প্রতিদিনের মতো আজ ও আমাদের দুজনের ম্যাচিং করে পোশাক পরা। আজ আমরা দুজনেই কালো পরেছি। হসপিটাল রিসেপশনে বসে আছি আমরা, কি যেন কথায় দুজনেই অনেক হাসাহাসি করছি। এর ভিতর একটা নার্স এসে আমার রক্ত নিয়ে গেল। ইঞ্জেকশন আমি কখনোই ভয় পাইনা। আমার কেন জানি অনেক ভাললাগে বোতলের ভিতর লাল রক্ত দেখতে। হাত কাটলে যখন রক্ত পড়ে তখন আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি কি সুন্দর রং রক্তের! কত্তো লাল..!
নার্স এসে রক্ত নিয়ে যাওয়ার একটু পরেই আমাদের পাশে একজন ভদ্রলোক এসে বসলেন। ভদ্রলোকের কোলে মাসখানেক বয়েসি একটা শিশু পিটপিট করে তাকাচ্ছে। আমার অভ্যাস হচ্ছে কোথাও গেলে যদি কোন শিশু পাই সে বাস স্টপ হোক আর হসপিটাল হোক আমার সব মনযোগ সেই শিশুর দিকে চলে যায়। সৃষ্টিকর্তা যেন আপন হাতে গড়েছেন এই মানব শিশুটিকে। ফর্সা রঙের সাথে তার নীলাভ চোখ যেন কত কথা বলছে।
রায়হান আর লোকটা কথা বলছে। লোকটার কথা শুনে আমরা স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম। আর লোকটা বারবার বলছে- ডাক্তার আশা ছেড়ে দিল বলে কি আমিও আশা ছেড়ে দিব? এভাবে কি কেউ মারা যায়? বলেন- নাহ সে মারা যাবেনা। আমরা যেন শব্দহারা হয়ে গেছি। কি হয়েছিল সেটা জিজ্ঞেস করার মতো শব্দও যেন নেই। আমি অবুঝ শিশুটির দিকে তাকালাম। বিধাতা কি করে এতো নিষ্ঠুর হবেন! কেন এমন হয়? একটু পরেই একজন কেউ এসে লোকটাকে কি যেন বললো আর লোকটা ব্যাস্ত হয়ে চলে গেলো।
আ....র তারপর যা দেখলাম, একটা লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আর লোকটা হাউমাউ করে কাঁদছে লোকটার কোলের সেই সুন্দর মানব শিশুটি
যে এখনও জানেনা তার জীবনের সব থেকে আপন মানুষটিকে বিধাতা আপন করে নিয়েছেন। শিশুটি জানেনা তার মা তাকে আর আদর করবেনা। আর কখনো সে তার ছোট ছোট হাতে মায়ের মুখ ছুঁয়ে দিতে পারবেনা। রায়হানেরও চোখ ভিজে উঠেছে। আর আমি শিশুটির দিকে তাকিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম।
আলোর ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেলো আমার। যাহঃ এটা স্বপ্ন ছিলো! এমন স্বপ্নও হয়!! ঘড়ির দিকে এক পলক তাকিয়ে তাড়াতাড়ি বিছানা ছাড়লাম।
উফফ দেরি হয়ে যাচ্ছে। আলোকে নিয়ে স্কুলে যেতে হবে।