somewhere in... blog

গাজা বাঁচাতে করণীয় এখন একটাই

২০ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গাজা সমস্যার সমাধান একটাই: ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তি। যুদ্ধবিরতি মেনে বন্দীদের মুক্তি দিন, নিরীহ ফিলিস্তিনিদের বাঁচান। নেতানিয়াহুর সাথে যুদ্ধে পারবেন না। ইতিহাস তাই বলে। ইতিপূর্বে প্রায় সকল শক্তিশালী মুসলিম দেশ এক হয়ে কয়েকবার যুদ্ধ করেও এক ইসরায়েলের সাথে বেশিদিন টিকতে পারেনি। নিকট অতীতে পারেনি হুতিরা, পারেনি হিজবুল্লাহ। বরং একের পর এক কমান্ডার হারিয়েছে তারা। এগুলো মূলত ইরানের প্রক্সি। সেই ইরানই এখন ভয়ে চুপ থাকবে। কারণ এতোদিন বাইডেনের আমেরিকাই ইসরায়েলের সাথে ছিলো, এখন ট্রাম্প তো আরও থাকবেন। কেননা ট্রাম্প ইরানকে মোটেও দেখতে পারেন না। গত মেয়াদেও একের পর এক স্যাংশান আরোপ করেছিলেন, এবারও করবেন। তাই, অন্তত এই ৪ বছর ইসরায়েলের সাথে ঘাউরামি না করে বন্দী ফিরিয়ে দিয়ে সিজ ফায়ার করাই যুক্তিসঙ্গত। এই সত্যকে মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে।

এত ছোট একটি দেশ ইসরায়েলে মাত্র ১ কোটি লোকের বাস। সারা বিশ্বে মনে হয় দেড় কোটির মতো ইহুদি আছে। অথচ এদের সাথে দুনিয়ার আর কেউ পারে না। কাজেই, শুধু ইচ্ছামতো জন্মালেই হয় না, তাদেরকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতও করতে হয়। ইহুদিরা অন্য দেশের কাছে কখনই হাত পাতে না। সামরিক খরচ না থাকলে তারা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ লুক্সেমবার্গকেও ছাড়িয়ে যেত। অথচ রোহিঙ্গাদের দেখুন ইচ্ছামতো সন্তান জন্ম দিচ্ছে, আমাদের ঘাড়ে বসে খাচ্ছে! সব ইহুদিদের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। ওরা কোথাও ঘুরতে গেলেও, কলেজে গেলেও সাথে অত্যাধুনিক রাইফেল নিয়ে যায়। সবসময় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকে। ওদের জীবন এমনই। অপরদিকে ফিলিস্তিনের চিত্র দেখা যায় একেবারেই আলাদা। ইসরায়েলে কিন্তু মুসলিম সম্প্রদায়ও আছে। তাদেরকে কখনও বলতে শুনিনি যে তারা নির্যাতিত হয়। মসজিদ আল আকসার চারটি আলাদা অঞ্চলে মুসলিম, খৃস্টান, ইহুদিরা থাকে। আপনি ইউটিউবে অজস্র ভিডিও পাবেন 'Walking on the streets of Israel' লিখে সার্চ করলেই। ওদের লাইফস্টাইল দেখতে পারবেন। এটা আপনাকে ওদের সম্পর্কে জানতে ও নিজেদেরকে ওদের সাথে টেক্কা দেয়ার জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করবে। টেক্কাটা হোক জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় ওদেরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার।

ইহুদিরা ঠেকে শিখেছে। তারাও বারবার নির্যাতিত হয়েছে। জার্মান হিটলারের সেই ভয়াবহ হলোকাস্টের কথা সবাই জানে। মধ্যপ্রাচ্যে জুড়ে মুসলিমরা যেমন ছিলো, তেমনি ইহুদিরাও ছিলো। কিন্তু সব জায়গা থেকে বিতাড়িত হয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাবার পর ইহুদিরা সংঘবদ্ধ হয়েছে। তারা নিজেদেরকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে নিয়েছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে ইহুদিরাই বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানী উপহার দিয়েছে বারবার। সেই আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক স্যার অ্যালবার্ট আইনস্টাইন থেকে শুরু করে অ্যাটমিক বোমার জনক ওপেনহাইমারও ইহুদি। বিজ্ঞানের নোবেলগুলো দেখবেন মোটামুটি ইহুদিদের দখলে। এখন আপনি যদি নোবেল না মানেন, আধুনিক বিজ্ঞান না মানেন-- তাহলে আপনার সাথে কথা না বলাই ভালো।

