রাইসা আর অয়ন বিয়ে করেছে ৩মাস হল। হুট করেই তাদের বিয়েটা হিয়ে যায়। অয়নের বাসা থেকে ফোন দিয়ে জানানো হয় একটা জরুরী কাজে বাড়ী যেতে হবে। কিন্তু বাড়ী গিয়ে যে একলা থেকে দোকলা হয়ে যাবে এটা ভুলেও ভাবেনি। অয়ন প্রেম করেছিলো এর আগে ৫ বছর কিন্তু কোন একটা কারনে সেটা টেকেনি, এরপর ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায় তাই আর ওদিকে তাকানোর সময় হয়নি। একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে ভালো চাকরি করে। এর বাইরে মুভি, বই, আড্ডা দিয়ে সময় চলে যায়। রাইসার বেলাতেও অনেকটা এমনি। রিলেশান ভেঙ্গে যাবার পর ও পথে আর পা বাড়ায়নি। একটা ব্যাংকে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করে। সময় চলে যাচ্ছিলো ভালোভাবে। কিন্তু হুট করেই এমন হয়ে যাবে তা ভাবতেও পারেনি তবে যা হয়েছে তাতে খুশি হয়েছে। কারন ছেলেটার চোখ দেখলেই কেমন জানি একটা প্রশান্তি কাজ করে, যদিও ভারি চশমার কাঁচের ভেতর দিয়ে দেখতে হয়। এই ফেসবুকের যুগেও তাদের বিয়েটা হয়েছে ৮০ দশকের মত। যদিও এটা সম্ভব হয়েছে রাইসার বাবার প্রচণ্ড জেদের কারনে। রাইসা ছুটিতে গ্রামের বাড়ীতে ছিলো। একদিন সকালে রাইসার বাবা একটা প্রমান সাইজের ছবি এনে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে দেখতো ছেলেটা কেমন?
- বাবা? এইভাবে কেউ জিজ্ঞেস করে এই ২০১৯ সালে?
- কেন? কি হইছে?
- না, কিছুনা
- আচ্ছা বল এখন
- পরে বলি, তুমি যাও এখন
- আচ্ছা আজকের মধ্যেই বলবি
- আচ্ছা বলবো, যাও
রাইসা অবাক হয়ে ছবির দিকে তাকায় আর ভাবে এইটা কোন পাগলামি না তো! কিন্তু সে জানে তার বাবা যা বলে সেটাই করে সুতরাং এটা সিরিয়াস। যদিও বিশ্বাস হচ্ছিলোনা যে এই যুগে এসে এভাবে বিয়ে আদৌ সম্ভব কি না। ছবির দিকে তাকিয়ে রাইসার কেমন জানি একটা ভাঙচুর টাইপ অনুভূতি ছুঁয়ে দিয়ে গেলো। ভারি চশমা পড়া কাঁচের ওপাশের চোখে হারিয়ে ফেললো নিজেকে। সে এতদিন জেনে এসেছে ছেলেরা নাকি মেয়েদের চোখের হারিয়ে যায় কিন্তু রাইসার হলো উল্টোটা। সে একটু লজ্জা পেয়ে গেলো। কেউ যদি তখন রাইসার দিকে তাকাতো তাহলে দেখতে পেত – সদ্য ফোটা লাউ ফুলের মত লজ্জায় অদ্ভুত একটা মামাময় আবেশ রাইসার মুখ জুড়ে ভেসে বেড়াচ্ছে গোলাপি প্রজাপতির মত।
২ দিন পর
অয়নকে নিয়ে রাইসার বাসায় আসেন তার বাবা এবং চাচারা। অয়ন তখনো কিছুই জানেনা। রাইসাদের বাসায় এসে বুঝলো কিছু একটা হচ্ছে। রাইসাকে দেখার পর অয়নের মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছিলোনা। সেটা রাইসাকে দেখে মুগ্ধতায় না ভয়ে সেটা রাইসার মুখ থেকেই না হয় শোনা যাবে যদি সে বলে।
যাইহোক সেই রাতেই কাজী ডেকে বিয়ে হয়ে গেলো। ৭দিন পরেই রাইসাকে নিয়ে অয়ন ঢাকায় ফিরল কারন অফিসে জয়েন করতে হবে, নতুন সংসার গোছাতে হবে।
সবকিছুই ভালোভাবে চলছিলো। হুট করেই রাইসার মধ্যে কেমন জানি একটা পরিবর্তন। বিমর্ষ থাকে, আগের থেকে একটু কম কথা বলে। কিছু জিজ্ঞেস করলেও এড়িয়ে যায়। অয়ন ঠিক বুঝতে পারেনা যে কি করবে।
