somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২৫ কিংবা ৩৫এর গড়মিলে

১০ ই জুন, ২০১৯ সকাল ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি একটা খ্যাপের কাজ করতে যাবো তাই ঘুম থেকে দেরি করে উঠে মুখ ধুয়ে রেডি হচ্ছিলাম, এর ফাঁকে বারান্দায় গিয়ে নাস্তা হিসাবে সিগারেট টানা রাস্তার দিকে তাকিয়ে, ফিলটা অনেকটা এমন যে- সামনের ওইটা রাস্তা না, কালো একটা একটা নদী এবং সেখান দিয়ে ক্লিওপেট্রা ডেট করতে যাচ্ছে, আমি সিগারেট টানি, ক্লিওপেট্রা গোল্লায় যাক। রেডি বলতে জিন্স আর শার্ট পড়া। (খ্যাপ বলতে আবার অন্যকিছু ভাবার কিছু নাই, খ্যাপ মানে অফিসের কাজের বাইরে হাত খরচের টাকার জন্য আইডিয়া বেচা)
পিঙ্ক ফ্লয়েডের “উইশ ইউ হেয়ার” বেজে উঠতেই তার কাছে ছুটে যাওয়া। কারণ এটা আম্মার জন্য সেট করা। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে ছোট বোনের কাপা কন্ঠে “ভাইয়া তুই এখনি বাসায় চলে আয়” কিছু বলার আগেই লাইন কেটে গেলো। আমি বার বার ফোন করে যাচ্ছি কিন্তু ফোন কেউ ধরছেনা। আর কাউকে যে ফোন করবো সেই উপায় নাই, আসলে ফোন করার মত কেউ নাই।
আমি তাড়াহুড়া করে কাঁধের ব্যাগে ল্যাপটপটা ভরে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নিয়ে গাবতলী ছুটলাম, দুপুরের দিকে দূরপাল্লার কোন বাস না পেয়ে, লোকাল বাসে চেপে রওনা দিলাম। শেষমেশ রাত ১১টার দিকে বাড়ি গিয়ে পৌছালাম। বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম যে আমি আসলেই আমাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে? একেবারে কেমন জানি অচেনা লাগছে বাড়িটাকে। ঘরে ঢুকে দেখি, আম্মা বিছানায় শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে, পাশে ছোট বোনটা আর ভাইটা যারা সবে মাত্র কলজে ভর্তি হয়েছে। কি করবে কিছু ভেবে না পেয়ে চুপচাপ বসে আছে আম্মার হাত ধরে। পরিচিত আত্মীয় স্বজন এসে এইটা ওইটা বলে চলে গেছে, সাথে দিয়ে গেছে একগাদা উপদেশ। ফোনে কি বলবে সেটা ভেবে না পেয়ে ফোন ধরেনি আমার।
আমি তাড়াতাড়ি করে একটা অটো ডেকে তাতে তুল্লাম, পাশে বোন আর ভাইটা। ব্যাটারি চালিত অটো যে ৫০ সিসির বাইকের মত যেতে পারে সেটা আমি তখন বুঝতে পারলাম, অথচ এই অটো জোড়ে চলতে পারেনা বলে আমি কখনই ব্যবহার করতাম না। আমার এক হাতের উপর আম্মার মাথা আর আরেকটা হাত অটোর একটা রড ধরা, আমার কাছে তখন মনে হচ্ছিলো এই অটোর রডটা আমার পৃথিবী, আর প্রতি মুহূর্তে সেটা আমার হাত থেকে ফস্কে যাচ্ছে। আমি আমার সব শক্তি দিয়ে আরো আঁকড়ে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। অটোর রড হাতের মুঠোয় খুব সহজে ধরা যায়, এমনকি বাচ্চারাও ধরতে পারে অথচ আমার মত ২৫ বছরের একটা ছেলে এই রডটা ধরে রাখতে পারছেনা! এটা কিভাবে সম্ভব? এটা কি আসলেও হতে পারে। আমার চশমার কাচ ঝাপসা হয়ে গেছে দেখে আমি ভাবলাম স্বপ্ন দেখছি। কাচ মুছতে গিয়েও মুছলাম না, যদি সত্যি হয় অথচ আমার চশমার কাছ মোছা দরকার, কারণ এটা সত্যি না, কিন্তু কিভাবে? আমার পৃথিবীটা আমার হাতের মুঠোয় আর আমি একটু একটু করে ডুবে যাচ্ছি ঝাপসা কাচের দেয়ালের ওপাশে আমার গড়া দেয়ালে। কখন যে হসপিটালে চলে এসেছি বুঝতে পারিনি। ৫/৬ জন মিলে আমাকে অটোর রড থেকে অনেক কষ্টে ছাড়িয়ে নিয়েছে শুনেছিলাম। আমি নাকি রড ধরে ১ঘন্টার বেশি সময় বসে ছিলাম অপলক চোখে।
