somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আটকে থাকা বেতন পেয়ে বাবার কথা মনে পড়ায় যা করলাম...

১৫ ই জুন, ২০২৪ রাত ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবশেষে অনেক সংগ্রাম করে বেতন চালু করা গেলো। শুধু আমারটা না, কলেজে ফান্ডের অভাবে আরও যারা বেতন পাচ্ছিলেন না, তাদের বেতনেরও ব্যবস্থা করলাম। নিজে দুমাসের বেতন একসাথে পেলাম। বেশ বড় অংকের একটা টাকা। যেহেতু বেতনের বাইরে আর কোনো আয় আমার নাই, এমনকি প্রাইভেটও পড়াই না, তাই এই দুই মাস চলতে কষ্ট হয়েছে বৈকি! কষ্ট করে বড় হয়েছি, আমার বাবা-মায়ের জীবনটাও ছিলো কষ্টের। তাই আমি এই কষ্টের মর্ম বুঝি।

বুঝি বলেই, বেতনের টাকাটা হাতে পাওয়ার পর আমার মতই কারা কষ্টে আছে তা নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। আত্মীয়-স্বজন কেউ কষ্টে নেই। মামা-কাকারা খুব বেশী ভালো আছে। বাবার রহস্যজনক অকালমৃত্যুর পর কোনোমতে বিষয়টা ধামাচাপা দিয়ে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পন্ন করে দিয়ে তাঁরা আমাদের খোঁজখবর নেননি আর। এখন সুদিনে অনেকেই যোগাযোগ করতে চায়, কিন্তু আমি আর আগ্রহ পাই না। না খেয়ে যে দিনরাতগুলো কাটিয়েছি, সেইসব স্মৃতি মনে পড়ে যায় আমার, মনে পড়ে তখন তাঁদের কোনো অবদান না রাখা অবদানের কথা।

তাহলে কার উপকার করা যায়? কার এখন টাকার খুব দরকার? কে খুব কষ্টে আছে? এমনটা ভাবতে ভাবতেই মনে পড়লো বাবার বন্ধু ঢাকাবাসী এক কবির কথা। কয়েক মাস তাঁর খোঁজ নেওয়া হয় না। আসলে এত অশান্তিতে থাকি, কয়দিকে খেয়াল রাখা যায় একা? তিনিও যে আমাদের খেয়াল রেখেছেন, বিপদের দিনে সাহায্য করেছেন তেমনটা না। কিন্তু তিনি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বাবা যাদেরকে খাইয়ে-পড়িয়ে মানুষ করে বিয়ে-থা দিয়েছেন, তারা অনেকেই যা করেন না।

যে-ই ভাবা, সে-ই কাজ। ফোন দিলাম কবিকে। কবি জানালেন, মনটা খুব খারাপ। একাকী জীবনযাপন করছেন, সাথে কেউ নেই। স্ত্রী-সন্তান এই বৃদ্ধ বয়সে তাঁকে একা রেখে চলে গেছেন। জিজ্ঞেস করলে জানালেন রান্নাও করেননি, কিছু খাননি। মন খারাপ করে শুয়ে আছেন। বাবার সাথে তাঁর স্মৃতিচারণ শুনলাম। মা কেমন আছে জানতে চাইলেন। বিয়ে করতে বললেন। দুঃখপ্রকাশ করে বললেন, অনেক বঞ্চনা নিয়ে মারা গেছেন কবি বাবু ফরিদী।

তিনি বললেন, "কবি বাবু ফরিদী রা নেই বলেই আমি এতিম হয়ে গেছি"। জানালেন গবেষণাকাজে ব্যস্ত আছে, কবিতাপত্র প্রকাশনা আপাতত স্থগিত; বইয়ের প্রুফ দেখে কিছু আয় হয়, তা দিয়েই চলে। আক্ষেপ করে বললেন হাজার বিশেক টাকা পাওনা আছে প্রকাশকের কাছে, কিছু পাচ্ছেন না। বললাম, আমাকে তাঁর নাম, মোবাইল নম্বর দেন। কিন্তু তিনি ঝামেলা চাইলেন না, বললেন ভদ্রলোক নিজেও নাকি কষ্টে আছেন, টাকা হাতে এলেই দিবেন।

মনে হলো, তাঁর এই মন খারাপের রাতে আমার বাবাই উপর থেকে আমাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁকে একটা ফোন করতে। না হলে আমিই বা এতদিন পর তাঁকে ফোন করবো কেন? আমার বাবা এর চেয়েও বেশি কষ্ট করেছেন, কিছুই না পেয়ে অসময়ে মরেছেন। প্রতিবেশীর বাসা থেকে যখন তাঁর লাশ উদ্ধার হয়, তখন আমি নাবালক। এখন হাতে টাকা আসে-যায়, কিন্তু বাবার জন্য কিছু করতে পারি না। তাই মনে হয় বাবার বন্ধুদের জন্য কিছু করলেই সেটা বাবার জন্য করা হবে।

দীর্ঘ আলাপচারিতার পর বিকাশে তাঁকে এক হাজার টাকা ক্যাশ আউট চার্জসহ পাঠালাম। সাথে সাথেই ওপ্রান্ত থেকে ফোন এলো। ধরতেই কাকুকে জিজ্ঞেস করলাম টাকা পেয়েছেন কিনা। তিনি বললেন, এ তো অনেক টাকা! বললাম, "আর মন খারাপ করে না থেকে এখনি দোকানে গিয়ে টাকাটা তুলে নিয়ে কোনো একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ভালো কিছু খেয়ে নিন। আমার জন্য আশীর্বাদ করবেন। তারপর বললাম, বাবাকে মনে পড়লে ফরিদপুর চলে আসবেন। খরচ সব আমার।"

ফোনের ওপ্রান্ত থেকে একটা নীরব কান্নার শব্দ যেন শুনতে পেলাম। এ শব্দ আমার জন্য আনন্দের। মহান স্রষ্টা যেন সারা জীবন আমাকে অন্যের জন্য কিছু করার সুযোগ ও সামর্থ্য দেন, কারো কাছে যেন হাত পাততে না হয়-- ঠিক আমার বাবা কবি বাবু ফরিদীর মত!

বিঃ দ্রঃ কমল কৃষ্ণ গুহ মুক্তিযুদ্ধের সময় গোপনে অস্ত্র বহনের সময় পাকি হানাদারদের হাতে ধরা খেয়ে নিজের ডাকনাম বাবুর সাথে ফরিদপুরকে ভালোবেসে ফরিদী টাইটেল দিয়ে নিজের ছদ্মনাম রাখেন বাবু ফরিদী। সেই থেকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি, সংগঠক, সাবেক সরকারি চাকুরে ও অ্যাডভোকেট এই নামেই আমৃত্যু পরিচত ছিলেন। ফরিদপুরে এসে একটা অনুষ্ঠানে বাবু ফরিদীর সাথে পরিচিত হয়ে নিজের মায়ের নামের সাথে মিলিয়ে বানান শুধু একটু এদিক সেদিক করে একজন হয়ে ওঠেন শক্তিমান অভিনেতা আজকের হুমায়ুন ফরীদি।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০২৪ রাত ১২:০৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×