রাইসা কয়েকদিন আগে শাওয়ার নেয়ার সময় খেয়াল করে স্তনবৃন্ত থেকে অল্প অল্প দুধের মতো জলীয় পদার্থ নিঃসরণ হচ্ছে অথচ তারা এখনো বেবি নেয়নি। প্রথমে এটাকে ভেবেছে যে এমনি হয়ত কিন্তু কয়েকদিন পরে খেয়াল করে দেখলো স্তনে র্যাশ উঠেছে এবং চুলকানি হচ্ছে। সে কোথায় জানি পড়েছিলো এটি ব্রেস্ট ক্যানসারের অন্যতম বড় লক্ষণ। তারপর থেকেই ভেঙ্গে পড়েছে। অয়নের সাথে শেয়ার করবে কিভাবে বুঝতে পারছিলোনা কিন্তু দিন দিন অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। একদিন অয়ন রাতে রুমের লাইট জ্বালিয়ে রাইসাকে জিজ্ঞেস করে তুমি আমাকে পিজ বলবে কি হয়েছে?
- রাইসা অনেকক্ষণ মাথা নিচু করে রাখে।
অয়ন রাইসাকে বুকে টেনে নিয়ে বলে প্লিজ বলো কি হয়েছে?
- রাইসা অয়নের বুকের মধ্যে ফুফিয়ে কেঁদে উঠে।
অয়ন ভয় পেয়ে যায়। অনেকক্ষণ পর রাইসা সব খুলে বলে।
তারপরের দিন সকালেই অয়ন রাইসাকে নিয়ে হসপিটালে যায়। প্রয়োজনীয় সব চেকাপ করায়। ডাক্তার আশ্বস্ত করে যে এখনো প্রাইমারি পর্যায়ে আছে রাইসার ব্রেস্ট ক্যান্সার। আর কিছুদিন দেরি হলেই খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারতো।
এখন প্রতি ৬মাস পর পর অয়ন নিজে থেকে রাইসাকে নিয়ে যায় চেকাপ করাতে। আর রাইসা এখন প্রায় সুস্থের দিকে।
বারান্দায় চা খাচ্ছিলো অয়ন, এমন সময় রাইসা এসে পাশে বসে।
- জানো অয়ন ওইদিন রাতে তুমি আমাকে যদি ওভাবে জিজ্ঞেস না করতে তাহলে হয়ত আমি তোমাকে বলতে পারতাম না কিংবা বললেও হয়ত তখন অনেক দেরি হয়ে যেত। খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারতো। প্লিজ এভাবে সবসময় পাশে থেকো।
অয়ন কিছু বলেনা, রাইসাকে বুকে টেনে নেয় পরম আদরে। প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে বেঁচে থাকাটা আসলেই সুন্দর। একটুখানি সচেতনতা আর ভালোবাসায় বেঁচে থাকুক আমাদের প্রিয়জন।
ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে নিজে সচেতন হন, প্রিজনকে সচেতন করুন এবং পরিবারের পাশে থাকাটা খুব জরুরি।
ভালোবসায় বেঁচে থাকুক সবার প্রিয়জন।
ব্রেস্ট ক্যানসারের ১০টি লক্ষণ
ইদানীং ক্রমশই বাড়ছে ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা। তবে প্রথমদিকে ধরা পড়লে সেরে ওঠার সম্ভাবনা বেশি।
প্রতি বছরই এই রোগে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে ব্রেস্ট ক্যানসার থেকে সেরে ওঠা সম্ভব। নীচে রইল এই রোগের ১০টি লক্ষণ—
১) কমবেশি সব মহিলাদের স্তনেই লাম্প থাকে। এর মধ্যে কয়েকটি ক্যানসারাস ও কয়েকটি নন-ক্যানসারাস। এই ব্রেস্ট লাম্পগুলি অনেক সময় আন্ডারআর্ম বা কলার বোনের তলাতেও দেখা যায়। এছাড়া স্তনবৃন্তের আশপাশেও এই ধরনের লাম্প থাকে যেগুলি টিপলে শক্ত লাগে এবং অবস্থান পরিবর্তন করে না। এমন কিছু দেখলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
২) কোনও রকম র্যাশ নেই স্তনে, তবু ইচিং বা চুলকানির মতো অনুভূতি হচ্ছে, এমন কিছু কিন্তু ক্যানসারের লক্ষণ। অনেক সময় এর সঙ্গে নিপ্ল থেকে হালকা হালকা রস নিঃসৃত হয়, স্তনের ত্বকেও কিছুটা পরিবর্তন আসে। তাই চুলকানির মতো কিছু হলে নিজে থেকে কোনও ক্রিম বা লোশন লাগাবেন না। আগে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলবেন।