আমি হুট করেই বড় হয়ে গেলাম। ২৫ বছরের ছেলেটার ভেতরে এখন ৩৫ বছরের একটা মানুষ বাস করে। একটা ছেলে হুট করেই হয়ে গেলাম একটা বাবা, একটা মা, একটা ভাই, একটা বোন, একটা বন্ধু। শুধু সেই ২৫ বছরের ছেলেটা হতে পারলাম না। আমি খেয়াল করলাম আমি বারান্দায় গিয়ে সিগারেট ধরালে এখন আর সামনের নদী দিয়ে ক্লিওপেট্রা ডেট করতে যায়না, তার জায়গায় ফেরিওয়ালা সবজি আর মাছ ফেরি করে নিয়ে যায়।
এখন আর পিঙ্ক ফ্লয়েড, ডেভিড বোওয়ি, হুইটনি হাউস্টন, এলটন জন, এলভিস প্রিসলী, পিটার গ্যাব্রিয়েল, স্টিভ ওয়ান্ডার এবং হার্ব আল্পার্ট বাজেনা কানের হেডফোনে কিংবা মাঝরাতের একান্ত সময়ের আঁকড়ে ধরে রাখতে চাওয়া ঠাণ্ডা পৃথিবীতে।
এখন আর টেবিলে বা ব্যাগে থাকেনা লিও তলস্তয়ের আনা কারেনিনা, গুস্তাভে ফ্লবার্টের মাদাম বোভারি, ভ্লাদিমির নাবোকভের ললিতা, মার্ক টোয়েনের দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব হাকলবেরি ফিন, অন দ্য শর্টনেস অব লাইফ- সেনেকা, যদ্যপি আমার গুরু- আহমদ ছফা, দ্য ড্রিম অব দ্য রেড চেম্বার এর পরিবর্তে এখন থাকে টিউশানের শিট, বাজারের লিস্ট আর বিভিন্ন ধরনের বিলের লিস্ট।
আমি শিখে গেলাম পেট টিপে টিপে মাছ কিনতে শেখা, আমি শিখে গেলাম তরকারিতে লবণ বেশি হলে আলু কেটে দিতে শেখা। ফ্রিজে আইস্ক্রিমের বাক্সে পেয়াজ,রসুন আর আদা বেটে রাখা শিখে গেলাম। শিখে গেলাম সকালের বাসি ভাতে পেয়াজ মরিচ আর ডিম ফেটে দিয়ে ভাত ভাজি করা। এখন আমি উল্টো সিগারেট টানি নির্বিকার।
পুরানো বইয়ের সাথে তোমার দেয়া চিঠি আর ভালোবাসা গুলো কেজি দরে বেঁচে দিয়েছি এবার, শুনেছি সেগুলা নাকি পুরানো বইয়ের দোকানে বিক্রি হয় অথচ আমাদের একসাথে বসে লাবনী বিচে শেষ মাথায় বসে মধ্যরাতের তারা গোনার কথা ছিলো, আমি বরাবরি অংকে কাঁচা, তুমি বলেছিলে আমি শুধু নাম বলব আর গুনবে তুমি। জানো এখন আমি অংকে বেশ ভালো জীবনের অংক মেলানোর চেষ্টা করিনা। তুমি বলেছিলে এসব অংক মেলাতে হয়না, এমনি মিলে যায়। আমাদেরও অংক মেলানোর কথা ছিলো। তুমি বলে ছিলো আমরা কোর্টে গিয়ে বিয়ে করবো, তুমি সব মেনে নিবে বলেছিলে, আমি কিছুই বলতে পারিনি। পালিয়ে এসেছি পেছনের দরজা দিয়ে। আমি শুধু তোমার প্রেমিক হতে চেয়েছিলাম, তোমার বন্ধু হতে চেয়ছিলাম, তোমার স্বামী হতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমি ৩৫ বছরের ছেলে হতে চাইনি। আমি চাইনি আবার হারাতে তোমাকে পুরোনো ছবির ফ্রেমে তাই হেরে চলে এসেছি আমার কাছে।
আমি কখনই এভাবে হেরে যেতে চাইনি অথচ হুট করেই আমি ২৫ বছরের অংকের গড়মিলে ৩৫ এ এসে আটকে গেলাম।
অবশেষে বুঝলাম জীবনের অংক সবার মিলতে হয়না, কিছু কিছু অংক তবে থাকুক না এভাবেই, গড়মিলের অনন্ত ছন্দ্যমিলে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৯ সকাল ১০:২০
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×