নিহান ঢাকার একটা নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে এবং ঢাকায় কেউ না থাকায় এবং কিছু সংগত কারনে নিহান হলে থাকেনা তাই আলাদা বাসা নিয়ে থাকে। নিহানের মায়ের খুব ইচ্ছা ছিলো ছেলে কিভাবে থাকে তা দেখতে আসবে এবং ছেলে নাকি অনেক বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে সেটা দেখবে ছেলের সাথে রিক্সায় ঘুরে, টিএসির চা নাকি অনেক মজা তাই নিহানকে বলেছিলো- আমি কিন্তু টিএসিতে তোর সাথে চা খাবো, তোর বান্ধবীরা আবার কিছু মনে করবেনা তো? বলে মুচকি হেসেছিলো। নিহান বলেছিলো কি যে বল না মা- আমার বন্ধুরা তো প্রায় তোমার কথা জিজ্ঞেস করে।
নেক্সট মাসেই সেমিস্টার ফাইনাল শুরু হবে তাই তার বাবা মা নিহানকে নিয়ে ট্রেনে উঠে ঢাকায় যাবার জন্য।
নিহান তার মায়ের কাঁধে মাথা রেখে ভাবছিলো টিএসসিতে কি কি চা খাওয়ানো যায় মাকে, শ্যাডোর লুচি আর মধুর ক্যান্টিনের মিষ্টি, এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পরেছিলো। যখন ঘুম ভাংলো তখন নিহান খেয়াল করল তার বুকপকেট ভিজে গ্যাছে ঘামে আর সাথে ভিজে গ্যাছে বুক পকেটে রাখা ডানহিল।
মধ্যরাতে হঠাৎ করে নিহানের আম্মার হার্ট এটাক হয় কিন্তু সবাই ঘুমে থাকার কারনে বেশ কিছুক্ষণ পরে বুঝতে পারে যে নিহানের আম্মার কিছু একটা হয়েছে, কিন্তু বুঝে উঠার আগেই স্বপন মামা চা দেয়ার আগেই নিহানের আম্মা ঘরে ফিরে গ্যাছেন। নিহান স্বপন মামার দিকে শুন্য চোখে তাকাতেই মান্নান কাচুমাচু করে বলল ভাইয়া আপনারে বলছিলাম না খাল্লামারে স্পেশাল চা বানায় খাওয়ামু তাই এট্টু দেরি হইছে! অথচ নিহানের বলার কথা- মান্নানরে আম্মা তো ফেরার আগেই ফিরতি ট্রেনে ফিরে গ্যাছেন ঘরে!যদিও নিহানের বাবা ফিরতি ট্রেনের টিকেট কয়েকদিন পরে কাটবে বলেছিল।
কিন্তু নিহান কিছুই বলতে পারেনা, ভেজা ডানহিল জ্বালাতে চেষ্টা করে আগুন ছাড়া ডানহিল মুখে দিয়ে তাকিয়ে থাকে সাদা এলবাট্রসের দিকে।
এই রাতে জ্যোৎস্না আর কুয়াশা মাখামাখি করে কেমন জানি একটা অদ্ভুত বিষণ্ণ চাদরে ট্রেনটাকে মুড়ে দিয়েছে।
ট্রেনের আওয়াজটাকে মনে হচ্ছে গুমরে গুমরে কান্নার আওয়াজ, খুব ভাল করে খেয়াল করলে শোনা যাবে আন্তনগর ৭০৬ নাম্বার একতা একপ্রেসের বগি নাম্বার “খ” থেকে সমুদ্রের ঢেউয়ের মত করে ভেসে আসছে ট্রেনের দমকে দমকে বগিদের কান্নার সু্র অথচ কে যেন বলেছিলো ট্রেনের শব্দ নাকি ঝিক ঝিক হয়! সে সম্ভবত কখনো বিষণ্ণতার সাগর ট্রেনে করে পাড়ি দেয়নি তাই ভুল তথ্য দিয়েছিলো।
নিহান তখন দাঁড়িয়ে আছে মায়ের পাশে, ভাবছে মায়ের কাঁধে মাথা রেখে আবার ঘুমাবে নাকি? কিন্তু আম্মা তো শুয়ে আছে কিভাবে কাঁধে মাথা রাখবে? আর চারটা মৃত বলগা হরিণ আর ট্রেনের জানালায় একটা সাদা এলবাট্রস বসে আছে শুন্য চোখে।
এসব ভাবতে ভাবতে নিহান ধীরে ধীরে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় বুক পকেটে ভেজা ডানহিল নিয়ে, ওপাশে তখনো চাদরে মুড়িয়ে দিয়ে আলতো করে ছুয়ে দিচ্ছে বিষণ্ণ চাঁদ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৪