somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাকিস্তান আর যুক্তরাষ্ট্র কি সমকক্ষ? কীসের সাথে কীসের তুলনা?

১৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এই দিনও দেখতে হলো! কীসের সাথে কীসের তুলনা?

যুক্তরাষ্ট্র জাপানে আণবিক বোমা ফেলার পর দুইটা গোটা শহর ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর জাপান যুদ্ধের ভয়ংকরতম অধ্যায় দেখে আর কোনোদিন যুদ্ধ না করার এমনকি সেনাবাহিনীই না রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে তারা পুরোপুরি যুক্তরাষ্ট্রের বশ্যতা স্বীকার করে নেয় এবং সামরিকভাবে তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার পূর্ণ দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে দেয়। এককথায় বলতে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একেবারে সারাজীবনের জন্যই বলতে গেলে স্যারেন্ডার করে ফেলে জাপান। যদিও সম্প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে আততায়ীর হাতে মৃত্যুর আগে জাপানের সেনাবাহিনী আবার চালু করে গেছেন।

পক্ষান্তরে বাংলাদেশ সারেন্ডার করেনি, বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। পাকিস্তানই বরং স্যারেন্ডার করে বাংলাদেশ ও ভারতের মিত্রবাহিনীর কাছে। ৩০ লক্ষ শহীদের জীবন আর ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। জাপান-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের বিষয়টায় স্বাধীনতা অর্জন বা ধর্ষণ কেস ছিলো না। ৩০ লক্ষ মানুষও মরেনি। ছিলো না ২৫ বছরের শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাস। এই দুইটা কীভাবে তুলনার যোগ্য?

তো, বিজয়ী শক্তি হয়েও আমরা কেন পাকিস্তানের কাছে এখন নমনীয় হবো? কীসের স্বার্থে? পাকিস্তান কি আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছে কোনোদিক দিয়ে এক নিউক্লিয়ার শক্তি হওয়া ছাড়া? আমাদের নিউক্লিয়ার শক্তি অর্জন করতে হবে কেন? ইউক্রেনের যেমন রাশিয়ার সাথে যুদ্ধের করুণ পরিণতি ভোগ করছে, আমরাও কি ভারতের বিরুদ্ধে তাদের 'চিরশত্রু'-দের সাথে মিলে নিউক্লিয়ার পাওয়ার অর্জন করতে গিয়ে, চিকেন নেকের পাশে পাকিস্তান-চীনকে নিয়ে সামরিক ঘাঁটি করতে গিয়ে একই পরিণতি ভোগ করবো নাকি বৃহত্তর প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চললে আমাদের ভালো হবে?

পাকিস্তান কি এখনও একাত্তরের গণহত্যার বিষয়ে ক্ষমাভিক্ষা করেছে? তারা কি আমাদের সকল পাওনা বুঝিয়ে দিয়েছে? না দিয়ে থাকলে এই আলোচনার টেবিলের বসার সুযোগই তো তাদের পাওয়া উচিত না! সেখানে তারা হেসেখেলে ঘুরে যাচ্ছে, সম্পর্কের উন্নয়ন চাচ্ছে! কই, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ ও ক্ষমাভিক্ষার প্রসঙ্গ তোলার কথা মিডিয়ায় আসলেও পাকিস্তানের ঘোষণায় নাকি এসব নেই? তাহলে এই সুন্দরীকে সাদর সম্ভাষণ জানিয়ে আমাদের অর্জন কী? দেব দুলাল গুহ।

নিউজ থেকে:

অন্তর্বর্তী সরকার প্রো-বাংলাদেশপন্থি পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছে দাবি করে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেছেন, বিশ্বে পূর্ব শত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে।

পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ওঠা প্রশ্নের ব্যাখ্যায় শুক্রবার আবুল কালাম আজাদ মজুমদার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে এ কথা বলেন।

বিশ্বে পূর্ব শত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার উদাহরণ তুলে ধরে আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড শতাব্দী ধরে অসংখ্য যুদ্ধ করেছে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হাত মিলিয়েছে। একই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জাপানে বোমাবর্ষণ করেছিল, কিন্তু পরে তারা মিত্রে পরিণত হয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কী পাকিস্তানপন্থি হয়ে যাচ্ছে? এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি আমরা। এ ধরনের প্রশ্ন আমাদের মোটেও অবাক করেনি। এমন কিছু মানুষ সবসময়ই থাকবে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীন পরিচয়ে খুব কমই বিশ্বাস করবে।

উপ-প্রেস সচিব বলেন, আমাদের জবাব স্পষ্ট ছিল। অতীতে দেশের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে যাই ঘটুক না কেন, এখন থেকে এটি বাংলাদেশপন্থি নীতি হবে, যা আমাদের নিজস্ব স্বার্থে পরিচালিত হবে।

এক প্রতিবেশীকে খুশি রাখতে অন্য প্রতিবেশী থেকে দূরে সরে যাওয়া একটি স্বাধীন জাতির পররাষ্ট্র নীতি হতে পারে না বলে মনে করেন আজাদ মজুমদার।

তিনি বলেন, পাকিস্তানের সফররত পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচকে দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত বিষয়গুলো স্মরণ করিয়ে দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তার কথাগুলো বাস্তবায়নে ২৪ ঘণ্টারও কম সময় লেগেছে। এ সময় তিনি (বালুচ) পারস্পরিক স্বার্থের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।

