ও হাসছে। স্মিত হাসি। শুধু ওটাই বুঝতে পারছি। টেম্পেরেচার ১০৪ ডিগ্রি। মাথায় হাতটা আলতোভাবে বুলিয়ে দিচ্ছে। চুলগুলো একটু একটু করে টেনে দিচ্ছে। আজ সহ সাত সাতটা দিন বিছানাকে আপন করে নিয়েছি। আর ও ওর অফিস, কাজ সব বাদ দিয়ে এই অগোছালো মানুষটার সেবা করে যাচ্ছে। কৃতজ্ঞতাবোধ কিংবা ভালোবাসার টানটা মানুষ কীভাবে প্রকাশ করে? ওর প্রতিটি, একদম প্রতিটি কাজ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করছি। অন্যসময় যা কখনো হয়ে উঠে না। অনেক সময় ভাবতাম আমার প্রতি ওর ন্যুনতম টানই নাই। সবসময় কিছু না কিছু নিয়ে ঝগড়া লেগে থাকত। কোন কারণ ছাড়াই খালি ক্যাটক্যাট করত মনে হত। ভাবতাম এই মনোটনি থেকে কী পরিত্রাণের উপায় নেই!
হঠাৎ বিছানার সাথে এমন আপন হয়ে যাওয়ার পর ধারণাটা প্রতিমুহূর্তে পাল্টাচ্ছে। আমার এখন খুব ইচ্ছে করছে ওকে খুব কাছে নিয়ে এসে ফিসফিস করে হলেও বলি, “খুব ভালবাসি... তোমায়”। প্রকাশের অনভ্যস্ততার ধরুণ বলতে কেমন জানি কুন্ঠাবোধ লাগছে! ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কী এক ভুবন ভোলানো হাসি। হায় আল্লাহ!! ও কি বুঝে গেছে আমার মনে ঘটে যাওয়া ভাবনাগুলো? টেলিপ্যাথি ব্যাপারটা কি তাহলে সত্যি? হঠাৎ আমার নাকে নাক ঘষে বলল, ‘তোমার বুঝি দুইদিন পর পর এভাবে বিছানায় পড়ে থাকতে ভাল লাগে? স্বাস্থ্যের একটু বাড়তি কেয়ার নিতে বুঝি খুব কষ্ট হয়?’ ওর দিকে শুধু চুপচাপ তাকিয়ে আছি। এক অপার্থিব মুগ্ধতায় নির্বাক তাকিয়ে আছি।
এই অসুখটা আমার জন্য কেমন জানি শাপেবর হয়েই না আসল। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী একজন ব্যক্তি মনে হচ্ছিল। এই ছোট্ট জীবনে আর বেশি কী-ইবা চাওয়ার আছে! এই মুহূর্তটাকে যদি সীল মেরে রেখে দিতে পারতাম! আমি বড় একটি নিঃশ্বাস নিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করলাম। ও আস্তে আস্তে খুব মধুর সুরে বলল, “ঘুম পাচ্ছে? এখন কী একটু ভাল লাগছে? মাথায় একটু হাত ভুলিয়ে দিব?”