কিছু কথা তিতা। কথাগুলো তবে সত্য। এবং হজম করা খুবই কঠিন। কেননা এদেশের বেশিরভাগ মানুষের সত্য কথা হজম করতে খুব কষ্ট লাগে। বদহজম হয়ে যায় অনেকের। ক্রিকেটে তাসকিন এবং সানির নিষিদ্ধ হওয়ার পর পার্শ্ববর্তী দেশের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে, আমাদের মনের হাজারো ক্ষোভ ঝাড়লেও ঠিক পরক্ষণেই তাদের কাপড় পরে, তাদের স্যাটেলাইট চ্যানেলে মজে যায় আমাদের ৯০% মানুষ। কিছু কিছু অতি আধুনিককে দেখা যায় হিন্দিতে কিছু ‘বাতচিত’ করতে পারলে নিজেকে ডিগ্নিফাইড মনে করে। বাজারে গিয়ে ‘কারিনা’ কিংবা ‘পাখি’ কাপড় খুঁজে। সেলিব্রেটি হিসেবে আইডল মনে করে ওপারের হিন্দি জানাওয়ালা রঙিন জগতের মানুষদের! এমনকি তাদের পরিচালিত ওয়েবসাইটে গিয়ে ঢুঁ মারে খবরের জন্য। আমাদের দেশের অনেক উচ্চপদে ভারতীয়রা আসীন হয়ে আছে। দেশপ্রেম আমাদের ভারতের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে! মাঝে মাঝে আমাদের কর্পোরেট আর প্রভাবশালী নেতাদের অনেকের ভারতের প্রতি অন্ধপ্রীতি দেখে লজ্জ্বাই লাগে। বাংলাদেশ থেকে ৩৭১৬ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স নিয়ে যায় ভারত! এই বিশাল দেশটির রেমিট্যান্স প্রবাহের ৫ম স্থানে রয়েছে এই ছোট্ট বাংলাদেশ!(উৎসঃhttps://en.wikipedia.org/wiki/Remittances_to_India)
কয়েকদিন আগে ওপারের এক বাংলাভাষী ভারতীয় খুব তাচ্ছিল্য নিয়ে একটা পোস্ট দিয়ে বলছিল বাংলাদেশ আর্থিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে ভারতের ওপর চরমভাবে নির্ভরশীল। আমাদের পররাষ্ট্রনীতিও নাকি উনাদের দয়া-দক্ষিণায় চলে। সুতরাং আমাদের উচিত নয় বেশি ‘ফাল ফালানো’! ভাবলাম উনার কথাগুলো কি অসত্য? আমাদের প্রায় অনেককিছুই তো বৃহৎ রাষ্ট্রটির প্রভাবে ‘খারাপভাবেই’ প্রভাবিত। আমাদের অনেকেরই নিজের কিছু করার মুরদ নাই। কিন্তু কেউ একজন কিছু করলে বা করতে চাইলে তাকে যাচ্ছেতাইভাবে নিচে নামিয়ে আনতে সামান্যতম কুন্ঠাবোধ করি না। আমার প্রশ্ন হলোঃ পরোক্ষভাবে তাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে কতদিন আর সামনের দিকে যেতে পারবেন? ‘দাদা, দাদা’ করে মুখে ফেনা তুলে আর উনাদের সকল সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পণ্যের ভোক্তা হয়ে কীভাবে নিজের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করবেন?
আমাদের চট্টগামের আঞ্চলিক ভাষায় একটা কথা আছে-- নিজোর নেক হানাও ভালা(নিজের জামাই কানা হোক, তবুও ভালো)। এই প্রবাদটির মধ্যে একান্ত নিজের কিছুর প্রতি প্রবল সুন্দর একটা অনুভূতি আছে। কেননা মানূষটা একান্ত নিজের যা অদ্ভুতভাবে মন ভালো করে দেয়। শুধু এই অনুভূতিটাই যদি আমাদের প্রাত্যহিক সামাজিক জীবনে বুকের গভীরে ধারণ করতে পারি, আমার প্রিয় দেশটির অবস্থান বিশ্ব দরবারে আরো সুসংহত এবং আরো রঙিন হতো।
কোনো জাতিই পরগাছার ন্যায় বেঁচে থাকতে পারে না। উন্নতির শিখরে তার আরোহণ করা কখনও হয়ে উঠে না যদি অবচেতনভাবে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে। বাইরে থেকে কোনো অবতার এসে আমাদের উন্নতি ঘটিয়ে দিবে না।
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের একটি কবিতার কয়েকটি চরণ আমার বেশ ভালোলাগেঃ
“...কতরূপ স্নেহ করি/
দেশের কুকুর ধরি/
বিদেশের ঠাকুর ফেলিয়া’’
ইশ! আমার প্রিয় মাটির সকল মানুষের মধ্যে যদি কবির অসাধারণ অভিব্যক্তিটা বুকের গভীরে ধারণ থাকতো!