আজাদ মজুমদার বলেন, বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টিকারী একটি আবেগঘন বিষয় হলো, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর গণহত্যা ও নৃশংসতার জন্য দেশটির পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি। এমনকি পাকিস্তানের সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই বিশ্বাস করতেন, ক্ষমা চাওয়া-সদিচ্ছা ও উদারতার একটি কাজ হবে। কিন্তু পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর ও সামরিক আমলাতন্ত্র সর্বদা এই ধরনের কথার বিরোধিতা করেছে। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে কখনো ক্ষমা চাওয়া হয়নি।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব জানান, বাংলাদেশ সম্পদের বিভাজনের বিষয়টির ওপরও জোর দিয়েছে, যা অতীতের শাসকদের কাছে ভুলে যাওয়া একটি বিষয় ছিল। অতীতে শাসকরা এটি আলোচনর চেয়ে বিচ্ছিন্নতা পছন্দ করতেন।

তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালের একটি অনুমিত হিসাব অনুযায়ী, পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের পাওনা ৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অভ্যন্তরীণ মূলধন সৃষ্টি, বৈদেশিক ঋণ নিষ্পত্তি এবং বৈদেশিক আর্থিক সম্পদ ধরে রাখার অনুমিত হিসাবের ভিত্তিতে এটি নির্ধারণ করা হয়।

আজাদ মজুমদার বলেন, বাংলাদেশের আরো প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দাবি করেছে, যা ১৯৭০ সালের নভেম্বরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঘূর্ণিঝড় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ/সংস্থাগুলো অনুদান দিয়েছিল। ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের লাহোর শাখায় স্থানান্তরিত হওয়ার আগে এই অর্থ ঢাকায় স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের অফিসে পড়ে ছিল।

আজাদ মজুমদার তার পোস্টে আরো উল্লেখ করেন, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন আরেকটি বিষয় ছিল, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করেছিল। অতীতে পাকিস্তান তাদের লোকদের মাত্র এক লাখ ২৫ হাজার জন ফিরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের ১৪টি জেলার ৭৯টি শিবিরে প্রায় ৩ লাখ ২৫ হাজার জন ছিল।

তিনি বলেন, এই বিষয়গুলোই দুই দেশের মধ্যে একটি সুস্থ ও ভবিষ্যৎমুখী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে রয়ে গেছে। সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম বিকল্প হলো আলোচনা এবং অন্তর্বর্তী সরকার ঠিক এটাই করার চেষ্টা করছে। অনেক বছর পর বাংলাদেশ পাকিস্তানকে আলোচনায় এনেছে এবং পারস্পরিক সুবিধার জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা অন্বেষণ করার পাশাপাশি যথাযথভাবে বিষয়গুলো উত্থাপন করেছে।

উপ-প্রেস সচিব স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত ডিসেম্বরে মিশরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে এক বৈঠকে অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বালুচের সঙ্গে বৈঠক করার সময় তিনি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। একই বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতের সুবিধার্থে অতীতের ইস্যুগুলো সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের এখন একসঙ্গে কাজ করা ও এগিয়ে যাওয়ার সম্ভবত সময় এসেছে।

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:২৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। এপিআই প্ল্যান্ট

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:১৮




ওষুধে দুটো উপাদান থাকে। ওষুধের যে রাসায়নিক উপাদানটি মূলত রোগ সাড়ানোর কাজ করে, সেটিকে বলে এপিআই। দ্বিতীয় উপাদানটিকে সহকারি উপাদান বলে, যেমন— স্টার্চ, রং বা ফ্লেভার।

এপিআইয়ের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে ভারত-আফগানিস্তান মিলে পাকিস্তানকে ভাতে ও পানিতে মারতে পারে

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৫৪


যুদ্ধ শুধু অস্ত্র দিয়ে হয় না, বুদ্ধি দিয়ে হয়। সিন্ধু নদীর শাখা নদী হচ্ছে ৬টি।এর মধ্যে তিনটি নদী রাবি, বিয়াস এবং শতদ্রু এই তিনটি নদী ভারতের ভেতরে অবস্থিত।এর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাকিস্তান আর চালাক হলো না!

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৩৬


ওরা আগেও বলদ ছিলো, এখনও আছে। এই বক্তব্যর পর ভারত এখন আরও জোর গলায় বলবে যে কাশ্মীরের সাম্প্রতিক হামলা পাকিস্তানের ইন্ধনেই হয়েছে এবং ফুল ফোর্স নিয়ে স্ট্রাইকে গিয়ে কাশ্মীরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: প্রভূ-ভৃত্য নয়, চাই সমতা ও ইনসাফভিত্তিক মৈত্রী

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৫০

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: প্রভূ-ভৃত্য নয়, চাই সমতা ও ইনসাফভিত্তিক মৈত্রী

ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের ছবিটি http://www.gettyimages.com থেকে সংগৃহিত।

ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক নৈকট্যের গভীর বন্ধনে আবদ্ধ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধলে বাংলাদেশের কি করণীয় ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:১৬


কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ নাগরিক মুসলিম হওয়ায় এবং ভারত বিদ্বেষী(যৌক্তিক কারণ আছে) হওয়ায় এই ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে মুসলিমদের উপর নির্যাতন থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×