somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গালগল্পঃ প্যারাডাইস লষ্ট

০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ৮:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গালগল্পঃ প্যারাডাইস লষ্ট
_নীলকান্ত

আদম এবং হাওয়াকে যে কারনে প্যারাডাইস থেকে গেট আউট করা হলো তাতে দোষটা কার? এক বাক্যে সবাই বলবে,কেন? হাওয়ার দোষ ছিল। হাওয়ার প্যারাতেই তো আদমের প্যারাডাইস লষ্ট হয়েছে। অতএব উইদাউট এনি ডাউট অল দ্য ফল্টস গোজ টু হাওয়া।
:P
তবে হ্যা
মেয়েরা সব সময় নিজেদের স্বার্থটাই বড় করে দেখে,এরকম কথা লোকে বলে।কিন্তু আসলেই কি তাই? লোকে বলে "স্বার্থের জন্য প্রয়োজনে সব কিছু করতে পারে। এমনকি বয় ফ্রেন্ডকেও ছেড়ে দিতে পারে যখন তখন।তবে কি হাওয়াও তার বয়ফ্রেন্ড,আই মিন আদমকে ছেড়ে ছুড়ে গিয়েছিলো নাকি! :P
না ভাই,এটা তো বলতে পারব না।তবে নিজের রাগ যিদ কে সফল করার জন্য হাওয়ারা সব করতে পারে।"

যাই হোক এর জন্য নারীকে দোষ দিচ্ছিনা। বিশেষ করে শুধুমাত্র এ যুগের নারীদের তো অবশ্যই না।কারন, নারী সন্দেহবাতিক, কৌতুহলপরায়ন,অস্থিরচিত্তের একদিনে হয়নি। তাদের এসব গুণের পেছনে রয়েছে বহু পুরোনো ইতিহাস ও ঐতিহ্য। ব্যাপারটা হলো,মানুষের সৃষ্টির আদিকাল থেকেই সে নিজ জায়গায় স্বার্থপর। কিভাবে?
তার জন্য আমাদের সৃষ্টির আদিতে যেতে হবে।স্রষ্টা যখন মানব জাতিকে সৃষ্টি করল তখন প্রথম সৃষ্টি করল আদমকে। যে আদম স্বর্গের আরাম আয়েশের মধ্যেও একাকীত্ব ফিল করা শুরু করে।তখন তার মধ্যে কারো সঙ্গ পাবার ইচ্ছে জাগে। মনে মনে ভাবেন,"ইস,এই স্বর্গে যদি কেউ থাকত যার সাথে কথা বলে সময় কাটানো যেত তবে কতই না ভাল হত! "
স্রষ্টা আদমের মনকষ্ট বুঝতে পারলেন।আর তাই আদমকে সঙ্গ দেয়ার জন্য আদমের বাম পাজরের হাড় থেকে হাওয়াকে সৃষ্টি করলেন।
আদম তার মত একজন মানুষ কে পেয়ে তো মহা খুশি।স্বর্গের বুকে দুজন ঘুরে ফেরে,খায় দায়, গল্প করে বেশ ভালই কেটে যাচ্ছিল সময়। এমন সময় আবির্ভাব হলো শয়তানের। শয়তান আদমকে নানাভাবে ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে পথচ্যুত করতে তৎপর হলো।কিন্তু স্রষ্টার প্রতি চির বাধ্য আদম কোনভাবেইই শয়তানের প্ররোচনায় ভুললো না। আদমকে প্ররোচিত করতে ব্যর্থ হয়ে ইবলিশ শয়তান নতুন ফন্দী আটলো।
সে অগোচরে হাওয়ার সাথে মিল দিয়ে হাওয়াকে ফুসলাতে চেষ্টা করল।এবং দেখল "আরে বাহ! আদম কে ফুসলানোর চেয়ে হাওয়াকে ফুসলানো তো বেশ সহজ! "

