somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্মম ভবিষ্যত

১৬ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০১৪ সালের ১৫ই জুলাই। আজ আমার কলেজ নেই। কলেজ থাকার কথাও না। কারন আজ সরকারি ছুটির দিন। অফিস আদালত সব কিছু বন্ধ।

আমরা, বাংলাদেশ নামক এক অভাগা দেশের ১৬ কোটি মানুষ বছরের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ দিনটিকে অতি সারম্ভরে স্মরণ করছি।

করবই না কেন? আজ আমাদের মহান রাষ্ট্রপতি গোলাম আজমের জন্মদিন। গত বছর ঠিক এই দিনে এক নখদন্তহীন, ভুল চেতনায় সপ্নবিলাসী সরকার উনাকে নতুন করে বাচার সুযোগ করে দিয়েছিল, দিয়েছিল নতুন এক পুনর্জন্ম।
তাই আমাদের রাষ্ট্রপতি সাহেব তার আসল জন্মদিন থেকেও এই দিনটিকে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেন, আর তাই আজ সারাদেশে চলছে আনন্দের বন্যা। দেশের মানুষ আজ আনন্দের সাইক্লোনে ভেসে যাচ্ছে।

এই বিশেষ দিনে আমাদের জন্যে বিনোদনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এজন্যে আজ বিকেল তিনটার দিকে গোলাম আজম চত্বরে সমবেত হতে বলা হয়েছে। বলে রাখা দরকার এই গোলাম আজম চত্বরের পূর্বনাম ছিল প্রজন্ম চত্বর। যা ছিল কিছু বকে যাওয়া, কম্যুনিস্ট ছেলে মেয়ের অনুরবর মস্তিস্ক কর্তৃক প্রসূত নাম। যারা নাকি এখানে একসাথে জড় হয়ে বেলাল্লাপনা করত। তাদেরকে অবশ্য উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হয়েছে। ঘাড়ে ধরে মুক্তিযুদ্ধের ভূত মাথা থেকে নামানো হয়েছে।

আমরা একে একে প্রজন্ম চত্বরে প্রবেশ করছি। চত্বরের প্রবেশমুখে ঝলমলে এক গেট বানানো হয়েছে। গেটের ছাদে আমাদের রাষ্ট্রপতি গোলাম আজমের ছবি। তিনি আমাদেরকে তার মধ্যমা প্রদর্শন করছেন। আমরা উনার এত সুন্দর ছবি দেখে আবেগে প্রায় কাদু কাদু হয়ে যাচ্ছি।

বিশাল এক স্টেজ সাজানো হয়েছে। স্টেজে অনেকগুলা মানুষ। অনেক কষ্ট করে খেয়াল করে দেখলাম, তাদের বুকে সাইনবোর্ডের মত কিছু একটা ঝুলছে। অনেক কষ্ট করে ওখানের লেখা গুলা পড়তে পারলাম। 'আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার নাম হারু মিয়া। আমি একজন জঘন্য অপরাধী। আমার বিচার হওয়া প্রয়োজন। '
এরকম প্রত্যেকটা মানুষের বুকে লেখা।

সবার সামনে সুন্দর এক গদিওয়ালা চেয়ারে আমাদের মহান রাষ্ট্রপতি চুক চুক করে দুধ খাচ্ছিলেন। উনাকে আজ অন্যান্য দিনের চেয়েও অনেক বেশি প্রসন্ন মনে হচ্ছে। অবশ্য খুশি হওয়ারই কথা। আজ একটা বিশেষ দিন।

এমন সময় কেউ একজন আমার হাতে একটা লিফলেট ধরিয়ে দিল। এতে লেখা
'হে মানব সন্তানেরা, মহান রাষ্ট্রপতি গোলাম আজমের আশীর্বাদধন্য দেশবাসী, আজকের এই মহান দিনে এই মহান মিলনস্থলে আপনাদের স্বাগতম। আপনাদের প্রতি নির্দেশ, মাইকে যখন ঘোষনা দেয়া হবে তখন আপনারা ২ মিনিট সজোরে করতালি দিবেন আর ২ মিনিট নিজের বৃদ্বাঙ্গুলি মুখে পুরে ললিপপের মত চুষতে থাকবেন। এরকম করবেন থামার নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত। আপনাদের সুন্দর সময়ের প্রত্যাশায়। ধন্যবাদ।'

তিনটে বাজার সাথে সাথে শুরু হল অনুষ্ঠান। গোলাম আজমের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের লাইন করে দাড় করানো হল। তাদের ঠিক দুই হাত সামনে অস্র তাক করে দারিয়ে আছে সুপ্রশিক্ষিত গোলাম বাহিনী।

একসময় সাইরেন বেজে উঠল। শুরু হল মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ করে গুলি। পেছন থেকে মাইকে ঘোষণা হচ্ছে 'দেশবাসী, আপনারা নির্দেশ মত কাজ করুন। করতালি দিন আর বৃদ্বাআঙ্গুলি চুষতে থাকুন।

আমরা এতই বিনদিত হচ্ছিলাম যে নির্বাক হয়ে গেলাম। ৪৩ বছর পর ১৯৭১ সালের বেঈমানদের, পাকিস্তানের শত্রুদের বিচার হচ্ছে। ব্রাশফায়ার করে এদের হত্যা করা হচ্ছে। আমরা এতই বিনোদিত হচ্ছি যে করতালি দিতে ভুলে গেলাম।

মাইকে আবার ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে নির্দেশ না মানলে আমাদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হবে।

আমরা হাততালি দিচ্ছি। হাততালির শব্দে গুলির আওয়াজ ঢাকা পরে গেছে। আমরা আরও জোরে হাততালি দিচ্ছি যাতে আমাদের গুলির শব্দ শুনতে না হয়।
আমরা চোখ বন্ধ করে আছি। কিন্তু তাও আমাদের চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ে যাচ্ছে।

আমরা জানি না কিসের জন্য এই অশ্রু বিসর্জন?

এটা কি এক পঙ্গু জাতির অসহায়ত্বকে স্মরণ করে নাকি নিজেদের অক্ষমতাকে স্মরণ করে নাকি শুধুই দুঃখের এক বাতাবরণ।

আমরা সত্যিই জানি না
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×