somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘরে ফেরার ডায়েরী। পর্ব-১।

২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়ঃ যাওয়ার চার দিন আগে।
স্থানঃ আমেরিকার একটি শহর।


দিন ঘনিয়ে আসছে দ্রুত পায়ে। অথচ একগাদা কাজ জমে আছে। জানি হয়তো শেষমেশ সবগুলোই সারা হবে, কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত তা হচ্ছে ততক্ষণ অবধি তারা গলার কাঁটা হয়ে সর্বক্ষণ তাগাদা দিচ্ছে। আর তাদের চাবুকের ভয়ে আমি দৌড়ে বেড়াই এদিক-ওদিক।

এবারের দেশে ফেরাটি একটু অন্যরকম। এর আগে যতবারই গিয়েছি, সেগুলো ছিল বেড়াতে যাওয়া। ওখানে গিয়ে কোন কাজ করা নেই, শুধু মাস খানেকের অবসর, এখানে সেখানে ঘোরাঘুরি আর শুধু খাওয়া-দাওয়া।

প্রতিবারেই আমেরিকাতে যখন ফিরে আসার সময় হয়, তখন চোখ বড় বড় করে খেয়াল করি যে কোমরে প্যান্টের বোতাম লাগছেনা। সারা শরীরে জমেছে আলস্যের ভার আর কাজের প্রতি প্রবল অনীহা। শুধু গল্প করতে ইচ্ছে করে, শুধু বই হাতে বিছানায় গড়াগড়ি করতে ইচ্ছে করে। বুঝি আমেরিকাতে ফিরে গিয়ে কষ্ট হবে আবার ঝাঁকের কইয়ের সাথে মিশে যেতে।

এবারে ব্যাপারটি ভিন্ন। এবারে কাজে যাচ্ছি, একা যাচ্ছি আর খুব অল্পদিনের জন্যে যাচ্ছি। মেরেকেটে সাত-আট দিন হয়তো থাকা হবে দেশে। আজকাল সন্ধ্যেবেলা বাড়ীর কাছের কলেজে পড়াই বলে তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে হবে। সেখানকার খাতা দেখতে হবে, গ্রেড দিতে হবে। তা না হলে হয়তো আরও দিন কয়েক বেশী থাকা যেতো।

দেশে এবারে একটি কনফারেনস হচ্ছে সামনের মাসে। কিভাবে যেন সেখানে একটি পেপার পড়বার আমন্ত্রন এলো। জানতাম ঝামেলা হবে, কিন্তু তারপরেও রাজি হয়ে গেলাম। এখন মনে হচ্ছে সে সময়ে না করে দেওয়াটাই উচিত ছিল, অল্প ক’টা দিনের জন্যে এত লম্বা ভ্রমন পোষায়না। কিন্তু এখন আর সে কথা লাভ কি? মরদ কা বাত, হাতী কি দাঁত। বলেছি যখন, তখন তো যেতেই হবে।

কনফারেনসের সাথে আরও একটা ব্যাপার আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার বিভাগটির এবারে পঞ্চাশপর্ষ পূর্তি উৎসব হচ্ছে একই সময়টিতে। সেখানেও একদিন যেতে হবে। পুরনো বন্ধুগুলোর সাথে দেখা হবে হয়তো,যদিও বেশীর ভাগেরাই এখন দেশের বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তারা হয়তো আসতে পারবে না।

বুকের মধ্যে দুপদুপ করতে থাকে। পরিবারের সবাইকে এখানে রেখে আমি চলে যাচ্ছি, সেটা ভাল লাগছে না। একা একা ছুটি কাটানোর মতো যেন। ওতে কি আরাম হয়? দুশ্চিন্তায় মাথার পিছনটাতে কেমন যেন করতে থাকে। ওরা সবাই এ কয়দিন ভাল থাকবে তো? কোন ঝামেলা হবে নাতো? সপ্তাহের ট্র্যাশ মনে করে ফেলবে তো?

ভাবখানা এমন যেন আমি না থাকলে এদের দুনিয়া অন্ধকার হয়ে যাবে। আমরা সবাই বোধহয় নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হিসেবে ভাবতে ভালবাসি। আসলে কারো জন্যে কি কোন কিছু আটকে থাকে? এই পৃথিবী শূন্যস্থান পছন্দ করেনা, কিভাবে যেন সবকিছুই আবার আগের মতোই চলতে থাকে।

আজকাল কাজের ব্যস্ততা এতো বেড়েছে যে আর কোন কিছুই করা হয়না। ব্লগে লেখা তো দূরের কথা, আর দশ জনের লেখাটি পড়বার সময় পর্যন্ত পাইনে। হাওয়াই এর উপর লেখাটি মাঝপথে এসে ঝুলে রয়েছে। মাথার ভিতরে না লেখা কাহিনীগুলো মুখ গোমড়া করে বসে থাকে, আমাকে দেখে অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নেয়। শরীরে আমার হাজার ক্লান্তির ধূলো, কাজের ফিরিস্তির তালিকাটি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার ডুবে যাই কাজে। ব্লগে লিখে আর কিই বা হবে?

তারপরেও আজকে কিবোর্ডের সামনে বসলাম। এ যাবত তো আমি কেবলই দেশ ছাড়ার গল্প বলেছি। দেখি তো এবারে দেশে ফেরার গল্পটি বলা যায় কিনা। সাথে করে ল্যাপটপটি যদি নিয়ে যাই, তাহলে হয়তো পথের যাত্রা বিরতিতেও দু চার কলম লিখে সাথেসাথেই পোস্ট করে দেওয়া যাবে। আর তা না হলে কালি-কলম তো রয়েছেই।

এত কাজের মধ্যে তারপরেও ভাল লাগছে। দেশে ফেরাটাই বোধহয় এরকম। মার সাথে দেখা হবে। ছোট বোনটির মেয়েটি নাকি খুব পাকাপাকা কথা বলা শিখেছে, তাকে কোলে বসিয়ে আদর করা হবে। ছোট ভাইটি এখন মস্ত সরকারী আমলা হয়েছে, তার পাশে দাঁড়িয়ে গর্বে আমার বুক ফুলে উঠবে। মস্ত আমলা বলে নয়, একজন সৎ মানুষের সাথে দেখা হওয়ার আনন্দে।

জানি মা মৃদুস্বরে বলবেন,‘আর দুটো দিন বেশী কি থাকা যেতোনা? কতদিন পর তোকে আবার দেখলাম।’ ব্যর্থ মানুষের মতো আমি মাথা নীচু করে থাকবো। তখন মা হয়তো বলবেন,‘জানি তুই ব্যস্ত মানুষ, সবসময় দৌড়ের উপর থাকিস। শরীরের দিকে খেয়াল রাখিস কিন্তু।’

চোখের জল লুকোতে আমি হয়তো তাড়াতাড়ি অন্য ঘরে চলে যাবো।

আজ এটুকুই থাক। যে পেপারটি পড়তে হবে, তার অনেকগুলো স্লাইড তৈরী করা এখনো বাকী। হাতে সময় মোটে আর অল্প ক’টা দিন।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:৫৫
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×