সুতরাং সে সব সময় হাওয়াকে নানাভাবে প্ররোচিত করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকলো। হাওয়াকে বলল,"দেখেছ হাওয়া,ওই যে গাছটা দেখছো, ওই গাছটার ফল স্বর্গের সবচাইতে মিষ্টি এবং সুন্দর ফল। আর তা না হলে আল্লাহ তোমাদের ওই গাছের কাছে যেতে নিষেধ করবে কেন? নিশ্চয়ই আল্লাহ চায়না তোমরা ওই ফল খাও!অথবা নিশ্চয়ই আরো কোন রহস্য লুকিয়ে আছে ওখানে! "
এসব কথা শুনে হাওয়ার মনে কৌতুহল কিংবা সন্দেহ জন্মালো।যে কৌতুহল নারীর চিরন্তন বৈশিষ্ট্য। আর সেই কৌতুহলের বশবর্তী হয়ে সে প্রিয়তম আদমকে বলল,"দেখ আদম,আমি ওই গাছটার ফল চাই। অতএব আমাকে ফলটা পেরে দিতে হবে।"
আদম হাওয়াকে বহু চেষ্টা করল বুঝাতে।কিন্তু কিছুতেই হাওয়া বুঝতে রাজি হলো না। সে তার যিদে অটল। বরং আদমের সাথে অভিমান করে কথা বলাই বন্ধ করে দিলো।
এদিকে আদম পড়ে গেলো মহা বিপদে।একে তো আল্লাহ তাকে ওই গাছটার কাছে যেতে নিষেধ করেছে অন্যদিকে হাওয়া ওই গাছের ফল নেবেই নেবে।নচেৎ কথাটি নট।
আদম ঠিক কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। হাওয়াকে বুঝিয়েও লাভ হয়নি।বরং সে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছে।অন্যদিকে স্বর্গের আরাম আয়েশ হাওয়ার সঙ্গ ছাড়া যেন পানসে হয়ে গেছে। কিছুই আর ভাল লাগছে না তার। কি করবে আর কি করবে না তাই ভেবে সে আকুল। এদিকে হাওয়ার এক কথা,"আমার ওই ফল চাইই চাই।"

আদম হাওয়ার মধ্যে যখন এরকম মনমালিন্য চলছে তখন দূরে থেকে শয়তান সব দেখে আর মিটিমিটি হাসে। আর মাঝে মাঝে হাওয়ার কাছে গিয়ে কানপড়া দেয়,"দেখেছ হাওয়া,আদম তোমাকে একদম ভালবাসে না। ভালবাসলে এতক্ষণে ওই ফলটা পেড়ে এনে দিত।"
শয়তানের কানপড়ায় হাওয়ার মনে আরো যিদ হয়, আরো রেগে যায় আদমের উপর।তারপর গাল ফুলিয়ে দূরে গিয়ে বসে থাকে।

আদম আড় চোখে হাওয়ার বিষাদময় চেহারার দিকে তাকায়।হাওয়ার ঠোট বাঁকিয়ে, গাল ফুলিয়ে বসে থাকাটা যেন আদমের হৃদয়টাকে ফালাফালা করে দেয়। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়,"যা হয় হবে।কিন্তু আমি আর হাওয়ার মন খারাপ দেখতে চাইনা।"
তাই সে ধীর পায়ে হাওয়ার কাছাকাছি এগিয়ে আসে।তারপর হাওয়ার কাঁধে হাত রেখে মৃদু চাপ দিয়ে বলে,"প্রিয়তমা, তুমি এভাবে মন খারাপ করে বসে আছো কেন? তোমার মন খারাপ থাকলে আমার যে ভাল লাগেনা প্রিয়তমা। "
আদমের কথায় হাওয়া ঝাকি দিয়ে উঠে। রেগে মেগে বলে,"হ্যা হ্যা জানি।কতটা ভালবাস তুমি আমাকে। আর আমার জন্য তোমার কতটা মন খারাপ হয়! হুম!"
তারপর একটু থেমে আবার বলতে থাকে,"যদি আমাকে ভালইবাসতে আর আমার মন খারাপ দেখে তোমার খারাপ লাগত তবে এতক্ষনে আমাকে ফলটা পেড়ে এনে দিতে!"