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এই আধুনিক যুগে ঘোড়ার পিঠে চড়ে তরবারি দিয়ে লড়াই করা যাবে না। অন্তত ইহুদিদের সাথে তো না-ই। ইহুদিদের সাথে পেরে উঠতে হলে অন্যদেরকেও ঐ পথেই এগিয়ে যেতে হবে। ঘরে বসে কান্নাকাটি করে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের বাঁচানো যাবে না। জ্ঞান-বিজ্ঞানে আরও অনেক এগিয়ে যেতে হবে। ইহুদিরা ঐটুকুন জমিতে মরুভূমির বুকে ফসল ফলাতে বিশ্বের সর্বোত্তম পানি ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে। এই প্রযুক্তিটি তারা বিশ্বব্যাপী সরবরাহও করে। মরুর বুকে ফসল/সবজি ফলিয়ে তারা এই সবজি রপ্তানিও করে। এমন অনেক তথ্য জানতে গুগল করুন। তাহলে বুঝবেন কেন সৌদি আরব শুধু একটা বিবৃতি দিয়েই ঘরে বসে থাকে, কেন আশপাশের মুসলিম দেশগুলো ওদের সাথে যুদ্ধে জড়ায় না ফিলিস্তিনে এত হামলা-হত্যা করার পরেও।

আপনি কি জানেন, এত বড় বড় মিসাইল ছুঁড়েও কেন ইসরায়েলের খুব একটা ক্ষতি করা যায় না? কারণ তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। আয়রন ডোম, থাডের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি তারা ব্যবহার করে। প্রথমটি তাদের নিজেদের আবিষ্কার আর পরেরটি আমেরিকার। এর চেয়ে উন্নত আর নাই বিশ্বে। আকাশেই তাদের দিকে আগত সব মিসাইল ধ্বংস করে দিতে পারে তারা। তাছাড়া আকাশে ইসরায়েল বরাবর প্রেরিত মিসাইল উড়লেই সাথে সাথে গোটা ইসরায়েলে সাইরেল বেজে ওঠে আর সবাই সাথে সাথে মাটির নিচের বাংকারে অবস্থান নেয়। ইসরায়েলের লোকালয়ের সর্বত্র এই বাংকার বানানো আছে। যদি কোনো মিসাইল ইসরায়েলের মাটিতে পড়েও, ভাববেন না এটা মেশিনের ত্রুটি। ওরা ইচ্ছা করেই কিছু মিসাইল ছেড়ে দেয় খরচ বাঁচাতে। যেগুলো শুধু লোকালয়ে পড়ার মতো, সেগুলোই আকাশে পালটা মিসাইল ছুঁড়ে ধ্বংস করে ফেলা হয়। ইসরায়েল বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক ও উন্নত অস্ত্র নিজেরা বানায় ও রপ্তানি করে। তাই এসব ক্ষেত্রে ওদের সাথে পারা যায় না।



আপনি কি জানেন ইসরায়েলের সাথে আর কেউ না থাকলেও সবসময় কেন থাকে আমেরিকা? একটা ঐতিহাসিক সম্পর্ক আছে দুই দেশের। ২য় বিশ্বযুদ্ধে অনেক চেষ্টা করেও জাপান-জার্মানিকে থামানো যাচ্ছিলো না। জার্মানির হিটলার পর্যন্ত সুইসাইড করে ফেলেছেন জিততে না পেরে, কিন্তু জাপান পরাজয় স্বীকার করছিলো না। তখন আমেরিকায় থাকা ইহুদি বিজ্ঞানী ওপেনহাইমার অ্যাটমিক বোমা আবিষ্কার করেন। এর সফল পরীক্ষা সম্পন্ন হবার পর এই বোমার একটি জাপানের হিরোসিমা ও অপরটি নাগাসাকি শহরে ফেলা হয়। এরপর এর ভয়াবহতা দেখে জাপান আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এর ভয়াবহতা এতটাই ছিলো যে আজও সেখানে ঠিকমতো গাছ জন্মায় না। পঙ্গুসহ নানা রোগাক্রান্ত শিশু জন্ম নেয়। এরপর থেকে দীর্ঘদিন জাপানের কোনো সেনাবাহিনীই ছিলো না। এতটাই কষ্ট পায় ওরা। যে আমেরিকা বোমা মেরে ওদের দুটি শহরকে ধ্বংস করে দিয়েছিলো, তাদেরকে কাছেই ওরা ওদের নিরাপত্তার দায়িত্ব দিয়েছিলো চুক্তির মাধ্যমে। সেই থেকেই আমেরিকা বিশ্বের সেরা পরাশক্তি। তো, ঐ বিজ্ঞানীর প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আমেরিকা ইহুদিদের আলাদা ভূমি দেয় থাকার জন্য। জার্মানির সেই হলোকাস্টের পরেই মূলত ইহুদিরা একটি জায়গায় রাষ্ট্র বানিয়ে থাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।

