somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘরে ফেরার ডায়েরী। পর্ব-৩।

২৭ শে নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্থানঃ প্লেনের ভিতর।
সময়ঃ খোদা মালুম।


প্লেনে উঠেছি প্রায় চারঘন্টা হোল। এর মধ্যে একদফা ঘুম দিয়েছি, খাওয়া হয়েছে একপ্রস্থ। এখন তাই করার মতো কাজ তেমন নেই। অবশ্য নেই বলাটা পুরোপুরি ঠিক হোলনা। এয়ারপোর্ট থেকে জন গ্রিসামের নতুন বইটি কিনেছি। সেটি পড়তে পারি, কলেজের ছেলেপিলেদের খাতা দেখতে পারি, সিটের সাথে লাগানো ছোট পর্দায় সিনেমা দেখতে পারি, কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনতে পারি, গল্প লেখার খাতা খুলে কিছু একটা লেখার চেষ্টা করতে পারি।
কিন্তু এগুলোর কোন কিছু না করে আমি ল্যাপটপ খুলে ঘরে ফেরার ডায়েরী লিখছি। কখন এই লেখা পোস্ট করতে পারবো জানিনে, তাও লিখেতো রাখি।
ভ্যাংকুভার থেকে দেশের ফ্লাইট ধরা এইই প্রথম আমার। ব্যাপারটা একটু আলাদা। কেন তা বলছি।
আমি যাচ্ছি ক্যাথে প্যাসিফিক এর প্লেনে করে। হংকং এর এই বিমান কোম্পানীটিতে করে এবারই প্রথম ভ্রমন আমার। যেহেতু ফ্লাইটটি হংকং এই যাচ্ছে, তাই সংগত কারণেই আমি ধরে নিয়েইলাম যে এই প্লেনে শুধু বোঁচারাই থাকবে। প্লেনে উঠে নিজের সিটে থিতু হয়ে বসে এদিক-ওদিক তাকাই। যেদিকে তাকাই সেদিকেই ভারতীয় টাইপের চেহারা। পাগড়ী পরা পাঞ্জাবী সর্দারজিদের সংখ্যাই বেশী। আস্তে আস্তে টের পেলাম যে এদের মাঝে বাংলাদেশীদের সংখ্যাও একেবারে ফেলনা নয়।

মাঝে মাঝেই মায়েরা বাচ্চাকে আদুরে গলায় বলছেন,‘ছি আব্বা-কাঁদে না। এই একটু পরেই আমরা বাড়ী পৌছে যাবো।’ (যদিও তখনও প্লেন টেকঅফও করেনি)
সে কথায় কাজ হয়না বলাই বাহুল্য। কেননা বাচ্চা ততক্ষনে টের পেয়ে গেছে যে এখানে বাবা-মা খুব একটা বেশী বকাঝকা (বা চড় থাপ্পড়) দিতে পারবে না। অতএব তার আগেকার ফিঁচফিঁচ কাঁদুনি এবারে বদলে গিয়ে আরও উচ্চকণ্ঠ হয়ে ওঠে। এবারে বাবার ভুরু কুঁচকে ওঠে। ‘কি হচ্ছে কি? থামাও ওকে।‘
তাতে ফল বিরূপ হয়। এবারে মা ও ঝাঁঝিয়ে ওঠেন। ‘ওর কি দোষ? এই রকম চাপাচাপি করে বসা যায়? মনে হয় যেন মুরগির খোপে বসে আছি। বাচ্চা মানুষ, ওর খারাপ লাগছে বলেই তো সেটা প্রকাশ করছে। ওকে দোষ দিয়ে লাভ কি? মুরোদ থাকলে আমাদেরকে ফাস্ট ক্লাশে বসিয়ে দেশে নিয়ে যেতে। ওখানে বসে দেখতে বাচ্চাটা কেমন খুশী হতো।’

এহেন আচমকা আক্রমনে বাবা ঘাবড়ে যান। তিনিতো জানেন যে আশেপাশে বাংলা শোনার কান আরও অনেক আছে। পরিস্থিতি আউত্বের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে তিনি বাচ্চাটিকে কোলে নেন। ‘দাও আমি ওকে থামাচ্ছি।’

মায়ের গজগজানী তাতে কমেনা। ‘তুমি সামলাবে না তো আর কে সামলাবে? ভাবখানা এমন যেন দশটা আয়া-খানসামা লাইন ধরে দাড়িয়ে আছে তোমার হুকুম শোনার জন্যে।’

এবারে চোখ কান অন্যদিকে দেই। একটু আগে শোনা মহিলার একটা কথা অবশ্য ঠিক। পুরো প্লেনই ভর্তি লোক দিয়ে, একটা সিটও ফাঁকা নেই।
গতরাতে কম ঘুমানোর ফল এবারে মনে হয় পেতে যাচ্ছি। আমার চোখে ঘুম নেমে আসে শ্রাবন মাসের বৃষ্টির মতো। আমার আর কোন কিছুই মনে থাকেনা।

ঘুম ভাঙে এয়ার হোস্টেস এর খোঁচা খেয়ে। আমি ধড়মর করে উঠি। কি ব্যাপার? আমি আবার কি করলাম? না তিনি আমার জন্যে খাবার নিয়ে এসেছেন কিনা তাই।


স্থানঃ হংকং এয়ারপোর্ট।
স্থানীয় সময়ঃ রাত দশটা।

একটা আগে এলাম। একটু পরে আবার উড়বো। হাতে সময় নেই বেশী। খবর পেলাম, বোম্বেতে একটা বড় হামলা হয়েছে। লোক মারা গেছে একশো জনের বেশী। ব্যাংকক এয়ারপোর্টে ঝামেলা হচ্ছে। আমার এক বন্ধু সেখানে আটকে আছে। ভেবেছিলাম ঢাকাতে তার সাথে দেখা হবে। এখন অনিশ্চিত।

এখানে অনেক বাঙালী বসে আছেন। এখানে বসে বাংলাতে টাইপ করতে ভাল লাগছে। কতকিছু এগিয়ে গেছে।

দেশে যেতে সবসময়ই ভাল লাগে। এবারে একটু ভয়ভয় লাগছে। হাতে সময় এত কম। সবকছু ঠিকমতো করতে পারবো তো? মন ভরবে না জানি। তার পরও দেশে যাচ্ছি। মায়ের সাথে দেখা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৫৭
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×