আদম হাওয়ার কথায় কষ্ট পায়।সে হাওয়ার হাত ধরে বলে,"চল প্রিয়তমা, তোমাকে ওই ফলটা পেড়ে এনে দেই।"
আদমের মুখে এ কথা শুনে হাওয়ার চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। সেই সাথে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ইবলিশেরও। হাওয়া আদমের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,"সত্যিই বলছ তো? "
আদম স্রষ্টার নিষেধ অমান্য করার শাস্তির ভয়ে ভীত থাকলেও হাওয়ার সন্তুষ্টির জন্য হাসি হাসি মুখ করে বলে উঠে,"হ্যা প্রিয়তমা, সত্যিই।"
হাওয়ার আদন্দের বাঁধ ভেঙে যায়। অস্থির হয়ে উঠে সে। আদমকে বলে,"চল তবে এক্ষুনি যাই।"বলেই সে আদমকে টানাটানি করা শুরু করে। নারীর অস্থিরতা সেখান থেকেই।তারপর কোটি কোটি বছর কেটে গেছে কিন্তু নারীর মনের "কৌতুহল",সন্দেহ আর অস্থিরতা কাটেনি।
যাই হোক, আদম এবং হাওয়া নিষিদ্ধ গাছটার দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলো।আর পেছন পেছন শয়তানও।শয়তান নিজের বুদ্ধির প্রশংসা করে বলল,"আরে আমি হলাম ইবলিশ শয়তান।আমি চাইলে কিই না করতে পারি! পুরুষকে প্ররোচিত করতে না পারি কিন্তু নারীর দ্বারা পুরুষকে তো প্রভাবিত করতেই পারি! হা হা হা। আমার কাজে নারীর ভূমিকা অপরিসীম। হা হা হা।"

শয়তান যখন এসব ভাবছিল ততক্ষণে আদম-হাওয়া নিষিদ্ধ গাছের নীচে এসে দাঁড়িয়েছে। হাওয়া তো খুশিতে বাকবাক। সে বারবার আদমকে ফলটা পারার জন্য আস্থির করে তুলতে শুরু করলো। এক পর্যায়ে আদম তার প্রিয়তমা হাওয়ার কথা শুনে ফলটা ছিঁড়েই ফেলল।
সঙ্গে সঙ্গে স্রষ্টা ক্ষুব্ধ হলেন।আদেশ অমান্যের অপরাধে দুজনকেই স্বর্গ থেকে বের করে দিলেন। আদম ও হাওয়া তাদের ভুল বুঝতে পেরে স্রষ্টার কাছে তাদের ভুলের জন্য বারবার ক্ষমা চাইতে লাগলো। বিশেষ করে হাওয়া তার কৌতুহল,সন্দেহ আর অস্থিরতার জন্য লজ্জিত ও দুঃখিত হলো।কিন্তু স্রষ্টা তার আদেশে অটল। তিনি আর তাদের স্বর্গে ফিরিয়ে নিলেন না।বরং মর্ত্যলোকে দুজনে দু প্রান্তে নির্বাসিত করলেন।

এসব দেখে শয়তান তার প্রথম সফলতার আনন্দে হেসে কুটিকুটি। আনন্দের অতিশয্যে গেয়ে উঠলেন, "আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!! "

(Don't take it religiously .)

#নীলকান্ত
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:৩৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অচেনা মানুষ আপনাদের দীপাবলীর শুভেচ্ছা

লিখেছেন আজব লিংকন, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২১



আমারই বুকে না হয় শিবেরই বুকে
নাচো গো... ও নাচো গো...
পবন দা'র গলায় ভবা পাগলার গানটা কারা জানি ফুল ভলিউমে বাজিয়ে গেল। আহ.. সে সুরের টানে বুকের মাঝে সুখের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন পড়বেন, ফিকাহ জানবেন ও মানবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০০



সূরাঃ ৯৬ আলাক, ১ নং থেকে ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। পাঠ কর, তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
২।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে
৩। পাঠ কর, তোমার রব মহামহিমাম্বিত
৪। যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×