১)
এস এস সি পরীক্ষা শেষ করে, কলেজে ভর্তি হয়েছি। ম্যাথ আর ফিজিক্স এ প্রাইভেটে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু কেমেস্ট্রি কোন স্যার এর শিডিউল পাচ্ছিলাম না। এক ফ্রেন্ড বলল, দোস্ত, চল অখ্যাত কোন স্যার এর কাছে ভর্তি হই, সুবিধে মত সময়ে পড়তে পারব, আর টাকা পয়সাও কম লাগবে। চিন্তা করে দেখলাম ভালই তো, খারাপ কি।
নির্দিষ্ট দিনে স্যারের বাসায় যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি, ও কল দিয়ে বলল, আসতে পারবে না, ঠিকানা পাঠাচ্ছে।
আমি ঠিকানা মত গেলাম। দরজায় নেম প্লেট লাগানো। Krishna Pada Sutradar.
ও তাহলে ইনি একজন ম্যাডাম। হুম, ভাল।
নক করলাম। একজন পুরুষ মানুষ দরজা খুলে দিলেন।
-কৃষ্ণা ম্যাডাম আছেন?
-না, তবে কৃষ্ণ স্যার আছেন, আপনার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে
আমি হকচকিয়ে গেলাম।
পরে অবশ্য জেনে ছিলাম, স্যার বিবাহিত এবং স্যারের মিসেস এর নাম Krishna pada sutradar, মানে কৃষ্ণা পদ সুত্রদর (!!)
মজার ব্যাপার হল স্যার নাকি ম্যাডামকে কলেজ থেকে পছন্দ করতেন। কিন্তু ম্যাডাম পাত্তা দিচ্ছিলেন না। অবশেষে ট্রাম কার্ড হিসেবে স্যার বললেন, দেখ তোমার আর আমার নাম একই। তার মানে তোমাকে আমার জন্য করেই তৈরি করা হয়েছে, রাব নে বানা দে জোডি,
এই কথা শুনে ম্যাডাম মুচকি হেসে বললেন, ওকে, আই লাভু
কি রোমান্টিক! কি রোমান্টিক!
২)
ফরেন্সিক মেডিসিন সেকেন্ড টার্ম পরীক্ষা দিতে গেছি। আমার রুল ১০০ এর পরে, তাই আমার ভাইভা ২ নং বোর্ডে পরেছে। এই স্যার খুব কঠিন।
ভাইভা শুরুর আগে খবর পেলাম স্যার নাকি কোর্টে সাক্ষি দিতে গেছেন, তাই ওই বোর্ডে পরীক্ষা নিবেন নতুন এক স্যার। খুশি খুশি মনে পরীক্ষা দিতে গেলাম।
-ফরেন্সিক মেডিসিনের Definition বল
বললাম। পছন্দ হল না।
-মেডিকেল জুরিস পুডেন্স এর Definition বল
বললাম, পছন্দ হল না।
কি বিপদ। আগের স্যার At least definition পছন্দ করতেন, ইনি তো তাও করছেন না।
-অটপ্সি এর Definition বল।
বললাম, পছন্দ হল না।
এইবার স্যার গেলেন ক্ষ্যাপে।
-এই ছেলে কি সব উল্টা পাল্টা বলছ। তুমি আমাকে চেন?
আমি মিথ্যে করে বললাম, চিনি
-আমার নাম জান?
ধমক খেয়ে একবার মিথ্যে বলা যায়, দুই বার না। আমি সত্যি বলে দিলাম। না স্যার জানি না।
স্যার আইডি কার্ড বের করে আমাকে দেখালেন। ‘DR. Musle Uddin’
-বল, নাম কি আমার?
আমি একটু আশ্বস্ত হলাম। যাক এবার অন্তত উত্তর ভুল হবে না। আমি ৩২পাটি দাত বের করে বললাম
-ডাক্তার মাসল উদ্দিন(পরীক্ষার উত্তেজনায় s এর পর যে c নেই খেয়ালি করিনি)
-কি?
-স্যার আপনার নাম, ডাক্তার মাসল উদ্দিন
এই বার স্যার রিতিমত উত্তেজিত হয়ে গেলেন। চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে বললেন
-তুমি কি আমার সাথে ফাজলামি কর? এক থাপ্পড় মেরে ফাজলামি বের করে দিব। আমার নাম ‘মোসলে উদ্দিন’। আমি দেখে নিব তুমি কি করে প্রফ পাস কর।
স্যার অনেক দুষ্টু তাই না?
আমি মাটির দিকে তাকিয়ে বললাম, হ্যা ধরণী দ্বিধা হও
ধরণী দ্বিধা হল না, কিন্তু স্যারের রুমের দরজা খুলে গেল। স্যারের চেঁচামেচি শুনে পিয়ন দেখতে এসেছে কি হয়েছে। আমি সেই দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলাম।
স্যার অনেক দুষ্টু তো তাই দুষ্টামি করছেন, কিন্তু আমি অনেক ভাল, এজন্যে আমার দুষ্টামি করা উচিত হবে না।
হায়! সেলুকাস!
৩)
থার্ড ইয়ারে মাত্র উঠেছি। মুখবই এর অলি গলি সবে মাত্র ভাল করে চিনতে শিখেছি। হঠাৎ করে আমার ফ্রেন্ড লিস্টের একটা নামের দিকে চোখ আটকে গেল।
Phil xoty Jones.