৩) স্তনে টিউমার থাকলে তা আশপাশের ব্রেস্ট টিস্যুগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং তার ফলে স্তনে একটা ফোলা ফোলা ভাব দেখা যায়। এরই সঙ্গে স্তনে লাল ভাবও থাকে। স্তনে হাত দিলে বা চাপ দিলে ব্যথাও লাগে।
৪) কাঁধ এবং ঘাড়ের ব্যথাও ব্রেস্ট ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে কারণ এই ক্যানসার স্তন থেকে খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ে শরীরের এই অংশগুলিতে। এই সমস্ত জায়গায় ব্যথা হলে সাধারণের পক্ষে জানা সম্ভব নয় তা মাস্ল পেইন নাকি ক্যানসারের কারণে ঘটছে। তাই পরীক্ষা করে নেওয়াই ভাল।
৫) স্তনের আকার এবং সাইজ পরিবর্তনও এই ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। সচরাচর এই বিষয়টি পার্টনারের চোখেই বেশি পড়ে। তেমন কিছু শুনলে বিষয়টি উড়িয়ে দেবেন না। নিজেই আয়নার সামনে স্তনটি পরীক্ষা করুন এবং ক্যানসারের পরীক্ষা করিয়ে নিন।
৬) স্তনে লাম্প সব সময় বড় আকারের হয় না। ছোট ছোট ফুসকুড়ির মতো লাম্পও দেখা যায় স্তনবৃন্তের আশপাশে। অন্তর্বাস পরে থাকার সময় যদি ঘর্ষণ অনুভব করেন, বিছানায় শোওয়ার সময় যদি ব্যথা লাগে তবে চিকিৎসকের কাছে যেতে দেরি করবেন না।
৭) ব্রেস্টফিডিং করছেন না অথচ স্তনবৃন্ত থেকে অল্প অল্প দুধের মতো জলীয় পদার্থ নিঃসরণ হচ্ছে এমনটা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে যাবেন। এটি ব্রেস্ট ক্যানসারের অন্যতম বড় লক্ষণ। অনেক সময় স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত পড়তেও দেখা যায়।
৮) স্তনবৃন্ত হল স্তনের অসম্ভব সংবেদনশীল অংশ। যদি দেখেন যে স্তনবৃন্ত স্পর্শ করলেও তেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে না বা একেবারেই অনুভূতিহীন হয়ে গিয়েছে তবে তা ব্রেস্ট ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। স্তনবৃন্তের ত্বকের তলায় ছোট ছোট টিউমার তৈরি হলেই এমনটা হয়।
৯) স্তনবৃন্ত চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া, বেঁকে যাওয়া বা স্তনবৃন্তের শেপ অসমান হয়ে যাওয়া ক্যানসারের লক্ষণ, বিশেষ করে যদি ব্রেস্টফিডিং না চলাকালীন অবস্থাতেও এই বিষয়গুলি চোখে পড়ে। সঙ্গীকে বলুন ভাল করে পর্যবেক্ষণ করতে। সামান্য সন্দেহ হলেই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
১০) স্তনের উপরের ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়া, অনেকটা কমলালেবুর খোসার মতো, ক্যানসারের প্রাথমিক স্টেজের লক্ষণ। দিনের মধ্যে একটা সময় তাই ভালভাবে স্তনটি পর্যবেক্ষণ করা উচিত। যে কোনও লক্ষণ চোখে পড়লেই দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং পরীক্ষা করান।
*** ব্রেস্ট ক্যান্সারের তথ্যগুলো গুলো ইন্টারনেট থেকে নেয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৪:৩৬