাধারণদের মাছ আর খাদ্যশস্য সর্বদা কিনে
খেতে হত, অথচ তবুও তারা চুপ ছিল কেননা
তারা বেচে ছিল সেটাই তাদের কাছে বড় মনে হত।
শীত-গ্রীষ্মকালে বিল শুকিয়ে যেত বলে তাদের
মাছ বেশি দামে কিনতে হত আর বর্ষাকালে
ফসল ফলানোর জমি থাকত না বলে সংকট হত
খাদ্যশস্যের, দাম বাড়াত ব্যবসায়ীরা, মুনাফা বাড়ত।
তারপরেও কষ্ট করে চলছিল ওরা, মানিয়ে চলল
কিন্তু আরও অধিক মুনাফার লোভ ভর করল
মাছ আর খাদ্যশস্য ব্যবসায়ীদের উপর।
কূটবুদ্ধি করল দু’দল মিলে, বছরের অর্ধেক সময়
মাছ ব্যবসা হবে আর বাকি অর্ধেকে খাদ্যশস্য,
এমনই এক চুক্তি করল তারা। এভাবে পালাক্রমে
ব্যবসা করে তারা ঘর ভর্তি মুনাফা লুটতে থাকল,
গ্রামবাসীদের কাছে তারা বল সংকট চলছে, তারা
বলল সব প্রাকৃতিক আবহাওয়ার জন্য ঘটছে, আর
এদিকে মুনাফা নিজেদের মাঝে ভাগ করে নিত তারা।
কিন্তু তবুও সাধারণেরা কিছু বলল না, তারা বর্ষায়
মাছ কিনে শুটকি করে রাখত পরের ছ’মাসের জন্য
আর ধান-গমের ছাতু করে রাখত ভবিষ্যতের জন্য।
এরপর তারা ভাত-মাছ একসাথে খেতে পারল না
তবুও তারা কিছু বলল না, মেনে নিল
তারা মানিয়ে চলল, তারা বরাবর তাই করে আসল
মানিয়ে চলা তাদের রোগে পরিণত হল।
অথর্ব জাতি
০৯/০৪/১৩