ডানে বামে কি আছে ব্যাপার না। জ্যোতি নামটা দেখেই আমার স্বাপ্নিক মন মনের মন্দিরে এক মেয়ের ছবি একে ফেলল। শুরু হয়ে গেল লুলামি
-Hey, Darling
No reply
-hey, sweetie
No reply
-hey, ans pls
এইবার আমার একটু খটকা লাগল। প্রোফাইল চেক করলাম।
ভয়ের এক শীতল স্রোত সারা শরীরে বয়ে গেল। ইনি আমারি মেডিকেলের সিনিওর ভাই।
আমি আবারো ধরণীকে দ্বিধা হতে বললাম। ধরণী এবারও দ্বিধা হল না। কিন্তু উপর থকে দড়ি পরল,আমি বেয়ে বেয়ে উঠে গেলাম। মানে আমরা রুম পরিবর্তন করে নিচ তালা থেকে ৪ তালায় গেলাম। এবং কোথায় জানেন? ওই ভাইয়ের ২ রুম পাশের রুমে।
ভাইয়ের মাশাল্লাহ শরীর স্বাস্থ্য ভাল। একবার আমাকে ধরতে পারলে আমার মত চিকনাকে ফুঁ দিয়ে ৪ তালা থেকে নিচ তালায় ফেলে দিতে একটুও কষ্ট হত না।
(zoty ভাই আমার শ্রদ্বেয় একজন বড় ভাই। এই ঘটনার পর উনি সম্ভবত আমাকে ব্লক করেছিলেন অথবা আমি ভয় পেয়ে উনাকে রিমুভ মেরেছিলাম। কয়েকদিন আগে অনেক বলে কয়ে উনাকে আবার ফ্রেন্ড বানিয়েছি। ভাই, আশা করি ছোট ভাইয়ের এই অপরাধকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে, ক্ষমার এক অনিন্দ্য সুন্দর দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। অনেক ভাল থাকবেন, সবসময়)
৪)
এগুলা তো গেল অন্যের ঘটনা। এবার আসি নিজের নামে। আমার নাম ‘দিগুন নাথ’
আমি আগেও একটা স্ট্যাটাসে বলেছিলাম, আমার নামের ‘দ’ এর নিচে কোন ‘ব’ নেই। তাই আমার নামের অর্থ ‘Double’ নয়। আমার নামের অর্থ কি, কেন এই নাম রাখা হল, কে রাখল আমি জানি না।
কিন্তু, মানুষ সত্যি কথার চেয়ে কাহিনি শুনতে ভালবাসে। তাই কেউ আমার নাম জিজ্ঞেস করলে confidently চাপা মারি। এক এক বার এক এক কাহিনি বলি। মানুষ ও খুশি আমিও খুশি।
কিন্তু, বাস্তবতা সব সময় এত সুখের হয় না। আপনি চিন্তা করুন একটা introductory class হচ্ছে। এক হল ভর্তি মানুষ। আপনি নিজের নাম বলছেন।
-কি নাম?
-স্যার দিগুন
-কি?
-দিগুন
-নিপুন?
-না স্যার, দিগুন
-বিপুল?
-না, স্যার, দিগুন
-দিগন্ত? (লও ঠ্যালা)
-না, স্যার, দিগুন
এরপর স্যার ক্লান্ত হয়ে সব বুঝে গেছেন এমন ভাবে উপর নিচে মাথা নাড়েন। আসলে কিছুই বুঝেন নি। এর সাথে আশে পাশের সহপাঠীরা হাসাহাসি করছে, ছুড়ে দিচ্ছে নানা মন্তব্য, যার অনেক গুলোই ১৮+।
তাই ওরিয়েন্টেশন ক্লাস মানেই আমার কাছে এক ভীতির নাম।
আমার অনেক আতেল বন্ধু আমাকে রাগানোর জন্যে বলে দোস্ত তর নামটা কেমন জানি। হাজার হোক মনিষী বলেছেন
‘a beautiful name is better than a lot of wealth’
আমি কিসের মধ্যে কি পান্তা ভাতে ঘি এর মত বলি, দোস্ত
‘নামে নয় কর্মেই মানুষের পরিচয়’
এত প্যাড়া খাওয়ার পর আমি কঠিন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার ছেলের খুব সুন্দর একটা নাম রাখব। সেটা হতে পারে ‘সৌম্য’
কিন্তু, ছেলেটাও নিশ্চয়ই অনেক ঝামেলায় পরবে। কেউ যখন অর নাম জিজ্ঞেস করবে তখন ও বলবে সৌম্য
বাবার নাম কি
দিগুন
হা হা...... তোমার নাম চারগুন হলেই পারত।
তখন ও হয়ত রাগ করে আমাকে বলবে তোমার নাম দিগুন কেন?
আমি তখন উদাস গলায় বলব, বাবা রে তুই তো second stage এ গিয়ে ধরা খাস, আমি তো সারা জীবন first stage এই ধরা খেয়েছি। হা হা
** আমার এক ফেইসবুক ফ্রেন্ড এর নাম ‘করুনাধারায় পুপে’। পুপে শব্দের অর্থ ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় ‘পুতুল’ । পুপের সাথে পেপের খুব মিল আছে। আমি শুধু মিল খুজে বসে আছি। আমার বিখ্যাত রুমমেট সু্যোগ পেলেই পেপে ব্যবহার করে। দোস্ত আজ পেপে আমার স্ট্যাটাসে লাইক দিয়েছে, আজ তো পেপে কমেন্ট করেছে, পেপে এই করেছে, সেই করেছে। বেচারিকে নিশ্চয়ই আমার মত নাম নিয়ে সারাজীবন অনেক প্যাড়ায় পড়তে হয়েছে।
‘করুনাধারায় পুপে
জীবন সত্যি চুষে’
(Life really sucks)