নুরু মিয়া ও লোকাল বাস -
পকেটমার নুরু মিয়ার অনেক মন খারাপ কারণ তার মেয়েটা কয়েকদিন থেকে কলেজে যেতে পারছিলোনা মেয়েলি পেটের ব্যথার জন্য!
তাই ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।
আজকে নুরু মিয়ার অনেক কাজ, ফার্মগেট থেকে মানুষে ঠাসা একটা বাসে উঠেই মনটা ভালো হয়ে গেলো, যাক মেয়ের জন্য তাহলে কিছু ভালো খাবার নেয়া যাবে, সরকারি হাসপাতালের বিস্বাদ খাবার মেয়েটা একেবারেই খেতে পারেনা কিন্তু হাতে টাকা না থাকায় নুরু মিয়া মেয়ের সামনে যেতেই পারেনি।
রাবিদ ও তার অব্যক্ত ভালোবাসা -
রাবিদ একটা পাবলিক ভার্সিটিটিতে পড়ার সুবাদে একবার ইউনিসেফের একটা প্রজেক্টের কাজে বস্তিতে গিয়েছিলো সার্ভের কাজে সেখানে একটা মেয়েকে দেখে সাথে সাথে ভালোবেসে ফেলে।
অনেক মুভিতে সে এতদিন দেখে এসেছিলো প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলা।
কিন্তু রাবিদ কখনো মেয়েটাকে বলেনি কিন্তু প্রজেক্টের কাজে যোগাযোগ হত রেগুলার।
কয়েকদিন আগে রাবিদ জানতে পারে সেই মেয়েটা অসুস্থ এবং মেডিকেলে ভর্তি।
সে কিছু টাকা জমিয়েছিলো বই মেলা থেকে মেয়েটার পছন্দের কিছু বই কিনে দিবে বলে।
মেয়েটা গল্পের বই অনেক পছন্দ করত।
সে ফার্মগেটে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরেও বাস না পেয়ে ভিড় ঠেলে কোনরকমে ডাবল ডেকার বাসের পেছনের দরজায় উঠে তারপর অনেক কস্টে একটু জায়গা পেয়ে দোতালায় উঠে।
শাহবাগ মোড়ে আসতে আসতে ৬টা বেজে যায়।
হুডির পকেট থেকে একটা পাচ টাকার কয়েন হেল্পারকে দিয়ে রাবিদ নেমে যায় খুশি মনে বই মেলায় গিয়ে প্রিয় মানুষের জন্য প্রথম বই কিনবে! বইয়ের পাতায় লেগে থাকবে তার অব্যক্ত ভালোবাসার গল্পগুলো, সে হয়ত সেটা কখনই জানবেনা কিংবা বুঝতে পারবেনা।
নুরু মিয়া ও রাবিদ -
নুরু মিয়ার মন অনেক ভাল। একটা ডার্বি জ্বালিয়ে ভাবছিলো কি কি কেনা যায়, আজকে অনেকগুলা টাকা পেয়েছে, আজকে সব খরচ করবে। তার মেয়েটা এতসব দেখে কি খুশিটা না হবে এটা ভাবতেই নুরু মিয়ার গাল ভিজে যায় ভেজা উষ্ণতায়।
ফুল চিঠি এবং বইয়ের লিস্ট -
রাবিদ শুনেছিলো অস্থুথ কাউকে দেখতে গেলে নাকি ফুল নিয়ে যায় যদিও সে অস্থুথ থাকার সময়ে কেউ তার জন্য ফুল নিয়ে আসেনাই তবে বন্ধুরা সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে এসোছিলো।
ফুলের দোকানের সামনে গিয়ে তার প্রিয় ফুল বেলি খুঁজতে খুঁজতে একটা কয়েকটা পেয়ে গেল। যদিও এখন বেলির সিজন না তবুও ভাগ্যক্রমে পেয়ে গিয়ে রাবিদ অনেক খুশি।
ফুলের দাম দেয়ার জন্য পকেটে হাত দিয়ে রাবিদ থমকে যায়!
সবগুলো পকেট হাতড়ে সামনের পকেট থেকে বইয়ের লিস্ট আর একটা চিঠি ছাড়া কিছুই পেলনা।
ফুলের দোকানদার বুঝে গিয়েছে কি হয়েছে তাই সে বলল মামা আপনি পরে টাকা দিয়েন সমস্যা নাই।
রাবিদ ফুলগুলো ফেরত দিয়ে চিঠিটা আর বইয়ের লিস্ট হাতে নিয়ে হাটে, তাকে অনেক হাটতে হবে, থামা যাবেনা, একেবারেই থামা যাবেনা।
ভালোবেসে কখন থেমে যেতে নেই, ভালোবেসে হেটে যেতে হয় ভালোবাসার কাছ থেকে অনেক দূরে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:০৮