আমি যখন এই লেখাটি লিখছি তখন ফেসবুক ভরে গেছে গাজার শিশুদের কান্নার ভিডিওতে আর মসজিদের মুয়াজ্জিনের কান্নাজড়িত আজানের ধ্বনিতে। কিছু বাস্তব চিত্র আবার কিছু AI দিয়ে বানানো ভিডিও আছে। কংক্রিটের নিচে চাপা পড়া কান্নারত শিশুটির ভিডিওটা যেমন ফেইক, AI দিয়ে বানানো। কিন্তু তার মানে এই না যে এমন দৃশ্য ওখানে হচ্ছে না। এসব দেখতে কারোই ভালো লাগে না। তাও আবার এই রমজানের মাসে। গত বছর ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হয় হামাসের আক্রমণের মাধ্যমেই। ইসরায়েলের দেয়াল ভেঙে ভেতরে ঢুকে ইহুদিদের ধরে নিয়ে যায় হামাস। সেই থেকে নেতানিয়াহু মারতে মারতে প্রায় অর্ধলক্ষ ফিলিস্তিনি হত্যা করে ফেলেছেন। আমি বুঝি না, মাত্র কয়েকজন ইহুদিকে কেম ছেড়ে দেয়া যাচ্ছে না? তাদের কয়টা প্রাণ কি অর্ধলক্ষ ফিলিস্তিনির প্রাণের চেয়েও মূল্যবান?

ইসরায়েল অনেক প্রমাণ দিয়েছে যে কীভাবে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের আবাসে ঢুকে সেখান থেকে মিসাইল(মূলত রকেট) ছুড়ছে হামাস।ইসরায়েল পালটা আঘাত হানলেই নিরীহ ফিলিস্তিনিরা মারা যাচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণ দরকার। আমার মনে হয় এখনই বন্দী ফিরিয়ে দিয়ে যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়া উচিত হামাসের। এই যুদ্ধবিরতি অনেক কষ্টে এনে দিয়েছিলো জাতিসংঘের আহবানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এখনও এটা মেনে না নিলে নেতানিয়াহু এই ধ্বংসলীলা থামাবে না। কারণ ট্রাম্প তাঁর আরও বড় মিত্র আর পুতিন ট্রাম্পেরও মিত্র। আমরা এখান থেকে যতই কান্নাকাটি করি না কেন, এমনকি হামাসের হয়ে যুদ্ধে গেলেও কার্যত কোনো লাভ নেই। ইরানের মতো পরাশক্তিই চুপ আছে ট্রাম্পের ভয়ে। বুঝেন? কবে না খবর আসে খামেনি সাহেবকেও খতম করে দিয়েছে ইসরায়েল! আপনি যত চেষ্টাই করেন, যত অভিশাপই দেন আর যত গালিই দেন, ইহুদিদের এই দুনিয়া থেকে মুছে দিতে পারবেন না। আপাতত তাই মুক্তির পথ একটাই-- বন্দীদের মুক্তি দিয়ে যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়া। নিরীহ ফিলিস্তিনিদের জীবন বাঁচান, অবিলম্বে বন্দীদের মুক্তি দিন। দেব দুলাল গুহ।

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৮:০৮
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার একটা ব্যক্তিগত সমুদ্র থাকলে ভালো হতো

লিখেছেন সামিয়া, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:২৭


আমি এসে বসছি
নরম বালুর উপর,
সামনে বিশাল সমুদ্র,
ঢেউগুলা আমারে কিছু একটা বলতে চাইতেছে,
কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না।

আমার মাথার উপর বিশাল আকাশ,
আকাশের নিচে শুধু পানি আর পানি,
আমি একলা,
আমার সামনে সমুদ্রের একলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নভোচারীদের বহনকারী ক্যাপসুল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৫০





ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামসকে নিয়ে নাসা ও স্পেসএক্স-এর স্পেসক্রাফ্ট ড্রাগন ক্যাপসুল পৃথিবীতে পৌঁছে গেছে। ক্যাপসুলের রং পুরোপুরি বদলে গেছে-এটি একেবারে কালো হয়ে গেছে।

এই ক্যাপসুলের অবস্থা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি)

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৪৭



জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি)। রাজনীতি করা ভালো। বোকা, সহজ সরল লোকদের রাজনীতি করা ঠিক না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্তের এই মাতাল সমীরণে... সাজাই এ ঘর ফুলে ফুলে ...

লিখেছেন শায়মা, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৫৮


ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল লাগলো যে দোল
স্থলে জলে বনতলে লাগল যে দোল দ্বার খোল, দ্বার খোল....
বসন্তের আগমনে প্রকৃতিতে লাগে দোল। সাথে সাথে দোলা লাগে বুঝি আমাদের অন্তরেও।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ক্লোজড ! নতুন করে ওপেন করার সুযোগ নেই......

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:৪৫


..বলে মনে করেন জামায়াতের আমীর শফিকুর রহমান। বাংলাদেশের রাজনীতি আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। প্রধান উপদেষ্টা সাম্প্রতিক সময়ে একটি স্বনামধন্য থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রধানের সাথে বৈঠকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×